শুধু পিঠাপুলি খাওয়ার ইচ্ছে নেই ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের
২৭ জানুয়ারি ২০১৯প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে নির্বাচন-উত্তর শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন৷ আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে তিনটায় গণভবনে চা-চক্রে আমন্ত্রন জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের৷ তাদেরকে আমন্ত্রণপত্রও পাঠনো হয়েছে৷ ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও বাম গণতান্ত্রিক জোটের আটটি দলের ১৬ জন নেতা আমন্ত্রণ পেয়েছেন৷ তাদেরকেও ২ ফেব্রুয়ারি সাড়ে তিনটায় চা চক্র ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷
তবে প্রধানমন্ত্রীর চা চক্রে পিঠাপুলি খাওয়ার ইচ্ছে নেই ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের৷ ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমন্ত্রণ পেয়েছি৷ কিন্তু এতে যাওয়ার সুযোগ নেই৷ এখন পিঠাপুলি খাওয়ার মানসিকতায় আমরা নেই৷''
সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ নিয়ে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলাম৷ ওই নির্বাচন ছিল প্রহসনের নির্বাচন৷ কিন্তু এখন শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য ডাকা হয়েছে৷ আমরা সেখানে যাচ্ছি না৷ তবে ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন৷ সোমবার তাঁর দেশে ফেরার কথা আছে৷ তিনি দেশে ফেরার পর এই আমন্ত্রণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে৷''
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শাহাদুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তাদের সাড়া দেওয়া উচিৎ৷ তাঁর সামনে গিয়ে বলা উচিৎ আপনি নির্বাচনের আগে আমাদের যে কথা দিয়েছিলেন সেটা রাখেননি৷ তারা না গেলে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন৷ পাশাপাশি যেহেতু এখনও সময় আছে তারা সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারেন৷ অন্যভাবে দেখলে তারা প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে হয়ত নির্বাচনের বৈধতা দিতে চাননি৷''
আমন্ত্রণে না গেলে প্রধানমন্ত্রীর সামনে গিয়ে তাঁর প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে প্রশ্ন করার সুযোগ থেকে ঐক্যফ্রন্ট বঞ্চিত হবে কি না? জবাবে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘সেখানে তো আলোচনা হবে না৷ প্রধানমন্ত্রী শুধুই শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন৷ আর পিঠাপুলি খাওয়াবেন৷ আমরা তো সেখানে গিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবো না৷ তাহলে কেন যাবো? আমাদের নেতাকর্মীরা জেলে, এখনও মামলা হচ্ছে৷ আমার নিজের উপরই ৬ বার হামলা হয়েছে৷ এগুলো এড্রেস সেখানে করা যাবে না৷ তাহলে শুধুই পিঠা খাওয়ার মানসিকতা আমাদের নেই৷''
বিএনপির জায়গা থেকে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ঠিকই আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই চা চক্র কী? আওয়ামী লীগ জিতেছে তারা বিজয় পালন করছে৷ সেই বিজয় উৎসবে কোন মুখে যাবে বিএনপি? আজকে যদি কোনো আলোচনা বা সংলাপ হতো তাহলে হয়তো যাওয়ার প্রসঙ্গ আসত৷''
আমন্ত্রণ পাওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের এজেন্ডা থাকলে আমরা সংলাপে যাবো, না হলে যাবো না৷ এটাই ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির সিদ্ধান্ত৷ ভোট ডাকাতির নির্বাচনে বিজয়ীকে শুভেচ্ছা জানাতে কেনো যাবো? ঐক্যফ্রন্টের অন্য নেতাদের মতও একই৷ তারা বলছেন, আমন্ত্রণে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই৷ এই ভুয়া নির্বাচনকে স্বাগত জানাতে তারা যাবেন না৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফও মনে করেন, বিএনপি'র এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিতই ছিল৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই তাদের এই ধরনের শুধু চা চক্রে না যাওয়াই প্রত্যাশিত ছিল৷ কর্মীদের কাছে বিএনপি নেতাদের তো জবাবদিহিতা করতে হয়৷ ফলে তারা নিজেদের অবস্থানের কারণেই হয়ত এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এই সিদ্ধান্ত থেকেই হয়ত তারা রাজনৈতিক জয় আনতে চান৷ প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের নিজস্ব অবস্থান থাকে, এটাই হয়ত তাদের অবস্থান৷''
এদিকে নির্বাচন নিয়ে মতামত গ্রহনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ হবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি৷ জেএসডি সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা আ স ম আবদুর রব সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘২৮ জানুয়ারি আমাদের সংলাপ হওয়ার কথা ছিল৷ সেই সংলাপ এখন আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি হতে পারে৷ সংলাপে কাদের ডাকা হবে এ ব্যাপারে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, ‘‘ভোটারবিহীন নির্বাচন, যেটা জাতিকে হতবাক করে দিয়েছে৷ এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ যারা আছেন, তারা মত প্রকাশ করবেন৷ যারা অবাধ, সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পথ খুঁজে দেবেন, তারা এই সংলাপে অংশ নেবেন৷''
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে প্রধানমন্ত্রী ৭৫টি দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন৷ ওই সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলের নেতাদের আলাদা আলাদা চিঠি দিয়ে চা চক্রে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে৷
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দল গত ১ নভেম্বর গণভবনে সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে বসেছিলেন৷ এর ৭ দিন পর ৭ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে দ্বিতীয় দফায় সংলাপে বসেন৷ পরে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি হয়৷
নির্বাচনের পরে একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৩ জানুয়ারি বলেন, আবারও সংলাপে বসবেন প্রধানমন্ত্রী৷ কাদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল, তাদের আবার আমন্ত্রণ জানাবেন প্রধানমন্ত্রী৷ অবশ্য এর একদিন পরেই কাদের বলেন, নির্বাচন নিয়ে সংলাপ নয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য ডাকা হবে৷