সাইপ্রাসের জন্য কঠিন সময়
২৫ মার্চ ২০১৩অশনি সংকেত
রাষ্ট্র হিসেবে সাইপ্রাস দেউলিয়া হলো না বটে, কিন্তু এতকাল সে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের যে ব্যতিক্রমী মডেল চালু ছিল, তা আর অক্ষত থাকবে না৷ চরম মন্দায় তলিয়ে যাবে দেশটি৷ বিশেষ করে অস্বাভাবিক মাত্রায় ফুলে-ফেঁপে ওঠা আর্থিক ক্ষেত্রে হাজার হাজার কর্মী তাঁদের চাকরি হারাবেন৷ এতকাল এই আর্থিক জগত গোটা দেশের অর্থনীতির অর্ধেকেরও বেশি দখল করে রেখেছিল৷ এবার সেই চিত্র বদলে যাচ্ছে৷ সাইপ্রাসের সরকার সব ব্যাংকগুলিকে বাঁচানোর বৃথা চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হলো৷
সাইপ্রাসের জন্য কঠিন সময় আসছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থ বিষয়ক কমিশনর অলি রেন-এর এই মন্তব্য মোটেই ভুল নয়৷ অদূর ভবিষ্যতে কর বাবদ আয় কমে যাবে, সামাজিক খাতে ব্যয় বেড়ে যাবে৷ সাইপ্রাসের জন্য ১,০০০ কোটি ইউরোর যে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তাও যথেষ্ট হবে না৷ আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ-এর মতে, ২০২০ সালেও সাইপ্রাসের ঋণভার লাঘব হবে না৷ মাত্র ৮ লাখ জনসংখ্যার সেই দেশ এমন দায় সামলাতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে৷ তার উপর সবার আশঙ্কা, ধনী রুশ ও গ্রিক লগ্নিকারীরা বেগতিক দেখে তাদের অর্থ নিয়ে সাইপ্রাস ছেড়ে চম্পট দেবে৷ এই অবস্থায় সাইপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য স্থায়ী সমস্যা হিসেবে থেকে যেতে পারে৷
মানসিকতার পরিবর্তন
রবিবার গভীর রাতে সাইপ্রাসকে বাঁচানোর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, ইউরো এলাকার সংকটের ক্ষেত্রে তা এক বিশাল ব্যতিক্রম৷ এই প্রথম ব্যাংকের গ্রাহকদের সম্পদ কার্যত কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, যাতে ধুঁকতে থাকা ব্যাংকগুলি ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া যায়৷
যেমন সাইপ্রাসের লাইকি ব্যাংকে কেউ ১ লক্ষ ইউরোর বেশি অঙ্ক জমা রাখলে তার একটা বড় অংশই আর কোনোদিন ফেরত পাওয়া যাবে না৷ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে ইউরোপের ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ রাষ্ট্র দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিলে তাদের অর্থ কোথাও নিরাপদ নয়৷ অন্যদিকে ব্যাংকগুলির জন্য বার্তা হলো, যারা আর্থিক বাজারে অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিয়ে জুয়া খেলে এসেছে, যে কোনো মূল্যে তাদের বাঁচানোর দিন শেষ হয়ে গেছে৷ গ্রিস, আয়ারল্যান্ড ও স্পেনে এমনটা করা হলেও ভবিষ্যতে সেই সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে৷
জটিল পরিস্থিতি
তবে বিষয়টা এত সহজ নয়৷ যেমন সাইপ্রাসের লাইকি ব্যাংকের মালিকানার সিংহভাগই এখন রাষ্ট্রের হাতে৷ ফলে ক্ষতি রাষ্ট্রেরই হচ্ছে৷ ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে একাধিক পেনশন ফান্ড৷ সেই অর্থে হাত দেওয়া কঠিন৷ ব্যাংক ভেঙে দিয়ে প্রত্যাশিত অঙ্কের অর্থ পাওয়া যাবে – এর কোনো নিশ্চয়তা নেই৷
অনেকে বলছেন, সাইপ্রাস ইউরো এলাকা থেকে বেরিয়ে গেলেই হয়ত ভালো হতো৷ সে ক্ষেত্রে নিজস্ব মুদ্রা আবার চালু করে তার অবমূল্যায়ন ঘটিয়ে পরিস্থিতি হয়তো সামলে নেওয়া যেত৷ কিন্তু ইউরো এলাকার বাকি ১৬টি দেশ তাতে রাজি হয়নি৷ তাদের মনে আশঙ্কা ছিল, এমনটা ঘটলে বিশ্বজুড়ে ইউরো এলাকা সম্পর্কে আস্থা হারিয়ে যাবে৷ আসলে কেউই জানে না, কী হতে পারতো৷
ইউরো এলাকার ভবিষ্যৎ
ইউরো এলাকা ও সাইপ্রাস সংকট সামাল দিতে যে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ ২০১২ সালের জুন মাস থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে সাইপ্রাসের ব্যাংকগুলিকে বাঁচানোর কোনো উপায় নেই৷ ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন তাদের অর্থ দেওয়া বন্ধ করার হুমকি দিল, তখন সবার টনক নড়লো৷ অর্থাৎ সবার মনে হচ্ছে অর্থমন্ত্রীরা নয় – ইসিবি-র হাতেই রাশ রয়েছে৷ তাহলে ইসিবি-র রাশ কার হাতে?
জার্মানি সহ কয়েকটি দেশের সংসদকে সাইপ্রাসের জন্য সাহায্যের সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করতে হবে৷ সাইপ্রাসের সংসদকে এই প্রশ্নে আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না৷ সাইপ্রাসের মানুষের ক্রোধ বেড়ে গেলেও কিছু করার নেই৷ এখন সে দেশের সামনে গুটি পথ খোলা রয়েছে৷ হয় তাদের শর্ত পূরণ করতে হবে, না হলে ইউরো এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে৷