শুধু পথে নয়, যন্ত্রচালিত বাহনেও সাইকেল
২৪ আগস্ট ২০১১হয়তো সে কারণেই সেই ছোট্ট শিশু থেকে ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষ সবাই সাইকেল চালাতে খুবই ভালোবাসেন৷ প্রতিটি পরিবারেই প্রত্যেক সদস্যের জন্য পৃথক পৃথক গাড়ি থাকা সত্ত্বেও দেখা যায় বাড়ির বড় কর্তা থেকে শুরু করে সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্যটির জন্যও একটি করে সাইকেল বরাদ্দ আছে৷ যে শিশুটি এখনও প্যাডেল করে সাইকেল চালাতে সক্ষম নয় কিংবা সাইকেলের গতি ও ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সক্ষম নয় তার জন্য রয়েছে প্যাডেল বিহীন সাইকেল৷ ব্যাপারটা আরো একটু খুলে বললে বলতে হয়, সাইকেলের সিট, হ্যান্ডেল, দুই চাকা সবই আছে৷ কিন্তু শুধু প্যাডেল নেই এই ছোট্ট সাইকেল আরোহীর জন্য৷ তাকে সিটে বসে দুই পা দিয়ে পথ ঠেলে এগুতে হয় সাইকেল নিয়ে৷
তবে এই যে সাইকেলকে হয়তো বাংলাদেশে দারিদ্র্যের প্রতীক কিংবা অভাবী মানুষের কষ্টের চিহ্ন বলে বিবেচনা করা হয়, এই ধনী দেশে সেই সাইকেলই হয়ে গেছে এক আভিজাত্য, সৌখিনতা কিংবা পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্য সচেতনতার বাহন৷ আবার একইসাথে অর্থ সাশ্রয়ের মাধ্যমও বটে৷ সেই শিশু, কিশোর, আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা সবার কাছেই সাইকেল একটি ইতিবাচক ব্যাপার৷ কখনই কেউ সাইকেল চালনাকে লজ্জার কোন ব্যাপার বলে ভাবেন না৷ এমনকি সপ্তাহান্তে দেখা যাবে অসংখ্য বিএমডাব্লিউ কিংবা ফোর্ডের মতো দামি কারের ছাদে কিংবা পেছনে তিন-চার খানা সাইকেল নিয়ে ছুটেছে বিলাসী মানুষ৷ ব্যাপারটা দেখে প্রথমে বেশ হকচকিয়ে গেলেও এখন হিসাবটা বেশ পরিষ্কার হলো যখন জানলাম যে, আসলে এসব গাড়িওয়ালারা সাইকেল বেঁধে নিয়ে এমন কোথাও যাচ্ছেন যেখানে গিয়ে তাঁরা গাড়ি রেখে এসব সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াবেন৷
যে দেশে সাইকেলের এতো চাহিদা এবং ব্যবহার, সেখানে কি সাইকেল শুধু পথেই চলে? না, মোটেও তা নয়৷ সাইকেল যেমন কারে ওঠে, ঠিক তেমনি আবার ট্রেন, বাস কিংবা লঞ্চেও অনায়াসে সাইকেল নিয়ে ওঠার সুব্যবস্থা রয়েছে৷ আবার কিছু সৌখিন সাইকেল মালিক এমন সাইকেল ব্যবহার করেন যেটিকে নিয়ে এসব বড়সড় বাহনে চড়ার সময় এর হাতল, চাকা এবং সিটের মতো অংশগুলোকে দুমড়ে-মুচড়ে একেবারে ছোট্ট বানিয়ে ফেলেন৷ বড় গাড়ি থেকে নেমে সেগুলোকে আস্ত সাইকেলের রূপ দিয়ে তার উপর উঠে বসেন৷ আবার এমন কিছু সাইকেল রয়েছে যেগুলো অনেকটা শুয়ে চালানো যায়৷ দেখলে মনে হবে চালক যেন পেছনে হেলান দিয়ে শুয়ে শুয়ে সাইকেল চালাচ্ছেন৷ চালকের পা দু'টো একেবারে সামনের দিকে উঁচুতে থাকা প্যাডেলে৷ ফলে তাঁর হাতল কোথায় তা খুঁজে পেতে একটু বিশেষ মনোযোগেরও প্রয়োজন হয়৷
আরেক ধরনের সাইকেলের কথা না বললেই নয়৷ সেটি হলো দুই চালকের জন্য দুই সিট এবং দুই সেট প্যাডেল বিশিষ্ট সাইকেল৷ বন শহরে এমন দৃশ্য খুব বিরল নয় যে, সামনের সিটে হয়তো ছেলে বন্ধুটি বসে হ্যান্ডেল ধরে আছে এবং প্যাডেল করছে৷ আবার পেছনের সিটেই মেয়ে বন্ধুটি বসে তিনিও প্যাডেল করছেন৷ ফলে মাত্র একজনকেই কষ্ট করে অন্যজনকে বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে না৷ বরং দু'জনই একসাথে একটি সাইকেল চালাচ্ছেন৷ দু'জনই সমানভাবে ভাগ করে নিচ্ছেন সাইকেল চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় শ্রম কিংবা কষ্টের অংশ৷ সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে যেমন সমানভাবে দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার ঘটনা দেখা যায়, জার্মান সমাজে তেমনি সংসারেও দেখা যায় নারী-পুরুষ উভয়কেই সংসারের ভার এবং দায়িত্ব সমানভাবে বহন করতে৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক