সংকটের সময় গির্জা আছে
১৭ এপ্রিল ২০১৫একজনের মানসিক বিকারের কারণে ১৪৯ জন নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, তাদের মধ্যে বেশ কিছু স্কুলের ছাত্রছাত্রী – এবং একটি শিশু৷ শত শত শোকগ্রস্ত আত্মীয়স্বজন, পরিবার, বন্ধুবান্ধব - তাদের জীবনও আর একরকম থাকবে না৷ জার্মান জাতি এবার কিছুক্ষণের জন্য আত্মস্থ হয়ে জার্মানউইংস দুর্ঘটনায় নিহতদের কথা স্মরণ করবে: কোলন ক্যাথিড্রালের প্রার্থনাসভায় এবং তার সঙ্গে যুক্ত একটি সংক্ষিপ্ত রাষ্ট্রীয় স্মারক অনুষ্ঠানে৷
এ ধরনের একটি বিমান দুর্ঘটনা সমাজকে নাড়া দিতে পারে কিন্তু রাষ্ট্রকে নয় – কাজেই রাষ্ট্রীয় স্মারক অনুষ্ঠানের প্রয়োজন ছিল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে৷ কিন্তু ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট গির্জার এই যৌথ প্রার্থনাসভায় বস্তুত কারো আপত্তি নেই৷ সমাজতত্ত্ববিদরা আজ বহু দশক ধরে ধর্মীয় ঐতিহ্যের অবক্ষয়ের কথা বলেছেন বটে, কিন্তু সেই ধর্মীয় ঐতিহ্য আজও বেঁচে আছে, যেমন তার হয়তো প্রয়োজনও আছে: এই সংবিধান শাসিত, যুক্তিবাদী, আধুনিক রাষ্ট্রেও৷
বিপর্যয়ের পর প্রার্থনা
প্রার্থনাসভাটি হবে বড় আকারের কিন্তু গাম্ভীর্যপূর্ণ, এই সিদ্ধান্তের একটা পটভূমি আছে৷ ২০০৯ সালের পয়লা জুন একটি এয়ার ফ্রান্স বিমান ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাবার পথে অতলান্তিক মহাসাগরের অতলে হারায় – মোট ২২৮ জন আরোহী নিয়ে, যাদের মধ্যে ২৮ জন ছিলেন জার্মান৷ সেই দুর্ঘটনার পর ড্যুসেলডর্ফের ইওহানেস গির্জায় যে স্মারক প্রার্থনাসভাটি অনুষ্ঠিত হয়, তাতে যোগ দিয়েছিলেন সারা জার্মানি থেকে আসা শোকগ্রস্তেরা৷
২০১০ সালের জুলাই-তে ডুইসবুর্গের লাভ প্যারেডে ভিড়ের চাপে ২১ জন মানুষ প্রাণ হারানোর পর শহরের প্রোটেস্টান্ট সালভাটোর গির্জাতে শোকার্ত মানুষজন সমবেত হতে পেরেছিলেন৷ ২০০৯ এবং ২০১০, উভয় ক্ষেত্রেই গির্জায় প্রার্থনাসভা ও স্মারক অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিলেন নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের সরকার এবং উভয় ক্ষেত্রেই গির্জার কাছে অনুরোধ যায় রাজ্য সরকারের কাছ থেকে৷
একক আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, এমনকি আবেগপীড়িত অপরিচিত মানুষদের শোক ও সাধারণ বিমূঢ়তা প্রকাশের জন্য একটি যথোপযুক্ত আঙ্গিক খোঁজেন সরকারি কর্মকর্তারা৷ একসঙ্গে বেদনা সহ্য করা, সেই সঙ্গে দুঃসহ নানা প্রশ্ন, সেটাই হল আসল কথা – দুঃখের অনুভূতির উপর ভক্তির সহজ প্রলেপ নয়৷
গির্জায় প্রার্থনা ও স্মারক অনুষ্ঠান শুধু নিহতদের আত্মীয়স্বজনদের জন্য নয়, যে সব রাজনীতিকরা দুর্ঘটনার অকুস্থলে গিয়ে বলার মতো কথা খুঁজে পাননি, অথচ তাদের চোখেমুখে সেই প্রশ্নই ফুটে উঠেছে: কেন? এই প্রার্থনাসভা সেই রাজনীতিকদের জন্যও, এছাড়া ত্রাণকর্মী, মনোবিদ, চ্যাপলেন, সকলের জন্য৷
শোক এবং অনুযোগের স্থান
সেই স্থানটি মানুষজন খুঁজে পান গির্জায় – আগের মতোই৷ গতিশীল, সাফল্যে মত্ত সমাজ; রাষ্ট্রের কাজ হল সচল থাকা; ব্যক্তিবর্গের জন্য অসীম সম্ভাবনা৷ অপরদিকে খ্রিষ্টীয়-ইহুদি ঐতিহ্যের মুক্তি, ত্রাণ, ঈশ্বর৷ সেই ঐতিহ্যে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে নালিশ করা যায়৷ আবার এই শুক্রবারে যারা কোলোন ক্যাথিড্রালের সামনের সিঁড়িতে মোমবাতি জ্বালাবেন, তারাও বস্তুত একটি ধর্মীয় প্রথাকে ধর্মনিরপেক্ষ বাস্তবের উপযোগী করে তুলবেন৷