বিচারের মুখোমুখি হবে সুচি?
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮তিন নোবেলজয়ী নারী – ইরানের শিরিন এবাদি, আয়ারল্যান্ডের মারেইড ম্যাগুয়ার এবং ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান রবি, সোম ও মঙ্গলবার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন৷ তাঁরা সেখানে রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষদের সঙ্গে কথা বলেন৷ জানেন তাঁদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের কথা৷ বুধবার দুপুরের পর তাঁরা ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছে তাঁদের সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন৷
ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান বলেন, ‘‘আমরা অন্তত ১০০ রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেছি৷ এঁরা সবাই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ সন্তানের সামনে মাকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে৷ এমন অনেক শিশু পেয়েছি, যাদের মা-বাবাকে হত্যা করা হয়েছে৷ আগুনে ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে শিশুদের৷''
তিনি বলেন, ‘‘রাখাইনে এ সমস্ত অপরাধ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকার৷ নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি সরকার প্রধান হয়েও চুপ করে আছেন এবং এ জন্য তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী৷''
কারমান সুচিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আপনাকে সত্য প্রকাশ করতে হবে৷ রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷ অন্যথায় আপনাকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে৷ আমরা নোবেল বিজয়ী হিসাবে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যারা এই অপরাধের সাথে জড়িত তাদের সবাইকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে৷''
মারেইড ম্যাগুয়ার বলেন, ‘‘আমরা সবাই মানব পরিবারের সদস্য৷ অং সান সুচি যখন গৃহবন্দি ছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী কার্যক্রমের জন্য আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম৷ তাই তাঁর এখন মনে রাখা উচিত, রোহিঙ্গাদেরও মানবিক অধিকার আছে৷ তাঁদের ওপর যে হত্যা নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়৷''
আন্তর্জাতিক আদালতে এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইরানের শিরিন এবাদি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক আদালতে এই বিচার কাজের জন্য দু'টি উপায় রয়েছে৷ একটি হচ্ছে, সেই দেশটি যদি আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য হয়ে থাকে তাহলে তাকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া যায়৷ দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তারা যদি এই সংস্থার সদস্য না হয় তাহলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে আন্তর্জাতিক আদালতে এদের বিচার সম্ভব৷''
সুদানের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দেশটি আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য ছিল না, কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপের কারণে সুদানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে৷''
শিরিন এবাদির কথায়, ‘‘মিয়ানমার সফরের জন্য আমরা ভিসার অ্যাপ্লাই করবো৷ তারা যদি আমাদের ভিসা না দেয় তাহলে সেটি মিয়ানমারের জন্য ভুল হবে৷''
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে এই তিন নোবেলজয়ী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন৷ নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরা বলেন, মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের হত্যা নির্যাতনের দায় নিতে হবে৷
এছাড়া তাঁরা রাখাইনের ঘটনাকে গণহত্যা হিসাবে বর্ণনা করে বলেন, ‘‘এরপরও বিশ্ব সম্প্রদায় কীভাবে নীরব রয়েছে, তাতে আমরা বিস্মিত৷''
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানান, ‘‘বাংলাদেশ মানবিক কারণে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে নিজ মাটিতে আশ্রয় দেয়ায় শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তাঁকে ‘কাইন্ড মাদার' হিসাবে অভিহিত করেন এই তিন নোবেলজয়ী৷'' নোবেল উইমেন'স ইনিশিয়েটিভ এবং নারীপক্ষ এই তিন নোবেল বিজয়ী নারীর বাংলাদেশ সফরের আয়োজন করে৷ এঁরা বিশ্বের কাছে রোহিঙ্গাদের কথা তুলে ধরবেন৷
প্রতিবেদনটি আপনার কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷