পরিবেশবান্ধব চুলা
২৭ আগস্ট ২০১২বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় তিনশো কোটি মানুষের রান্না হয় মাটির চুলায়৷
প্রতি বছর গড়ে সারা বিশ্বের প্রায় বিশ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ নিশ্বাসের সঙ্গে ধোঁয়া গ্রহণ৷ এদের বেশিরভাগই পাঁচ বছরের কম বয়েসি শিশু৷ মাটির চুলা থেকে যে ধোঁয়া বের হয় তা থেকে শিশুরা নিউমোনিয়ার মতো রোগে ভোগে৷ এছাড়া চোখে ও গলায় দেখা দেয় নানান সমস্যা৷ আরও রয়েছে অসাবধানতাবশত চুলার উপর পড়ে যাওয়া বা পরনের কাপড়ে আগুন ধরে যাওয়া, ইত্যাদি নানা সমস্যা৷
মাটির চুলায় জ্বালানি হিসেবে সাধারণত কাঠ, কয়লা, গবাদি পশুর বিষ্ঠা বা ফসলের উচ্ছিষ্ট ব্যবহার করা হয়৷ এসব জোগাড় করাও একটা কষ্টকর ব্যাপার৷ তাছাড়া এতে সময়ও লাগে অনেক৷ কখনো কখনো তা বিপজ্জনকও৷ যেমন ডিআর কঙ্গোতে জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতি ঘন্টায় গড়ে একজন করে নারী ধর্ষণের শিকার হয় বলে জানা গেছে৷
এসব ছাড়াও রয়েছে পরিবেশের উপর প্রভাব৷ কাঠ সংগ্রহের জন্য গাছ কাটায় অনেক জায়গায় বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া চুলা থেকে যে কালো ধোঁয়া বের হয় সেটা বায়ু দূষণ করছে৷ আরও রয়েছে ধোঁয়ার কারণে ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়া৷
এই সব সমস্যা দূর করতে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি সংস্থা গড়ে ওঠে৷ যার নাম ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ক্লিন কুকস্টোভস'৷ জাতিসংঘ ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগ এটি৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার৷ তাঁর মতে, বিশ্বের যে সমস্যাগুলো সমাধানযোগ্য তার মধ্যে এটি একটি৷
অ্যালায়েন্সের লক্ষ্য, ২০২০ সালের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন পরিবেশবান্ধব চুলা বিতরণ৷ অনেক বিশেষজ্ঞ এই অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত৷ যেমন একদল রয়েছেন গবেষক, যাঁরা চুলার মান বজায় রাখতে কাজ করছেন৷ আরেকদল চুলা তৈরি করবেন৷ রয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার, যাদের কাজ ব্যবহারকারীদের কাছে এই চুলা জনপ্রিয় করে তোলা৷ আর এনজিও'দের কাজ চুলা বিতরণ৷ রয়েছেন অর্থবিনিয়োগকারী, যারা গরিব মানুষকে এই চুলা কিনতে সহায়তা করবেন৷
অ্যালায়েন্সের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জ্যাকব মোস বলেন, এমন চুলা তৈরির চেষ্টা চলছে যেটা কম জ্বালানি খরচ করবে এবং কম ধোঁয়া ছড়াবে৷
বিভিন্ন ধরণের চুলা তৈরির কথা জানান মোস৷ এর মধ্যে যেমন কাঠ পোড়ানো চুলা থাকবে৷ তেমনি থাকবে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস চুলা ও চারকোল ব্যবহৃত চুলা৷ এর কারণ, একেক দেশের মানুষ একেক ধরণের চুলা ব্যবহার করে অভ্যস্ত৷ ফলে মানুষ যেন পছন্দমতো চুলা ব্যবহার করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
কিন্তু এসব চুলার দাম কেমন হবে সেটা একটা বিবেচ্য বিষয়৷ কেননা এর ব্যবহারকারীরা বেশিরভাগই দরিদ্র৷ তাই দামটা হতে হবে খুবই কম৷ অ্যালায়েন্স সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে৷ তবে তাদের আশা, ক্ষুদ্র ঋণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই চুলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে গরিব মানুষকে সহায়তা করবে৷
জেডএইচ / আরআই (এএফপি)