সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী কনটেন্ট মনিটরিং দরকার
২৫ অক্টোবর ২০১৯ডয়চে ভেলে: আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক অনেক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের উৎসে পরিণত হচ্ছে৷ উস্কানি এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মাধ্যম হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করছেন৷ আপনি কিভাবে দেখছেন বিষয়টি?
আরিফ আর হোসেন: আমি বিষয়টিকে এভাবে দেখি, একটা ছুরিকে আপনি ছিনতাইয়ের কাজেও ব্যবহার করতে পারেন, আবার একজন রোগীকে আপেল কেটেও খাওয়াতে পারেন৷ বিষয়টা হল আপনি এটাকে কিভাবে ব্যবহার করবেন৷ ফেসবুকের জন্মই হয়েছিল কিন্তু এটা সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম হিসেবে৷ অনেকে এটাকে চমৎকারভাবে ব্যবহার করছেন৷ রক্ত চাওয়া, অভাবী মানুষের জন্য টাকা উঠানো, একটি স্কুল করে দেওয়ার জন্য প্রচুর ভালো কাজে ব্যবহার হচ্ছে৷ ইদানিং দেখা যাচ্ছে অনেকে এটাকে খারাপ কাজে ব্যবহার করছেন৷ এজন্য ফেসবুকের কোনো দোষ নেই, এটা আমাদের ম্যাচুউরিটির দোষ৷ ম্যাচুউরিটির দোষ বলছি এই কারণে যে, আমি যদি তার দেওয়া পোষ্টে, লাইক না দিতাম বা শেয়ার না করতাম তাহলে কিন্তু এটা ছড়াতো না৷ আমরা যদি তাদের কাজে সাড়া না দেই তাহলে দেখবেন একসময় তারা থেমে যাবেন৷
বাংলাদেশে কি এই প্রবণতা বেশি?
আসলে বিষয়টা সময়ের৷ আমেরিকা বা ইউকে-ও এমন সময় পার করেছে৷ ভারতও দুই বছর আগে এমন সময় পার করেছে৷ এখন আমরা সেই সময় পার করছি৷ আবার বাংলাদেশের চেয়ে আন্ডার ডেভেলপ কান্ট্রি যেগুলো আছে তারা হয়ত আরো দুই বছর পর এমন সমস্যায় পড়বে৷ সময়টা পার হলেই আমরা উতরে যাব৷
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কিভাবে আরো দায়িত্বশীল করা যায়?
এটাই একমাত্র সমাধান৷ যারা ব্যবহার করেন তাদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে৷ অনেকে বলেন ফ্রিডম অব স্পিচ নেই৷ আসলে ফ্রিডম অব স্পিচের নামে আমরা হেট স্পিচকে প্রমোট করছি৷ এটার পার্থক্য আমাদের বুঝতে হবে এবং আমাদেরই দায়িত্বশীল হতে হবে, মানুষকে শেখাতে হবে৷
উষ্কানি প্রতিরোধে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করণীয় কী?
তাদের অনেক কিছুই করার আছে৷ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আছে, সেটার ব্যবহার করতে হবে৷ অনেকেই ৫৭ ধারাকে খারাপ বলছেন, আমি মনে করি এটা খারাপ না৷ আপনি যদি আক্রান্ত হন বা গুজব ছড়ানো হয় তাহলে কিন্তু আপনিও বিচার চাইতে পারবেন৷ আইনের বাস্তবায়নটাও চোখে পড়তে হবে৷
প্রতিকারের জন্য বিশেষ কোনো পরিকল্পনা প্রস্তাব আছে আপনার?
দেখেন আল্লাহও কিন্তু মানুষকে লাইনে রাখার জন্য দুটো জিনিস করেছে৷ একটা বেহেস্ত, আরেকটা দোজখ৷ বিষয়টা হলো হয় ভয় দেখাও, না হয় আদর কর৷ সরকার ভয় দেখিয়ে চেষ্টা করেছে৷ পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় ওয়ার্কশপ করুক, মানুষকে বোঝাক যে এটা ভালো, আর এটা খারাপ৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি ভয় না দেখিয়ে মানুষকে বোঝায়, ভালোবাসা দিয়ে কথা বলে তাহলে এটার সমাধান হতে পারে৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কনটেন্ট মনিটরিংয়ে সরকার নানা প্রকল্প নিচ্ছে, সেটি কিভাবে পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে?
এটা করাই উচিৎ৷ কারণ রাষ্ট্রবিরোধী যদি কোনো তৎপরতা চলে তাহলে কেন মনিটরিং হবে না? কিন্তু এখানে রাষ্ট্রের বিপক্ষে এলে সেটা মনিটরিং করবে না আর সরকারের বিপক্ষে এলে মনিটরিং করবে সেটা দেখতে হবে৷ আপনি তো সরকারের সমালোচনা করতেই পারেন৷ সেটা তো আর রাষ্ট্রবিরোধী কাজ না৷ কিন্তু কেউ যদি রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেন তাহলে তো দেখবেই৷
আগেও তো গুজব ছড়ানো হতো, এখনকার গুজব, আর আগের গুজবের মধ্যে পার্থক্য কি?
আমার চোখে পার্থক্যের যে জায়গাটা ধরা পড়ে সেটা হলো, আজকে যিনি গুজব ছড়াচ্ছেন তিনি কিন্তু ধর্মকে ট্যাগ করে দিচ্ছেন৷ রামুর ঘটনা দেখেন, ভোলার ঘটনা দেখেন সবই কিন্তু ধর্মকে সামনে আনা হয়েছে৷ আমরা আসলে ধর্মের ব্যাপারে খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি, এই দিকটা খুবই উদ্বেগজনক৷
গুজব সৃষ্টিকারীদের বিচার না হওয়াতে কি এই প্রবণতা বাড়ছে? আপনি কি মনে করেন?
এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়৷ আমরা যদি দেখতে পারতাম রামুর ঘটনায় গুজব সৃষ্টির অভিযোগ কারো জেল হয়েছে, তাহলে কেউ গুজব ছড়ানোর আগে একবার হলেও ভাবত এটা করলে কিন্তু তারও জেল হতে পারে৷ আসলে আমাদের প্রচুর আইন আছে কিন্তু এসব আইনের প্রয়োগ নেই৷
অনেকেই এ কারণে ফেসবুক নিয়ন্ত্রণের কথা বলছেন, এটা কি ঠিক?
এটাকে আমি পজিটিভলি দেখি না৷ এই মিডিয়াটা ক্লিক করল কেন? টিভি বা পত্রিকায় একজন মত প্রকাশ করছেন, আরেকজন কিন্তু জবাব দিতে পারছেন না৷ এটা ওয়ানওয়ে মিডিয়া৷ এখানে কেউ কিছু বললে আরেকজনের জবাব দেওয়ার সুযোগ আছে৷ যুক্তি খণ্ডনের সুযোগ আছে৷ এটা বন্ধ করলে দেশের জন্য খারাপ হবে৷ যত কথা হবে, যুক্তি হবে ততই ক্রিয়েটিভ বিষয়গুলো উঠে আসবে৷ আমাদের বুঝতে হবে ফ্রিডম অব স্পিচের নামে আমরা যেন হেট স্পিচকে প্রমোট না করি৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷