‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে’
১১ জানুয়ারি ২০১৭বুধবার ঢাকায় মিয়ানমারের বিশেষ দূত ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী চ টিন-এর সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক৷ তিনি বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং এই সমস্যা মিয়ানমারকে সমাধান করতে হবে৷ তবে সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে সহযোগিতা করবে৷'' বুধবার বিকেলে শুরু হয়ে সন্ধ্যায় শেষ হওয়া বৈঠক সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে৷
বুধবার রাতে মিয়ানমারে বিশেষ দূতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে৷ এরপর রাতে অথবা বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং হতে পারে৷ মিয়ানমারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী চ টিন মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন৷ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের চাপের কারণেই মিয়ানমারের বিশেষ দূত হিসেবে তিনি ঢাকায় এলেন৷
বৈঠক সূত্র জানায়, ‘‘বাংলাদেশ মিয়ানমারকে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে যে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক৷ তাদের ফেরত নিতে হবে৷ এই সমস্যা যেহেতু মিয়ানমারের, তাই সমাধানও তাদের করতে হবে৷ বাংলাদেশ এই সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের পাশে থেকে সহযোগিতা করবে৷ এবং বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিকভাবেই এই সমস্যার সমাধান চায়৷''
বাংলাদেশ জানিয়েছে, ‘‘১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেরশে আসা রোহিঙ্গাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷ তখন দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে মিয়ানমার স্বীকার করে নিয়েছিল রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের আইনগত নাগরিক৷''
বাংলাদেশ আরো জানায়, ‘‘গত তিন দশকে কয়েক লাখ মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে এবং তিন থেকে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করে আসছে৷ এবং গত অক্টোববরে নতুন করে প্রায় ৭০,০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে৷''
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘‘আগামী ১৯ জানুয়ারি শুধুমাত্র রোহিঙ্গা বিষয়ে মালয়েশিয়াতে ইসলামি দেশগুলির সংস্থা ওআইসি-র পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আছে এবং সেখানে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে একটি শক্ত সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেবার বিষয়ে আলোচনা চলছে৷ বাংলাদেশ সেখানে তার একই অবস্থান তুলে ধরবে৷''
এদিকে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সমন্বয়কারী সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘গত এক সপ্তাহে নতুন করে ২২ হাজার মানুষ রাখাইন রাজ্য থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে৷ ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হিসেব অনুযায়ী, গত ৯ অক্টোবরের পর থেকে হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে৷ তারা কক্সবাজারের রেজিস্টার্ড ক্যাম্প, অস্থায়ী বসতি এবং স্থানীয় লোকজনের আশ্রয়ে বাস করছেন৷''
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ডিসেম্বরে অবিলম্বে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের জন্য একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করেছে৷ মিয়ামারের প্রতিবেশী এবং আসিয়ান-এর সদস্য মালয়েশিয়া প্রকাশ্যে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা নির্যাতনের জন্য দায়ী করেছে৷
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিচার্স ইউনিট (রামরু)-র সমন্বয়কারী অধ্যাপক সি আর আবরার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যে শক্ত অবস্থান এবার নিয়েছে, তা আরো অনেক আগেই নেয়া উচিত ছিল৷ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই৷ তাই সম্মানজনকভাবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়াই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান৷ মিয়ানমারকে তার নাগরিকদের স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানজনকভাবে ফেরত নিতে হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ৷ বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণ করছে৷ তাই আমার ধারণা, বাংলাদেশ যে অবস্থান নিয়েছে তার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সমর্থন দেবে৷ তারাও চাইবে, রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের দেশে যাতে সম্মানজনকভাবে ফিরে যেতে পারে৷''