সংসদের রোষের মুখে কোণঠাসা জনসন
৩০ আগস্ট ২০১৯ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সংসদের অধিবেশনে কাটছাঁট করে ব্রেক্সিটের আগে বিরোধীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করলেও তারা হাল ছাড়তে প্রস্তুত নন৷ ৩১শে অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদের নির্ধারিত তারিখের আগেই তারা চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা দূর করতে বদ্ধপরিকর৷ এই লক্ষ্যে সময় নষ্ট না করে আগামী সপ্তাহে সংসদের অধিবেশন শুরু হলেই বিরোধী লেবার দল আপদকালীন বিতর্ক শুরু করতে চায়৷ দলের নেতা জেরেমি কর্বিন বলেন, প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রীর বেপরোয়া উদ্যোগ থামানোর চেষ্টা করা হবে৷ পরে লেবারসহ পাঁচটি বিরোধী দল এক যৌথ ঘোষণাপত্রে সংসদ মুলতুবির পদক্ষেপ নিয়ে ভোটাভুটির উদ্যোগের ঘোষণা করেছে৷
বরিস জনসন জানিয়েছেন, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ব্রেক্সিটের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ সেপ্টেম্বরে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন করে দুই পক্ষের আলোচনা হবে বলে তিনি ঘোষণা করেন৷ তবে ৩১শে অক্টোবর যে কোনো মূল্যে ব্রেক্সিটের অঙ্গীকার থেকে তিনি সরে আসতে প্রস্তুত নন৷
বুধবার ব্রাসেলসে জনসনের ব্রেক্সিট বিষয়ক মধ্যস্থতাকারী ডেভিড ফ্রস্ট ও ইইউ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে কোনোরকম অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফান ব্লক৷ উল্লেখ্য, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ গত সপ্তাহে জনসনকে এক মাসের মধ্যে ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্য বিকল্প পেশ করার ডাক দিয়েছিলেন৷ জনসন ব্রেক্সিট চুক্তি থেকে এই শর্ত দূর করার দাবি জানিয়ে আসছেন৷ ব্যাকস্টপ ছাড়াও শুল্ক, নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা, বাণিজ্য নীতি বিষয়েও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে৷
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সংসদ মুলতুবি রাখার পদক্ষেপ ইউরোপীয় ইউনিয়নেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে৷ এই অবস্থায় আলোচনায় জনসনকে কোনো ছাড়ের সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে৷ জার্মান সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান নর্বার্ট ব়্যোটগেন বলেছেন, চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের পথে সংসদকে পথের কাঁটা হিসেবে দূর করে ইইউ-কে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে থাকলে সেই চাপের মুখে নতি স্বীকার করা হবে না৷ এমন হুমকির মুখে ইইউ ব্রেক্সিট চুক্তিতে কোনো রদবদল করবে না৷ তাঁর মতে, ‘‘কোনো সরকার প্রধান সংসদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করলে ইইউ সেই আচরণকে পুরস্কৃত করতে পারে না৷''
দলের মধ্যে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিদের সহায়তায় নিজের লক্ষ্য পূরণে অবিচল থাকলেও সংসদে বরিস জনসন কতটা সমর্থন পাবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ আগামী সপ্তাহ থেকে বিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটসহ অন্যান্য উদ্যোগ শুরু করলে টোরি দলের মধ্যে ঐক্যের পরীক্ষা হবে৷ মাত্র একটি আসনের ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিষয়টি জনসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডে টোরি দলের প্রধান হিসেবে রুথ ডেভিডসন পদত্যাগ করায় জনসনের কর্তৃত্ব কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে৷ জনপ্রিয়তার বিচারে ডেভিডসনের বিকল্প পাওয়া কঠিন৷ তাঁর পথ অনুসরণ করে টোরি দলের হাতে গোনা কিছু সংসদ সদস্যও যদি জনসনের সঙ্গ ত্যাগ করেন, সে ক্ষেত্রে তিনি বিপাকে পড়বেন৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)