1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

পশ্চিমবঙ্গে ভুয়া ডাক্তারের ছড়াছড়ি

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৯ জুন ২০১৭

গ্রাম-মফস্বলের ডাক্তারখানা থেকে শহরের নামি বেসরকারি হাসপাতাল– একের পর এক ‘ভুয়া' ডাক্তারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে৷

https://p.dw.com/p/2eO16
ছবি: DW

ওদের কেউ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, কেউ কবিরাজি, অথবা হেকিমি৷ কেউ আবার নিছকই বি কম পাস৷ অথচ এদের কেউ কেউ রীতিমতো সাইনবোর্ড লাগিয়ে চেম্বার খুলে পশার জমিয়ে বসেছেন, কেউ আবার যুক্ত হয়েছেন কোনও নামি বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে৷ এবং সেখানেই দিব্যি চিকিৎসা করে গেছেন এইসব জাল বা ভুয়া ডাক্তাররা৷ ওদের ভিজিটিং কার্ডে, প্রেসক্রিপশন প্যাডে, সাইনবোর্ডে নামের পাশে জুড়ে গেছে এমবিবিএস, এফআরসিপি থেকে শুরু করে যাবতীয় ভারী ভারী ডিগ্রি, যা অর্জনের যোগ্যতা এদের কেউ দেখাতে পারেননি৷ সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এই জালিয়াত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে রাজ্য পুলিশের সিআইডি, তার সামনে দাঁড়িয়ে এদের এক একজনের দেওয়া কৈফিয়ৎ রীতিমতো হাস্যকর৷

MedicalCouncil - MP3-Stereo

কেউ নিজের নামের পাশে বসানো ডিগ্রিটিও ভালো করে মনে করে বলে উঠতে পারেননি, কেউ জবাব দিতে পারেননি যে ন্যুনতম ডিগ্রিটি তাদের আছে বলে দাবি করছেন, সেটি কোন মেডিকেল কলেজ থেকে নেওয়া৷ একে একে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এই ভুয়ো চিকিৎসকদের, যে সংখ্যাটা ইতিমধ্যেই সাড়ে পাঁচশ' ছাড়িয়ে গেছে৷

রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের যিনি রেজিস্ট্রার, সেই মানস চক্রবর্তীকে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল– রাজ্যজুড়ে এত জাল ডাক্তারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে কাউন্সিলের কী করণীয়? মানসবাবু স্পষ্টই জানালেন, ভুয়ো চিকিৎসকদের ওপর নজরদারির কোনও পদ্ধতি কাউন্সিলের নেই৷ তাঁরা চিকিৎসকদের নথিভুক্তিকরণ করেন এবং কোনও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি বা দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ নথিভুক্ত হলে, সেই অভিযোগ প্রমাণ হলে দোষী ডাক্তারের সদস্যপদ কাউন্সিল বরখাস্ত করতে পারে, বাতিল হতে পারে তাঁর রেজিস্ট্রেশন৷ তবে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশে পদক্ষেপ করেছে মেডিকেল কাউন্সিল৷ বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে অসাধু চিকিৎসকদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছে৷

একই কথা বললেন রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের সভাপতি এবং রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্মল মাজি৷ সাধারণ মানুষের কাছে তিনি আবেদন জানালেন, নিজেদের এলাকায় সন্দেহজনক কোনও ডাক্তারের খোঁজ পেলেই স্থানীয় থানায় জানাতে, প্রশাসনের কাছে খবর পৌঁছাতে৷ নির্মল মাজি দাবি করেছেন, কোনও সরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে একজনও ভুয়া চিকিৎসকের খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ কারণ, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন আবশ্যিক৷ ভবিষ্যতে বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রেও নিয়োগের ক্ষেত্রে এই একই সাবধানতা নেওয়া উচিত বলে নির্মল মাজি মনে করেন৷

এদিকে আরও এক বিচিত্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে এই জাল ডাক্তার ধরা পড়ার ঘটনায়৷ কেউ কেউ বলেছেন, ডিগ্রি জাল ধরে নেওয়া যায় তাঁর চিকিৎসা করার যোগ্যতা বা দক্ষতা নেই, তার পরেও অনেক ভুয়ো ডাক্তার ধরা না পড়া পর্যন্ত নির্বিবাদে চিকিৎসা করে গেছেন৷ তাদের হাতে কোনও রোগী মারা যায়নি বা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ওঠেনি কারও বিরুদ্ধে৷ সেক্ষেত্রে এই জাল ডাক্তারদের রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা, বা তাদের পুরস্কৃত করা উচিত কি না, সেটা স্বাস্থ্য দপ্তর ভেবে দেখুক৷ বলা বাহুল্য, নেহাতই ব্যাঙ্গ করে, খোঁচা মারার জন্যে করা এ মন্তব্য৷ কিন্তু একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল দশার দিকেও ইঙ্গিত করছে এই কটাক্ষ, যেখানে ডিগ্রিধারী বড় চিকিৎসকদের দক্ষ, যোগ্য হাতেও রোগীমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, স্রেফ অবহেলা আর চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য