ভারতে স্যানিটেশন সমস্যা মিটবে না
১০ অক্টোবর ২০১৪উদ্দেশ্য মহৎ – এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ ভারতের মতো বিশাল ও জটিল দেশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করা ও তা বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব বলে ধরে নেওয়া হতো৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী এমন অসাধ্য সাধন করতে চেয়েছিলেন৷ দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ‘ক্লিন ইন্ডিয়া ক্যাম্পেন'-এ শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ গত ২রা অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবসে শুরু হয়েছে এই অভিযান৷
শুক্রবার ল্যান্সেট মেডিকাল জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে ভারতের গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থার এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে৷ শুধু গ্রামাঞ্চলে শৌচাগার বসিয়ে এই পরিস্থিতির যথেষ্ট পরিবর্তন সম্ভব হবে না বলে তাতে মন্তব্য করা হয়েছে৷ ১৯৮৬ সাল থেকে বিভিন্ন স্যানিটেশন কর্মসূচির জন্য প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ব্যয় করেও গোটা বিশ্বে ভারতের স্থান সবচেয়ে নীচে৷ নরেন্দ্র মোদীর সরকার এবার তার প্রায় ১০ গুণ ব্যয় করতে বদ্ধপরিকর৷ শুক্রবার প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী শৌচাগার তৈরির পাশাপাশি অন্যান্য পদক্ষেপের প্রতিও মনোযোগ দিতে হবে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে গণ সচেতনতা সৃষ্টি করা৷ ভারতের মানুষের একটা বড় অংশ এখনো স্যানিটেশন সম্পর্কে তাদের প্রাচীন ধ্যান-ধারণা আঁকড়ে ধরে রয়েছে৷ ফলে বাড়ির বাইরে গিয়ে প্রাতঃকৃত্য সারা বা প্রস্রাব করার মতো অভ্যাস বদলানো অত্যন্ত জরুরি৷
ল্যান্সেট মেডিকাল জার্নালে এই রিপোর্ট লিখতে মার্কিন ও ভারতীয় গবেষকরা ২০১১ সালে উড়িষ্যা রাজ্যের ১০০টি গ্রামে এক সরকারি স্যানিটেশন অভিযানের প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন৷ তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এই উদ্যোগ সত্ত্বেও শিশুদের ডায়েরিয়া বা আন্ত্রিক রোগ কমেনি৷ কৃমি থেকে সংক্রমণ থেকে শুরু করে শিশুদের অপুষ্টির ক্ষেত্রেও কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ বিশ্বব্যাংকের সূত্র অনুযায়ী এমন সব কারণে বছরে ৫,৪০০ কোটি ডলার অঙ্কের উৎপাদনশীলতা নষ্ট হয়৷
গবেষকরা কিন্তু এই কর্মসূচির আওতায় নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে সন্তুষ্ট৷ অর্থাৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী শৌচাগার তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু সব পরিবার এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি৷ দলের প্রধান অ্যাটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টমাস ক্লাসেন অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, সমস্যাটি অত্যন্ত জটিল৷ গোটা চিত্রটা বুঝে তবেই তার সমাধান খুঁজতে হবে৷ যেমন হাইজিন সংক্রান্ত ভুল মনোভাবের পাশাপাশি সংক্রমিত জলের মতো বিষয়ও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে৷
বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী আজও প্রায় ৬৪ কোটি ভারতীয় খোলা আকাশের নীচে প্রাতঃকৃত্য সারেন৷ এমনকি নিজের বাড়িতে অথবা কাছাকাছি টয়লেট থাকা সত্ত্বেও অনেকে এই অভ্যাস ছাড়তে প্রস্তুত নন৷ অন্য একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বিহার, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশ রাজ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পরিবারের বাড়িতে টয়লেট থাকা সত্ত্বেও কমপক্ষে একজন সদস্য মাঠেই নিজের কাজ সারেন৷ অনেকের কাছেই এই অভ্যাস অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর৷ কিন্তু এর ফলে ডায়েরিয়ার মতো রোগে যে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে, সে বিষয়ে সচেতনতা নেই বললেই চলে৷
নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক উইলিয়াম ইস্টারলি এ প্রসঙ্গে অ্যামেরিকা সহ অন্য অনেক দেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন৷ তাঁর মতে, শুধু টয়লেটের মতো একটি বিষয়ের দিকে নজর দিলে চলবে না৷ সঙ্গে চাই স্থানীয় গণতান্ত্রিক প্রশাসনের স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্যোগ৷ তাঁদেরও জবাবদিহিতা থাকা চাই৷ মোটকথা উপর থেকে চাপিয়ে দিলে হবে না, এমন উদ্যোগকে সফল করতে হলে তা তৃণমূল স্তর থেকে উঠে আসতে হবে৷
এসবি/ডিজি (এপি, ডিপিএ)