সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি
২৪ এপ্রিল ২০২৪সৌর শিল্পখাতের বাজার দখল করতে গোটা বিশ্বে বিশাল যুদ্ধ চলছে৷ এ ক্ষেত্রে সরকারি ভরতুকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷
টোনি নিকেশ অতীতে বেকারিতে রুটি তৈরি করতেন৷ কম সময়ে দীর্ঘ প্রশিক্ষণের কোর্স করে এখন তিনি পেশা বদলে সোলার পাওয়ার সিস্টেম বসান৷ এতে ভালো আয় হয়৷ অর্ডারেরও অভাব নেই৷
বহুকাল পর সোলার প্যানেলের দাম কমে গেছে৷ অনেক করের বোঝা দূর হয়েছে৷ যেমন ভ্যাট এবং বিদ্যুদের উপর আয়কর দিতে হচ্ছে না৷ নতুন ভবনের পরিকল্পনা সময়ে সৌরশক্তির বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত৷ নিকেশ মনে করেনস ‘‘আকাশছোঁয়া বিদ্যুতের মাশুলের কারণে মানুষ পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি চায়৷ তারা রিনিউয়েবেল এনার্জি ও সৌরশক্তি চায়, যে ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে৷ মানুষ কিনছে, ফলে এই প্রবণতা চলতেই থাকবে৷''
গত বছরে জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি সোলার সিস্টেম বসানো হয়েছে৷ ইতোমধ্যে সে দেশের বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় ১২ শতাংশ সৌরশক্তি জোগান দিচ্ছে৷
গ্রাহকরা সেই প্রবণতার ফলে উপকৃত হচ্ছেন বটে, কিন্তু একটা বিষয়ে দ্বন্দ্ব থেকে যাচ্ছে৷ প্রায় ৯০ শতাংশ সোলার প্যানেল চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছে৷ এত পরিমাণ সোলার প্যানেল চীন থেকে এলে জানতে হবে সেই পণ্য কতটা টেকসই৷ টিইউভি রাইনল্যান্ড পরীক্ষা করে দেখেছে, যে চীনের পণ্যগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ন্যূনতম প্রযুক্তিগত শর্ত পূরণ করে৷ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি লুকাস ইয়াকিশ বলেন, ‘‘প্যানেলগুলি দূর প্রাচ্যের কোনো দেশ, ইউরোপ বা অ্যামেরিকা মহাদেশ থেকে আসছে কিনা, তাতে কিছুই এসে যায় না৷''
চীনের কোম্পানিগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিয়ে জার্মানিতে হাতে গোনা যে কয়েকটি কোম্পানি সৌর প্যানেল উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে, মায়ার-বুয়র্গার সেগুলির অন্যতম৷
কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার ইয়খেন ফ্রিচের মতে, কারখানার সর্বাধুনিক প্রযুক্তিই সেই সাফল্যের কারণ৷ তবে সেই শিল্পখাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি মূল বিষয় নয়, বরং কোন দেশ সবচেয়ে বেশি ভরতুকি দেয়, সেটাই বিবেচ্য৷ এই মুহূর্তে চীনই তালিকার শীর্ষে রয়েছে৷ ফ্রিচে বলেন, ‘‘এর অর্থ, এশিয়া বা অন্য কোথাও এই কারখানার তুলনায় সস্তায় উৎপাদন করা সম্ভব নয়৷ ভরতুকি কৃত্রিমভাবে বাজার বিকৃত করে৷ ফলে আমরা অর্থনৈতিক মাপকাঠি অনুযায়ী তত ভালোভাবে বিনিয়োগ কার্যকর করতে পারি না৷''
মায়ার-বুয়র্গার কোম্পানি বাস্তবতার সেই পরিণতির ধাক্কায় জার্মানিতে একটি কারখানা বন্ধ করতে চাইছে৷ সেখানে ৫০০ কর্মী কাজ করেন৷ সেই কোম্পানিই আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ শতাংশ ভরতুকি পেয়ে নতুন এক উৎপাদন কেন্দ্র খুলছে৷ এর ফলে জার্মানিতে সোলার প্যানেল উৎপাদন আরো কমে যাবে৷
রেগেন্সবুর্গ শহরের এনেরিক্স কোম্পানি শুধুমাত্র জার্মানিতে তৈরি সোলার প্যানেল বসায়৷ সেই কোম্পানি চীনা পণ্য থেকে পুরোপুরি সরে আসতে চায়৷ দেশে তৈরি পণ্য ইনস্টলেশনের ক্ষেত্রে সরকারি ভরতুকি দেওয়া উচিত বলে এনেরিক্স মনে করে৷ কোম্পানির কর্ণধার পেটার ক্নুট মনে করেন, ‘‘আমরা দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে জার্মানিতে উৎপাদন করতে চাইলে আমাদের জার্মান পণ্য বিক্রিও করতে হবে৷ শুধু বাণিজ্য-ভিত্তিক দেশ হওয়া স্বল্পমেয়াদী ভিত্তির চিন্তাভাবনার পরিচয়৷ আমার মতে, শুধু বিদেশি পণ্যের উপর ভিত্তি করে জ্বালানির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনাও দূরদর্শীতার অভাবের পরিচয়৷''
তাহলে কী করা যেতে পারে? একদিকে রয়েছে চীনের বিশাল উৎপাদন ক্ষমতা ও ‘প্রাইস ডাম্পিং'৷ অন্যদিকে অ্যামেরিকাও করের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে কোম্পানিগুলিকে প্রলোভন দেখাচ্ছে৷ জার্মান সৌরশিল্প সংঘের কার্স্টেন ক্যোর্নিশ বলেন, ‘‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এবং সে ধরনের আরো বিচ্ছিন্নতাবাদী পদক্ষেপ আমাদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার যোগ্য কারখানা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে না৷ তার বদলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার যোগ্য ও অনেক বড় সোলার কারখানার স্টার্টআপ পর্যায়ে রাজনৈতিক সহায়তার প্রয়োজন৷''
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা জার্মান সরকারের কাছ থেকে করের অর্থ না পেলে ইউরোপীয় ও জার্মান সৌর শিল্পখাত অবশ্যই আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না৷ গোটা বিশ্বে সৌরশক্তির জন্য প্রতিযোগিতার পরবর্তী দৌড় শুরু হচ্ছে৷
কার্ল হারেনব্রক/এসবি