স্কুলে সুপেয় পানি পায় না, টয়লেটও পায় না ৩০ লাখ শিশু!
২৪ জুন ২০২২সরকারি স্কুল এবং মাদ্রাসার একাংশের কর্তৃপক্ষের দাবি অবশ্য ভিন্ন৷
জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতি পাঁচটি স্কুলের মধ্যে একটি স্কুলে নিরাপদ ও সুপেয় পানির ঘাটতি রয়েছে৷ যা মোট স্কুলের ১৯ শতাংশ৷ এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৮৫ লাখ শিশু৷ আর সাত শতাংশ স্কুলে পানি, স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্নতা সুবিধা একবারেই নেই৷ এর মানে হলো, দেশের ৩০ লাখ স্কুলগামী শিশুর জন্য তাদের স্কুলে নেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, ওয়াশরুম ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা৷
জরিপে আরো বলা হয়েছে, ৪০ শতাংশেরও বেশি স্কুলে মৌলিক স্যানিটেশন সুবিধার ঘাটতি রয়েছে৷ এর ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে এক কোটি ৯ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী৷ ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট নেই ৪৩ শতাংশ স্কুলে৷ সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার মতো মৌলিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ঘাটতিও রয়েছে ৪৪ শতাংশ স্কুলে৷
ইউএন এজেন্সিগুলো বলছে, এই পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া কঠিন করে তোলে৷ শিশুদের শিক্ষা সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য কোভিড মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের পথে অবশ্যই স্কুলগুলোকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সংক্রামক রোগগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার উপযোগী হয়ে উঠতে হবে৷ এর জন্য সবার আগে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করতে হবে৷
মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল সম্পর্কে জরিপে যা রয়েছে
মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, ‘‘সরকারের পরিকল্পনা আছে শতভাগ স্কুলে সুপেয় পানি, সেনিটেশন ব্যবস্থা ও ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা ওয়াশ রুম নিশ্চিত করা৷ নতুন যে স্কুল ভবন হবে, তার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশ হলো- ছেলে এবং মেয়েদের জন্য আলাদা ওয়াশ রুম রাখতেই হবে৷ আর পুরনো যে স্কুল ভবন আছে, সেখানেও আলাদা ওয়াশ রুম ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা এখনো এটা করতে পারিনি৷ কিছু পুরনো ভবন আছে, সেখানে এখনো করা সম্ভব হয়নি৷”
তার কথা, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আমাদের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনও আছে৷ আর তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা স্কুলগুলোর সঙ্গে এনজিওদেরও যুক্ত করেছি৷ কোভিডের সময় আমরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, হাত ধোয়াসহ আরো যেসব বিষয় বাধ্যতামূলক করেছি তা অব্যাহত আছে৷’’
অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম দাবি করেন, ‘‘এখন শিক্ষার্থীদের পুষ্টির দিকেও নজর দেয়া হয়েছে৷ ছাত্রীদের ফলিক অ্যাসিড দেয়া হচ্ছে৷ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আমরা এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার জন্য আলোচনা শুরু করেছি৷ আর বিশেষ করে কোভিড-১৯-এর কারণে আমরা স্বাস্থ্য সচতেনতামূলক কর্মসূচিগুলো জোরদার করেছি৷’’
দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও কলেজে ইউনিসেফের সহায়তায় সুনির্দিষ্ট কিছু স্কুল ও মাদ্রাসায় জেনারেশন ব্রেক থ্রু প্রকল্প চলছে৷ এই প্রকল্পের অধীনে তারা বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা পাচ্ছে৷ মেয়েদের জন্য স্কুলগুলোতে আলাদা স্বাস্থ্য কর্নার চালুর একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে জানান এই কর্মকর্তা৷ সেখানে স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ আরো প্রয়োজনীয় জিনিস থাকবে৷
সরকারি প্রাথমিকে শতভাগ স্বাস্থ্য সুরক্ষা!
তবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সুপেয় পানি, আলাদা ওয়াশ রুম এবং স্যানিটেশনের কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক দিলীপ কুমার বণিক৷ তিনি বলেন, ‘‘ইউনিসেফের প্রতিবেদন তো ইউনিসেফের৷ এটা তো বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবেদন না৷ আমাদের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে৷ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাথে আমাদের এমওইউ করা আছে৷ তাদের জন্য আমাদের সারা বছরই বরাদ্দ আছে৷ দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা ওয়াশ রুম করা৷ এটা সব স্কুলেই আছে৷ তাই এই প্রতিদেনটা আমাদের জন্য প্রযোজ্য না৷ অন্যদের জন্য হতে পারে৷ সারা দেশে কিছু বেসরকারি স্কুল আছে, কিন্ডার গার্টেন আছে, কওমি মাদ্রাসা আছে৷ তাদের ক্ষেত্রে এরকম হতে পারে৷’’
মাদ্রাসার অবস্থা
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে এম রুহুল আমিন জানান, দেশের এক হাজার ৮০০ মাদ্রাসায় নতুন ভবন হচ্ছে৷ এইসব ভবনে আলাদা ওয়াশ রুম, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা থাকতেই হবে৷ সেইভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে৷’’
তার কথা, ‘‘ইউনিসেফ যে হিসাব দিয়েছে সেটা সঠিক বলে মনে হয় না৷ আলীয়া মাদ্রাসা এবং এমপিওভুক্ত মাদ্রাসাগুলোতে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভালো৷ তবে এর বাইরেও কিছু মাদ্রাসা আছে, যা আমাদের অধীনে নয়৷ সেগুলোর অবস্থা খারাপ হতে পারে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘মাদ্রাসাগুলোতে জেনারেশন ব্রেক থ্রূসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় আরো কিছু স্বাস্থ্য সচেতনতার কার্যক্রম চালু আছে৷’’