অর্থমন্ত্রী টাকার উৎস জানেন না
১২ জুন ২০২০শুক্রবার অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থ যা-ই লাগবে তা জোগাড় করা হবে৷ ‘‘মানুষকে বাঁচাতে হবে, কমর্সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে৷ গ্রামের অর্থনীতিসহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করতে হবে৷ অর্থ যাই লাগবে সেটা জোগাড় করা হবে৷’’
করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী, এর ৬৬ শতাংশ অর্থ রাজস্ব আয় থেকে আসবে, যা অবাস্তব ঠেকেছে অনেক অর্থনীতিবিদের কাছে৷
আগে ব্যয়, পরে আয়
করোনার প্রকোপ শুরু হবার পর থেকে দেশের আমদানি, রপ্তানিসহ সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে৷ মহামারি কেটে গেলেও এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব থাকবে অনেকদিন, এমনটিই বলে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা৷ এমনকি রাজস্ব বোর্ড বিদায়ী অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম রাজস্ব আদায় করতে পেরেছে৷ অথচ বাজেটে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এবার বাড়ছে ৯.৮১ ভাগ৷
প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘মানুষ রক্ষার বাজেট’ বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী৷ ‘‘আমরা প্রথমে টাকা খরচ করবো; পরে আয় করবো৷ আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে৷ তারপর টাকা জোগাড় করবো,’’ বলেন তিনি৷
এছাড়া অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৮.২% হবে বলে যে লক্ষ্য ঠিক করেছেন, তাকেও বর্তমান পরিস্থিতিতে অবাস্তব বলেছেন অর্থনীতিবিদরা৷
‘‘সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে অতীতের অর্জনের ধারাবাহিকতায় আমরা বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপির লক্ষ্য ধরেছি,’’ বলেন কামাল৷
ধনীরা কেন এত সুযোগ পাচ্ছেন?
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ বা সিপিডি৷ তারা হিসেব করে দেখিয়েছে, ব্যক্তি পর্যায়ে সরকার যে ছাড় দিয়েছে, তাতে নিম্নবিত্তের কর কমবে ৫ হাজার টাকা, অথচ ধনীদের কর কমবে সর্বোচ্চ দুই কোটি ৩৮ লাখ টাকা৷ তাদের প্রশ্ন, ধনীদের কর ছাড় দেয়া বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কেন দেয়া হয়েছে?
‘‘এ বছর একজন ঋণখেলাপি, একজন করখেলাপিকেও ছাড়া হবে না, কারণ, এখন সবাই ত্যাগ স্বীকার করছে—এ ধরনের একটি মনোভাব নিয়ে এগোনো যেতো,’’ বলেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান৷ ‘‘তার বদলে আমরা দেখলাম কালোটাকায় ছাড় দেয়ার মতো একটি পদক্ষেপ নেওয়া হলো৷’’
সিপিডি জানিয়েছে, স্বাধীনতার পরে সব সময় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ অথচ এ পর্যন্ত মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে৷ আর এর প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা হয়েছে সবশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে৷
‘‘যখন আয় বৈষম্য বাড়ছে, রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ যথেষ্ট নয়, তখন ধনীদের কর ছাড়ের যুক্তি কী?,’’ প্রশ্ন করেন সিপিডির আরেক গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান৷
ব্যবসায়ীর খুশি, তবে...
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটকে আশাব্যঞ্জক বলছেন ব্যবসায়ীরা৷ ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বা ডিসিসিআই বলছে, তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকার এ অর্থবছরে ব্যক্তি পর্যায়ের করসীমা কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন করহার পাঁচ ভাগ করার যে প্রস্তাব করেছে, তা সাধুবাদ পাবার যোগ্য৷
এছাড়া সর্বোচ্চ করহার ২৫ ভাগ প্রস্তাব করায়, করদাতাদের ওপর করের বোঝা কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করে তারা৷
বেসরকারি খাতের অনিবন্ধিত কোম্পানির করপোরেট কর কমানো, জরিমানা ছাড়া ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধের সময় বাড়ানো, নতুন শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া, ১% এআইটি কমানো, এসব ছাড়াও ভুয়া বিনিয়োগের ওপর ৫০% হারে কর আরোপের প্রস্তাব করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে তারা৷
তবে উৎসে কর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ানোয় রপ্তানিমুখী শিল্প চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে শঙ্কা জানিয়েছে তারা৷ লোকাল এলসির মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার ক্ষেত্রেও উৎসে দুই শতাংশ কর প্রয়োগ করা হয়েছে এবার যা আগে ছিল না৷ একে এক শতাংশ করার আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই৷
জেডএ/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, প্রথম আলো)
নয় মের ছবিঘরটি দেখুন...