1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হামলার কবলে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম

১৫ আগস্ট ২০২৪

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর ঢাকার অন্তত ৮টি টেলিভিশন চ্যানেল ও তিনটি পত্রিকা অফিসে হামলা, ভাঙচুর হয়।

https://p.dw.com/p/4jWX7
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের গেট
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে দুর্বৃত্তদের হামলায় অন্তত ২০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেনছবি: Kamol Das/DW

১৪ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলায় অন্তত ২০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন৷

৫ আগস্টের হামলার পর শুরু হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোতে পাল্টা দখলের প্রক্রিয়া। অনেক জায়গায় সাংবাদিকদের উপর হামলাও হয়েছে

সর্বশেষ বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ২০ জন সাংবাদিক আহত হন। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা বৃহস্পতিবার বিকেলে ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বুধবার সন্ধ্যায় একদল দুর্বৃত্ত হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের মারধরও করে তারা। তারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষসহ অনেকগুলো কক্ষ ভাঙচুর ও তছনছ করে। এরা মূলত ভূঁইফোড় সাংবাদিক। প্রেসক্লাবে সদস্যপদের একটা নিয়ম আছে। তারা সেটা মানে না। এই সাংবাদিকদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের লোকজনও ছিল। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক বাদী হয়ে একটা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। মামলায় ২০ জনকে আসামি করা হচ্ছে।” 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হামলার নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী আমিনুল ইসলাম ও সাংবাদিক সাইফুল ইসলামসহ ৩০ থেকে ৪০ জন। তবে রাজনৈতিক দলটির পক্ষ থেকে এই হামলায় তাদের কারো জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রেসক্লাব কমিটির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা মামলা করতে চেয়েছে। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি, মামলা করলে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এই ধরনের অপকর্মে যে-ই জড়িত থাকুক না কেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।”

সাংবাদিকদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের লোকজনও ছিল: সালাহউদ্দিন মো. রেজা

এর আগে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তাদের সদস্যপদও বাতিল করা হয়। তাদের সঙ্গে কার্যনির্বাহী সদস্য শাহানাজ সিদ্দিকী সোমাকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে এসে তাদের দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি ব্যবস্থাপনা কমিটি বরাবরে পেশ করেন। তাদের দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করে জাতীয় প্রেসক্লাব ও সদস্যদের নিরাপত্তা এবং সাংবাদিক সমাজের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে ফরিদা ইয়াসমিন, শ্যামল দত্ত এবং শাহনাজ সিদ্দিকী সোমাকে ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানসহ গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ১৩ (ক) ও ৩৪ মোতাবেক তাদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়। ক্লাব গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ১৪ এর খ(১) (৩) ও (৪) অনুযায়ী সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসান হাফিজ সভাপতি এবং যুগ্ম সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সাংবাদিকদের একটি তালিকা প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বাকের মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সমন্বয়কদের পক্ষে সাংবাদিকদের কোনো তালিকা করা হয়নি। কেউ এমন তালিকা দিয়ে থাকলে সেটা তার ব্যক্তিগত হতে পারে। আমরা কোনো সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকের ব্যাপারে কোথাও কোনো অভিযোগ করিনি। আমরা সমন্বয়করা বসে এ ব্যাপারে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবো। এ ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে একটা বিবৃতিও দেওয়া হবে।” প্রসঙ্গত, প্রেসক্লাবে জমা দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সেই তালিকায় ৫১ জন সাংবাদিকের নাম রয়েছে।

ক্লাব কর্তৃপক্ষের এই ধরনের সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক বলে আখ্যায়িত করে বিবৃতি দিয়েছেন ফরিদা ইয়াসমিন ও শ্যামল দত্ত। বহিস্কারের কারণ জানতে চাইলে শাহানাজ সিদ্দিকী সোমা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সরকার পরিবর্তনের পর ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি সভা ডাকা হয়। সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে ২০১৪ সালে সদস্যপদ পাওয়ার পর বাদ যাওয়া ৪০ জনের একটি তালিকা দিয়ে সেখানে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। আমি সেটাতে আপত্তি করেছি। পাশাপাশি প্রেসক্লাব থেকে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি নামানোর বিষয়ে জানতে চেয়েছি। যেহেতু সরকার নেই, ফলে শেখ হাসিনার ছবি নামাতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত তো পরিবর্তন হয়নি, ফলে বঙ্গবন্ধুর ছবি কেন নামানো হয়েছে সেটাও জানতে চেয়েছি। পরে আমি মিটিং বয়কট করে চলে আসি। আমি তো আসলে একটি নির্দিষ্ট ফোরামের সদস্য হিসেবে নির্বাচন করে জিতেছি। এসব কারণে হয়ত তারা আমার সদস্যপদ বাতিল করে দিতে পারে বলে ধারণা করছি।”

এ ব্যাপারে জানতে প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান হাফিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বেশ কয়েকটি টেলিভিশন স্টেশনে হামলা হয়। ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয় টেলিভিশনগুলোতে। অনেকগুলো স্টেশনে হামলার সময় লুটপাটও চালানো হয়। হামলার শিকার হওয়া চ্যানেলগুলো হচ্ছে, ৭১ টিভি, সময় টিভি, এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ, গান বাংলা, এশিয়ান টিভি, বিজয় টিভি ও মাই টিভি। হামলার ঘটনায় ৬টি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। পরে দৃশ্যত সবগুলো চ্যানেলই চালু হয়েছে। তবে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কিছু পরিবর্তন এনেছে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো।

৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খানের তিনটি পত্রিকা অফিসেও হামলা চালানো হয়। পরে পত্রিকা তিনটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত শুক্রবার থেকে দৈনিক আমাদের নতুন সময়, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি ও ডেইলি আওয়ার টাইম পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে।

সংবাদমাধ্যমে আমরা খুব বেশি পরিবর্তন দেখছি না, শুধু রং বদলাতে দেখছি: সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী

আটটি টেলিভিশন চ্যানেল ও তিনটি পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তারও করেনি।

এর আগে কখনো একসঙ্গে এতগুলো সংবাদমাধ্যম অফিসে হামলার ঘটনা ঘটেনি হয়নি।

ছাত্রদের আন্দোলনের সময় অনেক সাংবাদিক লাঞ্ছিতও হয়েছেন। এসব হামলা, লাঞ্ছনার সম্ভাব্য কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশের) সভাপতি ওমর ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "দলবাজি আর সাংবাদিকতা এক জিনিস না। দলবাজ সাংবাদিক খুব বেশি না। আরেকটা বিষয় হলো, ১৯৯৩ সালে সাংবাদিক ইউনিয়ন দুইভাগ হয়ে গেছে। এরপর যারা সাংবাদিকতায় এসেছেন, তাদের কেউ এভাগে, কেউ ওইভাগে পড়ে গেছেন। এর আগেও তো সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তখন কিন্তু এমন হয়নি। এখন যেটা হচ্ছে, সেটা হওয়া উচিত না। এক সরকার যাবে, অন্য সরকার আসবে, সাংবাদিকরা তাদের মতো কাজ করবেন। আসলে ইউনিয়ন দুই ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে পরিস্থিতি এমন হয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে তো এমন হয়নি। শুধু সাংবাদিক না, সব জায়গাতেই তো এই পরিস্থিতি হয়েছে। সাংবাদিকরা তো সমাজের বাইরের কেউ না। অন্য পেশাগুলোর মতোই সাংবাদিকরা একইভাবে চলেছেন। এই পরিস্থিতির জন্য শুধু সাংবাদিকদের দায়ী করলে হবে না।”

এসব হামলার প্রভাব সংবাদমাধ্যমে কতটা ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী হতে পারে? এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে সরকার পরিবর্তন হলো, সেখানে সংবাদমাধ্যমে আমরা খুব বেশি পরিবর্তন দেখছি না। শুধু রং বদলাতে দেখছি। আগে যেখানে আওয়ামী লীগ ঘরানার সাংবাদিকরা দায়িত্বে ছিলেন, সেখানে বিএনপিপন্থি সাংবাদিকরা দায়িত্ব নিচ্ছেন। এটাই পরিবর্তন হচ্ছে। সংস্কারটা হচ্ছে না। এখন যদি কেউ সংস্কারের কথা বলেন, তাহলে বিএনপিপন্থি সাংবাদিকরা হয়ত বলছেন, এতদিন আপনারা সংস্কারের কথা কেন বলেননি? কিছু কিছু গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল পদে হয়ত কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে আমি মনে করি, গণমাধ্যমের সংস্কার ছাড়া অন্য কোনো সংস্কার কাজে আসবে না। আপনি যদি অন্য সব বিভাগে সংস্কার করেন, কিন্তু গণমাধ্যম তার থেকে বাদ থাকে, তাহলে কিন্তু দিনশেষে কোনো সংস্কারই টিকবে না।”

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য