1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোবাইল থেকে রাজস্ব বাড়ানো কঠিন

সমীর কুমার দে ঢাকা
১২ জুন ২০২০

বাজেটে মোবাইল সেবার উপর অতিরিক্ত পাঁচ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে বছরে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ সরকার৷ পুরো টাকাটাই মানুষের পকেট থেকে যাবে৷ সরকারের এই চেষ্টা কি সফল হবে?

https://p.dw.com/p/3dgRd
বাজেটে মোবাইল সেবার উপর অতিরিক্ত ৫ শতাংশ শুল্ক
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman

মোবাইল অপারেটর রবি’র চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারের এই চেষ্টা সফল না-ও হতে পারে৷ উল্টো রাজস্ব কমে যেতে পারে৷ কারণ, মানুষ যদি আতঙ্কিত হয় যে, কথা বললে বেশি টাকা কাটবে তাহলে সে অবশ্যই কথা বলা কমিয়ে দিতে পারে৷ আমাদের আগের অভিজ্ঞতাগুলো এমনই৷ আগে সে ১০০ টাকা ব্যবহার করলেও এখন এই পরিস্থিতিতে টাকার অংশ কমেও যেতে পারে৷ আর যদি ১০০ টাকা ব্যবহার করেও তাতে তো সরকারের রাজস্ব বাড়বে না৷’’

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল৷ সেখানে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর গ্রাহক পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে৷ সব মিলিয়ে আগে যেটা ছিল ২৭ দশমিক ২৫ শতাংশ৷ এখন ৫ শতাংশ বৃদ্ধির পর সেটা দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ৷ এই ট্যাক্স বৃদ্ধির ফলে ১০০ টাকা রিচার্জে সরকারের কাছে কর হিসেবে যাবে ২৫ টাকার মতো৷ এতদিন তা ২২ টাকার মতো ছিল৷ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে এটা কার্যকর হয়ে গেছে৷

সাহেদ আলম

মোবাইল অপারেটররা হিসেব দিয়ে বলেছে, মানুষের মোবাইল ব্যবহার যদি একই থাকে তাহলে বছরে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব পাবে সরকার৷ তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের উপর৷

এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পক্ষে নন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘অপারেটররা যে হিসাব দিচ্ছে সেটা অমূলক নয়৷ বৃদ্ধি তো দূরে থাক, রাজস্ব কমেও যেতে পারে৷ করোনাকালীন এই সময়ে আমাদের পথ দেখিয়েছে ইন্টারনেট৷ ফলে আমি কখনোই চাই না ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি হোক৷ অর্থমন্ত্রী হয়তো তার কোনো পরিকল্পনা থেকে এটা করেছেন৷ টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আমি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলবো৷ তারপরও জাতীয় সংসদে তো আলোচনা হবেই৷’’ 

বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোবাইল সেবার ওপর ১ শতাংশ সারসার্জ আরোপ করা হয়৷ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আরোপ হয় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক৷ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়৷ আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক আরো বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে৷ ২০২০-২১ অর্থবছরে এটা আরো ৫ শতাংশ বাড়ানো হলো৷

শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি'র হিসেবে, তাদের মোট রাজস্ব আয়ের ৫৩ থেকে ৫৬ শতাংশই সরকারের কোষাগারে বিভিন্ন কর ও ফি বা মাশুল হিসেবে চলে যায়৷ সাহেদ আলমের মতে, আগে শতকরা ২৮ টাকা তারা অপারেশন পরিচালনার জন্য খরচ করতেন৷ এখন ২৫ টাকা দিয়ে সেটা করতে হবে৷

টেলিকম বিশেষজ্ঞ ও একাধিক মোবাইল অপারেটরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা মেহবুব চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারের রাজস্বের দরকার আছে৷ করোনাকালীন সময়ে অতিরিক্ত অর্থের সংস্থান করতে হবে৷ কিন্তু হুট করেই এখানে শুল্ক বাড়ানো উচিত হয়নি৷ প্রয়োজনে এই সেক্টরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল৷ এখন মানুষ যদি ব্যবহার কমিয়ে দেয় তাহলে তো রাজস্ব কমে যেতে পারে৷ আর আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, তাহলে এখানে ইন্টারনেটের উপর অতিরিক্ত শুল্ক কেন৷ শুধু বড় অফিস নয়, ছোট-খাট অফিসগুলোও ইন্টারনেটের উপর ভিত্তি করে কার্যক্রম চলাচ্ছে৷ তাদের অপারেশন খরচ তো বাড়বে৷’’

মোস্তাফা জব্বারও

মোবাইল সেবায় অতিরিক্ত শুল্কের খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ আলোচিত হচ্ছে৷ অনেকেই এটা নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করেছেন৷ আবু রাহাত খান নামে একজন শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘‘আমরা আবার ডাক বিভাগের চিঠির দিকে ফিরে যাই৷ কারণ, মোবাইলের পেছনে তো এত টাকা খরচ করা সম্ভব না৷’’ ওসমান গনি নামে একজন লিখেছেন, ‘‘চাইলেই পাবলিকের পকেট থেকে টাকা নেওয়া যায়, তাই এখানে প্রতি বছর ট্যাক্স বাড়ানো হয়৷’’ রুবিনা খনম নামে একজন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা লিখেছেন, ‘‘একে তো করোনার জ্বালায় অতিষ্ঠ, তার উপর মোবাইলের খরচ বৃদ্ধি৷ পাবলিক যাবে কোথায়?’’ এমন অসংখ্য স্ট্যাটাস ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ সাধারণ মানুষ তাদের বিরক্তির কথা ফেসবুকে লিখছেন৷

গ্রামীণফোনের হেড অব পাবলিক অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বলেছেন, ‘‘এই অতিরিক্ত শুল্ক গ্রাহকদেরই বহন করতে হবে৷’’ গ্রাহকদের স্বার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘‘এটা অবশ্যই ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অন্তরায়৷’’

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোও এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে৷ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল ওয়াহেদ তমাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘করোনার সময়ে বাংলাদেশে অধিকাংশ কার্যক্রম ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে৷ সরকারও মানুষকে ঘরে থেকে অনলাইনে সবকিছু করতে উৎসাহিত করছে৷ অথচ ইন্টারনেটের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হচ্ছে৷ এই সিদ্ধান্ত দ্রুত গতিতে বিকাশ হওয়া অনলাইন মার্কেটের গতি শ্লথ করে দেবে৷ অনেকে ভয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করেও দিতে পারেন৷ যা ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে বাধার সৃষ্টি করতে পারে৷’’

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য