1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংবাদমাধ্যমে ভাষার মর্যাদা রক্ষার হাল

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সংবাদমাধ্যমে বাংলা বানানের নানা রূপ দেখা যায়৷ ভুল বানানের ছড়াছড়িও প্রায় সর্বত্র৷ সম্প্রচার মাধ্যম ও এফএম রেডিওর বিরুদ্ধে আছে উচ্চারণ বিকৃতি এবং বাংলা আর ইংরেজি শ্রুতিকটুভাবে মিলিয়ে ফেলার অভিযোগ৷

https://p.dw.com/p/4Nnlh
বাংলা ভাষায় বানানের সমতা বিধানের জন্য বাংলা একাডেমি একটি কমিটি গঠন করেছে
বাংলা ভাষায় বানানের সমতা বিধানের জন্য বাংলা একাডেমি একটি কমিটি গঠন করেছেছবি: Anupam deb Kanunjna/DW

সংশ্লিষ্টদের অনেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন না৷ তবে ভুল বানান ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে কারো কারো মাঝে৷

অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে বানান ঠিক রাখার জোর প্রয়াস তেমন একটা দেখা যায় না৷ প্রুফ রিডার বা সম্পাদনা সহকারী নেই৷ এমনকি ‘বড়' পত্রিকার অনলাইন সংস্করণেও কোনো সম্পাদনা সহকারী রাখা হয় না৷

দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদনা সহকারী জহিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রুফ রিডিং বিভাগ একটি পত্রিকার বানান ও বাক্য গঠন দেখার জন্য সর্বশেষ চেকপোস্ট হলেও এখানে গুরুত্ব দিন দিন কমছে৷ আর অনলাইনে তো সম্পাদনা বিভাগই নেই৷”

‘বাংলা একাডেমির উচিত একটা মানসম্পন্ন বানানরীতি তৈরি করা’

তার কথা, ‘‘এই পেশায় তরুণদের আগ্রহও দিন দিন কমছে৷ কারণ, এই বিভাগে যারা কাজ করেন, তারা সবচেয়ে অবহেলিত৷ তাদের বেতন-ভাতাও কম৷”

তবে তিনি বলেন, ‘‘বানান নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সংকটের প্রধানত দুইটি কারণ৷ প্রথমত, অধিকাংশ পত্রিকারই নিজস্ব বানানরীতি নেই৷ ফলে একই পত্রিকায় একই শব্দের বানান ভিন্ন ভিন্নভাবে ছাপা হয়৷ আর আমাদের জাতীয়ভাবে একক কোনো বানানরীতি নেই৷ বাংলা একাডেমির অভিধানে একই শব্দের চার ধরনের বানানও রয়েছে৷ ফলে পরিস্থিতি যা হবার তা-ই হয়েছে৷”

বাংলাদেশে অনলাইন সংবাদমাধ্যম অনেক বিস্তার লাভ করেছে৷ সংখ্যায় বাড়ছে৷ কিন্তু বাংলা বানান নিয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের অবস্থা শোচনীয়৷ শুধু ভুল বানান নয়, অনেক শব্দের অক্ষরই বাদ পড়ে যায়৷ এর প্রধান কারণ প্রুফ রিডার না থাকা৷ কপি এডিটরদেরই এই কাজটি করতে হয়৷

বাংলা অনলাইন নিউজপোর্টাল ঢাকা পোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার বলেন, ‘‘আসলে অনলাইনগুলোতে প্রুফ রিডারের প্রচলন হয়নি৷ আমাদের এখানে এভাবেই শুরু হয়েছে এবং চলছে৷ ডিজিটাল সাংবাদিকতার এই যুগে এখন একজনকেই অনেক কাজ করতে হয়৷ তাই রিপোর্টারকেও শুদ্ধভাবে লিখতে জানতে হয়৷ কিন্তু আমাদের এখানে সেই ধরনের দক্ষ জনশক্তি এখনো তৈরি হয়নি৷ প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেই, প্রশিক্ষণ নেয়ার আগ্রহও নেই৷”

‘‘আমাদের বাংলা ভাষার সর্বজন-গ্রহণযোগ্য কোনো বানানরীতিও নেই যে সেটা আমরা অনুসরণ করবো৷ ফলে বানান নিয়ে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে,” বলে মনে করেন মহিউদ্দিন সরকার৷

আজকাল লেখার সময়ও কেউ কেউ বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেন৷ এর কারণ জানাতে গিয়ে মহিউদ্দিন সরকার উল্লেখ করলেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজশন (এসইও)-র কথা৷ তিনি বলেন, এ কারণে বাংলার সঙ্গে না চাইলেও মাঝে মাঝে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে হয়৷ এ কারণে অনেক সময় শিরোনামেও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে হয় বলে জানান তিনি৷

এফএম রেডিও এবং টেলিভিশনের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষা নিয়ে এক ধরনের ‘স্বেচ্ছাচারিতা’র অভিযোগ প্রসঙ্গে রেডিও টুডের প্রধান বার্তা সম্পাদক ইমামুল হক শামিম বলেন, ‘‘আমরা  বাংলা ও ইংরেজি এক সঙ্গে ব্যবহার করি৷ এখানে এটা প্রচলিত৷ তবে আমরা যে নীতি মানি তা হলো যে ভাষার শব্দই ব্যবহার করি না কেন সেটা সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে হবে৷ কোনো শব্দের অশুদ্ধ উচ্চারণ আমরা অগ্রহণযোগ্য মনে করি৷”

তার কথা, ‘‘বাংলা শব্দকে ইংরেজির মতো করে উচ্চারণেরও প্রবণতা আছে৷ নাটকেও আমরা সেটা দেখেছি৷ এটাও আমরা গ্রহণযোগ্য মনে করি না৷”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সিকদার মনোয়ার মুর্শেদ (সৌরভ শিকদার) মনে করেন, সংবাদ মাধ্যমে বাংলা বানানের ‘দুরবস্থার’ প্রধানত দুইটি কারণ:

১.    শুদ্ধ বানান না জানা ও শিক্ষার অভাব এবং

২.    রাষ্ট্রীয়ভাবে বানান শুদ্ধ করার ব্যাপারে সেরকম কোনা উদ্যোগ না থাকা৷

তার মতে, ‘‘আমরা মাতৃভাষাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেই না৷ আমাদের মাতৃভাষার প্রেম এই ২১ ফেব্রুয়ারি বা এক-দুই দিনের৷ আমরা আমাদের ভাষাকে অবহেলা করি৷ বাংলা একাডেমির উচিত একটা মানসম্পন্ন বানানরীতি তৈরি করা ৷ সেটা করা হলে সবাই সেই বানানরীতি অনুসরণ করবে৷”

‘প্রশাসনিক নির্দেশে ভাষার গতি নির্ধারণ করা যায় না’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলা ভাষায় বানানের সমতা বিধানের জন্য বাংলা একাডেমি একটি কমিটি গঠন করেছে ছয় মাস আগে৷ আমিও সেই কমিটির সদস্য৷ সেই কমিটির একটি মাত্র সভা হয়েছে৷ অনেকগুলো অমীমাংসার সমাধান হওয়া দরকার৷ ঈদ বানান আমরা ই-কার না ঈ-কার দিয়ে লিখবো সেটা নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন৷” তিনি মনে করেন, বানানরীতি ঠিক করে অনলাইনে একটি স্পেল চেকার করলে নৈরাজ্যের অনেকটাই অবসান ঘটবে

সৌরভ সরকার মনে করেন, ‘‘আমাদের ভালোভাবে বাংলা ভাষা শেখাতে হবে৷ শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে শেখাতে হবে৷ তা না হলে এই অবস্থা চলতেই থাকবে৷”

তবে দৈনিক সমকালের সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মনে করেন, ‘‘প্রশাসনিক নির্দেশে ভাষার গতি নির্ধারণ করা যায় না, বানান ঠিক করা যায় না৷  এটা মননশীলতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার বিষয়৷ তবে এই কাজে বাংলা একাডেমি সবচেয়ে বেশি সহায়তা করতে পারে৷”

তিনি বলেন, ‘‘বাংলা ব্যাকরণ তৈরি হয়েছে সংস্কৃত ব্যাকরণের আদলে৷ নিজস্ব বাংলা ব্যাকরণ দাঁড়ায়নি৷ ১৯৩০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একটি বানান সংস্কার কমিটি করে কাজ করেছিল৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জামিল চৌধুরীর নেতৃত্বে বানান সংস্কার করার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছিল৷ তারা কিছু কাজ করেছেন৷ কিন্তু গত ৩০-৪০ বছরে সবাই টাকার পেছনে ছুটছে৷ সব কিছু হচ্ছে আর্থিক লাভের বিবেচনায়৷ নতুন নতুন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে৷ এটা টাকার জন্যই করা হচ্ছে৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না৷ কাজের গুরুত্ব বা আন্তরিকতার চেয়ে কে কত টাকা পাবেন সেটাই চিন্তা৷ এই কারণে তো পাঠ্যপুস্তক বোর্ড লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল৷”

সংবাদমাধ্যমে বাংলা ভাষার বর্তমান হাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সম্পাদকীয় মনোযোগ না থাকলে বানান নিয়ে নানা ঝামেলা হবেই৷ সেই মনোযোগ কমে যাচ্ছে৷ পত্রিকাগুলোর ভাষা ব্যবহারের স্টাইলের ওপর কোনো জোর নেই৷ যে যেভাবে পারছে চালাচ্ছে৷”

ভাষার বৈচিত্র্য ও পরমতসহিষ্ণু হতে শেখায় যে ‘বাংলা স্কুল’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান