শেখ মুজিব শুধু হাসিনার বাবা না, বাঙালির প্রাণপুরুষ
১৭ জানুয়ারি ২০২০ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, ‘‘শেখ মুজিব শুধু হাসিনার বাবা না, বাঙালির প্রাণপুরুষ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার দুঃখ লাগে, এই মানুষটাকে আমরা সকলে মিলে স্বাগত জানাতে পারলাম না৷''
ডয়চে ভেলে : মুজিববর্ষ উদযাপন, এটা কি দল মত নির্বিশেষে হচ্ছে?
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী : এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য৷ এতবড় একটা মানুষের জন্মশতবার্ষিকী আমরা পালন করব, অথচ সাবাইকে নিয়ে করা হচ্ছে না৷ এতবড় একজন মহাপুরুষ, তার বৈচিত্রময় জীবন, কর্মময় জীবন অনেক কিছু জানার আছে৷ এটা নিয়ে তারা লৌকিকতা করছে৷ যেমন ধরেন ঢাকা শহরে তার আগমন ১৯৪৮ সালের পর৷ পরিবার নিয়ে উনি থেকেছেন নাজিরাবাজারে অর্থাৎ ইংলিশ রোড এই অঞ্চলে৷ এরপর উনি দীর্ঘ সময় থেকেছেন সম্ভবত ১০৮ সিদ্ধেশ্বরীতে৷ একটি পুকুরপাড়ে, ইন্সপেক্টর আখতারুজ্জামানের বাড়িতে৷ সম্ভবত উনার ছেলে মেয়ে বেঁচে আছে৷ সবশেষ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে৷ ১৯৭১ সালে প্ল্যানিং এর মেম্বার সেক্রেটারি এ কে এম আরকানের একতলা বাড়িতে থেকেছেন৷ ঢাকা শহরে উনার যে বিচরণক্ষেত্র ছিল সেইসব এবং সবাইকে নিয়ে করলে আরো অনেক বেশি গ্রহণীয় হতো৷ আমরা সবাই তার এই দিনটাকে পালন করতে চাই৷ তারা বঙ্গবন্ধুকে শেখ হাসিনার বাবা বানিয়ে ফেলেছে৷ আমাদের সবার প্রিয় মানুষ হতে তাঁরা বাধা দিচ্ছে৷ এ নিয়ে আমি একটা লেখাও লিখেছি৷
শুরুতেতো বলা হয়েছিল, এই উৎসব হবে পুরো বাংলাদেশের?
সেটাই তো বলছি, একজন মহাপুরুষকে নিয়ে যেটা হওয়ার দরকার ছিল সেটা হচ্ছে না৷ যেমন ধরেন আমাদের নির্বাচন নিয়ে যা হচ্ছে, আগে নির্বাচন ছিল একটা উৎসব৷ এখন এটা লৌকিকতায় পরিণত হয়েছে৷ চট্টগ্রামের নির্বাচন হল এখানে মাত্র ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রত্যেক নির্বাচনে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ ভোট দেন৷ এমনকি বয়োবৃদ্ধ, শয্যাশায়ী লোকও কাঁধে চড়ে এসে ভোট দেয়৷ এটা আনন্দঘন ব্যাপার৷ আমরা সবকিছুকে শেষ করে দিয়েছি৷
শুধু আওয়ামী লীগের উৎসব হওয়ায়, উদযাপন কি রং হারাচ্ছে না?
এটাইতো খারাপ জিনিস৷ শেখ মুজিবতো শুধু আওয়ামী লীগের না৷ সকল বাঙালির, আমাদের সবার প্রিয় মানুষ৷ তারা যেভাবে জয় বাংলাকে দলীয় স্লোগান করে নিয়েছিল৷ শেখ মুজিব শুধু হাসিনার বাবা না, বাঙালির প্রাণপুরুষ৷ আমার দুঃখ লাগে, এই মানুষটাকে আমরা সকলে মিলে স্বাগত জানাতে পারলাম না৷ এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক৷
কিভাবে আওয়ামী লীগ সবাইকে সম্পৃক্ত করতে পারতো?
তাতো পারতই৷ তারাতো ডাকেইনি৷ আমরাও অনেক কিছু জানি৷ তার সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করেছি, একসঙ্গে রাজনীতি করেছি৷ এখনোতো অনেক লোক জীবিত আছে৷ তারা মার্শাল এর মতো জন্মবার্ষিকী পালন করছে, এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য৷
এটা কি সংকীর্ণতা নাকি পরিকল্পনার অভাব?
দু'টোই৷ প্রথমত, তাদের চিন্তার প্রসারতার অভাব৷ তার যে মহানুভবতা ছিল, সবাইকে নিয়ে করার; যেমন ধরেন আজকে এই আয়োজনের আহবায়ক হওয়া উচিৎ ছিল ড. ইউনূসের৷ তাকেই বলতে পারত আপনি এই কমিটির চেয়ারম্যান হন৷ তারা গৎবাঁধা আনিসুজ্জামান ছাড়া আর কাউকে দেখে না৷ আমি নিশ্চিত উনি বেঁচে থাকলে ইউনূসকে জড়িয়ে ধরে বলতেন, সাব্বাস, তুই দেখাইছোস৷ তুই আমাদের নাম বড় করেছিস৷
কি কারণে এমনটা হচ্ছে?
উনারা চিন্তাই করতে পারে না, শেখ মুজিব ব্যক্তি কত বড় ছিল৷ তারা যে বড় জিনিসটা চিন্তা করছে, হৃদয় থেকে এটা গ্রহণ করতে পারেনি৷
বঙ্গবন্ধুকে কেন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে আটকে ফেলা হচ্ছে?
এটা জাতির দুর্ভাগ্য এবং আওয়ামী লীগের অপরিনামদর্শিতা৷
কিভাবে এই অনুষ্ঠানকে আরো সমৃদ্ধ করা যেত? আপনার পরামর্শ কি?
অবশ্যই করা যেত৷ একটা অনুষ্ঠান দেখার জন্য ডাকা, আর সম্পৃক্ত করা এটাতো এক জিনিস না৷
ক্ষণগণনার যে অনুষ্ঠান, সেখানেতো ড. কামাল হোসেন ছিলেন?
এমন দাওয়াত তো আমাদেরও ছিল৷ কামাল হোসেনতো তাদের জীবনের অংশ৷ তাকে কি পাশে ডেকে বলেছে, বলেনতো পাকিস্তানে এক বছর কেমন ছিলো৷ সেই বর্ণনাতো কামাল হোসেনের দেওয়ার কথা৷ আমার সব সময় অনুসন্ধিৎসা ছিল তার জীবনটা কেমন কেটেছিল৷ পাকিস্তানে কী করেছিল, তার মুক্তিটা কেমন করে হল? পাকিস্তানের ফাইন্যান্স মিনিস্টার মোবাশ্বর হাসান৷ মোবাশ্বর হাসান কিছুটা বর্ণনা দিয়ে বলেছিল৷ এই কথাটা অনেক বেশি সুন্দর হতো যদি ড. কামাল হোসেনের মুখ দিয়ে শোনা যেত৷ তাকে যদি ডেকে বলা হতো, আপনি আসেন এক বছর পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধু কেমন ছিলেন সেটা আপনি বলেন৷ তা কি করেছে? করেনি৷ শুধু একটা লৌকিকতার কার্ড পাঠিয়ে দিয়েছে৷
অনেককেই তো দাওয়াত পেয়েছেন? তাহলে কেন বলা হচ্ছে, কাউকে সম্পৃক্ত করা হয়নি?
আরো যে ১০ হাজার লোককে দাওয়াত দিয়েছে, সেভাবে আমাকেও দাওয়াত দিয়েছে৷ আমাকেতো কথা বলার জন্য ডাকেনি, স্মৃতি রোমন্থনের জন্য ডাকেনি৷ অনুষ্ঠান দেখার জন্য ডেকেছে৷ অনুষ্ঠান দেখার জন্য ডাকা, আর সম্পৃক্ততার জন্য ডাকা কি এক কথা?