কলকাতা-খুলনা বন্ধন
১০ নভেম্বর ২০১৭৫২ বছর আগে এই ট্রেন চলত৷ কলকাতা থেকে খুলনা৷ বাংলাদেশের শিল্প শহর এবং তৃতীয় বৃহত্তম শহর খুলনা৷ অনেকেরই শৈশবের স্মৃতিতে আছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা সবুজ রঙের ট্রেন বনগাঁ সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে৷ সেই কারণেই ৫২ বছর পর এই রেল যোগাযোগের পুনরুদ্ধারে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ, উদ্দীপনা প্রচুর৷ বৃহস্পতিবার, খুলনা এক্সপ্রেসের যাত্রাপথের অনেক জায়গায়, অনেক স্টেশনে সাধারণ মানুষ এই ট্রেনের জন্যে অপেক্ষা করেছেন৷ নেহাতই আনুষ্ঠানিক উড়ান, তাই থামেনি ট্রেন৷ কিন্তু অনেকেই নিজেদের মোবাইল ক্যামেরায় তুলে রেখেছেন সেই ট্রেনের দুরন্ত চলে যাওয়া৷ তারপর সেই ভিডিও পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ বাংলা সংবাদমাধ্যমের মধ্যেই একই আবেগ চোখে পড়েছে৷ শুক্রবার সকালে একাধিক বাংলা খবরের কাগজের প্রথম পাতায় এই রেলযাত্রার ছবি, খবর৷
যদিও গোটা ব্যাপারটাই ছিল আনুষ্ঠানিক৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সূচনা করলেন কলকাতা স্টেশন থেকে এই যাত্রার৷ প্রোটোকল মেনে ছিলেন দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীরাও৷ কিন্তু ফুলে, মালায় সাজানো কার্যত খালি একটি ট্রেন, যার পোশাকি নাম ‘বন্ধন এক্সপ্রেস' রওনা হলো পেট্রাপোল-বেনাপোল রুটে খুলনার উদ্দেশে৷ তবে চমকে দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী৷ পাঠ করলেন বাংলায় লেখা শুভেচ্ছা বার্তা — ‘‘আজ এই শুভ উপলক্ষ্যে দুই দেশ বাসীদের আমার অভিনন্দন জানাই৷ আজ আমাদের মৈত্রীর বন্ধন আরও সুদৃঢ় হলো৷''
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গলায় ছিল স্বাভাবিক অন্তরঙ্গতার সুর৷ তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘‘দিদি, ইলিশ মাছ আছে৷ তাড়াতাড়ি আসেন, ইলিশ খাওয়াব৷'' মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও ছিলেন আবেগে আক্রান্ত৷ তিনি বলেন, ‘‘আজ এক ঐতিহাসিক দিন৷ বন্ধন এক্সপ্রেস চালুর মধ্যে দিয়ে দু'দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে৷ দু'দেশের মৈত্রী, সংহতি, ভাষার বন্ধন আরও দৃঢ় হবে৷'' তিনি রেলমন্ত্রী থাকার সময় পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে পণ্যবাহী ট্রেন, যাত্রী-বাস চালানো শুরু হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আর কলকাতা স্টেশনে রেলযাত্রার সূচনা অনুষ্ঠানে ভারতীয় সংসদের রেল বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সুদীপ ব্যানার্জি বলেন, ‘‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্পর্কিত সব ব্যাপারে মমতা ব্যানার্জি সব সময় ভারত সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে এসেছেন৷''
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে পর্যন্ত নিয়মিত চলত ‘বরিশাল এক্সপ্রেস'৷ সেই ট্রেন ছাড়ত কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে৷ আদতে বরিশালের মানুষ, এখন সোদপুরের বাসিন্দা, ৮৪ বছরের প্রবীণ নন্দদুলাল দাশ এখনও মনে করতে পারেন সেই বরিশাল এক্সপ্রেসে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, আট বছর বয়সে প্রথম সেই ট্রেনে চড়ে বরিশাল থেকে কলকাতা এসেছিলেন তিনি৷ ১৯৫৪ সালে যখন দু'দেশের মধ্যে পাসপোর্ট চালু হলো, তখন বেনাপোল এবং পেট্রাপোল সীমান্ত স্টেশনে যে দু'দফায় পাসপোর্ট পরীক্ষা হতো, তাও দিব্যি মনে আছে তাঁর৷ ১৯৬৫ সালে ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসক হওয়ার পর যে বরিশাল এক্সপ্রেস বন্ধ করে দেওয়া হলো, সেই স্মৃতি এখনও দুঃসহ তাঁর মনে৷
একই রুটে, কিন্তু এবার শিয়ালদহ স্টেশন নয়, কলকাতা স্টেশন থেকে খুলনা যাতায়াত করবে বন্ধন এক্সপ্রেস৷ এটি হবে সাপ্তাহিক ট্রেন৷ ১৬ নভেম্বর থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল ৭.১০-এ কলকাতা থেকে ছাড়বে৷ ১৭২ কিমি পথ ৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে পেরিয়ে খুলনা পৌঁছবে বেলা ১২টায়৷ ওই দিনই খুলনা থেকে দুপুর ১.২০ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে কলকাতা পৌঁছবে সন্ধে ৬টায়৷ ৪৫৬ জন যাত্রী নিতে পারবে ৮ বগির এসি চেয়ারকার আসন সম্বলিত ট্রেনটি৷ ভাড়া হবে জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ ভারতীয় টাকা৷ বাংলাদেশগামী যাত্রীদের পাসপোর্ট-ভিসা পরীক্ষা হবে কলকাতা স্টেশনেই, ট্রেনে ওঠার আগে, সীমান্তে নয়৷ যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য প্রতিবারের যাত্রায়বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২২ জন সশস্ত্র জওয়ান সঙ্গে থাকবেন৷ তাঁরা আবার ফিরতি ট্রেনে সওয়ার হবেন সীমান্ত থেকে৷
আপনিও কি এই ‘বন্ধন এক্সপ্রেস' চড়তে চান? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷