‘শীঘ্রই স্থলসীমা ও তিস্তা-চুক্তি বাস্তবায়িত হতে পারে’
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২গত বছর প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর ঢাকা সফরে তিস্তা নদীর জল বণ্টন এবং ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল হস্তান্তর চুক্তি সই হবার কথা ছিল৷ সে বিষয়ে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণাও করেছিলেন৷ কিন্তু চুক্তির খসড়া দেখে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসায়, তা সই হয়নি৷ তিনি আপত্তি তোলেন, এই চুক্তি হলে পশ্চিমবঙ্গের চাষীদের ক্ষতি হবে৷ প্রতিবাদে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীও হলেন না৷
এই আচরণে বাংলাদেশ সরকার যারপর নাই অখুশি৷ এই চুক্তি ভারত-বাংলাদেশের সুসম্পর্কের এক মাইল ফলক হতে পারতো, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করতে পারতো আগামী নির্বাচনে৷ তবে হাল ছাড়েননি দু'দেশের সরকার৷
তিস্তা চুক্তি এবং স্থলসীমা চুক্তি সম্পাদনের প্রধান কাঁটা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর, সেইসব চুক্তি কার্যকর করার নতুন উদ্যোগ নিতে কয়েকদিন আগে দিল্লি ঘুরে গেলেন বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম৷ তিনি সাক্ষাৎ করেন, ভারতের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বের সঙ্গে৷ বলেন, শীঘ্রই স্থলসীমা ও তিস্তা-চুক্তি বাস্তবায়িত হবে৷
তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করায় চুক্তির জট কী আদৌ খুলবে, নাকি জট আরো জটিল হবে? বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় মনে করেন, সংবিধানের ২৫৩ নং ধারা অনুযায়ী কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের আপত্তি মানতে বাধ্য নন কেন্দ্রীয় সরকার৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বললেন, নদীর জল বণ্টনের মতো আন্তর্জাতিক চুক্তির বিষয়ে কোনো রাজ্য সরকারের বক্তব্য যদি চুক্তির পরিপন্থি হয়, তাহলে ভারত সরকার রাজ্যের আপত্তি মানতে বাধ্য নন৷
জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার দরুণ এতদিন প্রধানমন্ত্রী এই চুক্তি নিয়ে এগোতে পারেননি৷ এখন তো সেই বাধ্যাবাধকতা নেই৷ কাজেই নিশ্চিতভাবেই প্রধানমন্ত্রী সংবিধান মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন৷ দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের স্বার্থে কিছুটা বোঝাপড়ার মধ্যে গিয়ে যতটা জল বাংলাদেশ চাইছে, পশ্চিমবঙ্গের চাহিদার সঙ্গে একটা সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশকে সেই জল দেয়া যেতেই পারে৷ সর্বোপরি, আগামী বছর বাংলাদেশে নির্বাচন৷ তাই এই চুক্তি যে শেখ হাসিনার হাত শক্ত করতে সহায়ক হবে, তা বলাই বাহুল্য৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ