সব কাজের কাজি মাহফুজা
১৯ জুন ২০১৩বিশ্ব দরবারে এক মুহূর্তের জন্য হলেও তিনি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন মঙ্গলবার৷ ডয়চে ভেলে আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি এখন বন শহরে৷
জার্মানির পুরনো সংসদ ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাহফুজা ‘গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম অ্যাওয়ার্ড' গ্রহণ করেন৷ সে সময় তিনি উপস্থিত দর্শকদের তথ্যকল্যাণী হিসেবে তার নিত্যদিনকার কাজ ও কীভাবে তাদের দ্বারা গ্রামের মানুষজন উপকৃত হচ্ছেন, তা জানান৷
অনুষ্ঠান শেষে ডয়চে ভেলের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মাহফুজা বলেন, ‘‘আমার শুধু মনে হচ্ছে, কোথায় ছিলাম আর কোথায় আসলাম৷ মনে হচ্ছে, এতোদিন পর আমার মতো তথ্যকল্যাণীদের কষ্টটা সার্থক হলো৷''
উচ্চমাধ্যমিক পাস করা মাহফুজা তথ্যকল্যাণী হিসেবে কাজ করছেন ২০১০ সাল থেকে৷ গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নে অবস্থিত তাঁর নিজের গ্রাম সহ আশেপাশের মোট পাঁচটি গ্রামে কাজ করেন তিনি৷
কী কাজ করেন?
মাহফুজার কাছে এই প্রশ্নটা রাখার পর যখন উত্তর পেলাম তখন মনে হলো প্রশ্নটা এভাবে না করে করতে হতো এভাবে, ‘‘কী করেন না!'' মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া থেকে শুরু করে নষ্ট মোবাইল সারানো, যেসব গ্রামবাসীর আত্মীয় দেশের বাইরে থাকেন তাদের সঙ্গে স্কাইপে কথা বলিয়ে দেয়া, শিশুদের ভিডিও দেখানোর মাধ্যমে লেখাপড়ায় উৎসাহ যোগানো, কারও অনুষ্ঠানে ছবি তুলে সেগুলোর প্রিন্ট দেয়া, ভিডিও করা সব কাজ পারেন মাহফুজা৷ শুধু তিনি নন, তার মতো ৬৫ জন তথ্যকল্যাণীর কাজই হচ্ছে এগুলো৷
প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেন বলে তাদের প্রত্যেকের রয়েছে সাইকেল, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, ডায়াবেটিস ও প্রেসার মাপার যন্ত্র, গর্ভবতীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার মতো মৌলিক সরঞ্জাম ইত্যাদি৷
গ্রামবাসীর কাছে মূল্যায়ন
একজন মানুষের কাছ থেকে কেউ যখন এতো ধরণের সেবা পায় তখন স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি গ্রামবাসীর ভাল ধারণা হয়ে যায়৷ যেমনটা ঘটেছে মাহফুজার ক্ষেত্রেও৷ তিনি বলেন, ‘‘শুরুর দিকে গ্রামের অনেকের কাছ থেকে বাধা আসলেও এখন অনেকেই তাদের সম্মান দেখায়, তার কাজে সহায়তা করে৷''
স্থানীয় সাংসদ অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বিও মাহফুজার কাজে উৎসাহ দেন বলে জানান তিনি৷ ‘‘এমপি যদি কখনো রাস্তায় আমাকে দেখেন তখন তিনি গাড়ি থামিয়ে আমাদের কাজের খোঁজখবর নেন৷''
তিনমাস আগে মাহফুজার ল্যাপটপে স্কাইপ ব্যবহার করে গ্রামবাসীরা ঢাকায় অবস্থান করা সাংসদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছে, বলে জানান তিনি৷
উদ্যোক্তা ডিনেট
তথ্যকল্যাণী প্রকল্পের উদ্ভাবক আসলে তথ্য প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান ডিনেট৷ তারাই তথ্যকল্যাণীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এ কাজে নামিয়েছেন৷ সংস্থার উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানালেন, ২০১৭ সালের মধ্যে তথ্যকল্যাণীর সংখ্যা বাড়িয়ে ১২,০০০ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
বাংলাদেশের পাশাপাশি কঙ্গো, রুয়ান্ডা এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশেও এই প্রকল্পকে ছড়িয়ে দিতে চায় ডিনেট৷ এই লক্ষ্যে এখন কাজ চলছে বলেও জানালেন মোশাররফ হোসেন৷