মে-র বক্তব্য ‘উসকানিমূলক'?
১৩ মার্চ ২০১৮গত ৪ মার্চ সাবেক রুশ গোয়েন্দা সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়েকে সলসবেরি শহরের এক বেঞ্চিতে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়৷ এরপর তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ দু'জনের অবস্থা এখনও সংকটজনক, তবে স্থিতিশীল বলে জানা গেছে৷ তাঁদের শরীরে বিষ প্রবেশ করাতে ‘নোভিচক' নামে একটি ‘নার্ভ এজেন্ট' ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ উল্লেখ্য, নার্ভ এজেন্ট হচ্ছে এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাছে বার্তা পাঠানোর কাজ ব্যহত করে৷
৬৬ বছর বয়সি সের্গেই স্ক্রিপাল রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্নেল ছিলেন৷ পরে তাঁর বিরুদ্ধে ব্রিটেনের এম১৬ গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে রুশ গোয়েন্দা এজেন্টদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ এরপর ২০১০ সালে লন্ডন ও মস্কোর মধ্যে গোয়েন্দা বিনিময় চুক্তির আওতায় সের্গেই স্ক্রিপাল ব্রিটেনে গিয়েছিলেন৷
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সোমবার সংসদে বলেন, হয় রাশিয়ার সরকার এই হামলার নির্দেশ দিয়েছে, নয়ত রাশিয়ার তৈরি নোভিচক নার্ভ এজেন্টের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে নোভিচক কর্মসূচি সম্পর্কে ‘অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অফ কেমিকেল উইপনস' বা ওপিসিডাব্লিউ-র কাছে ব্যাখ্যা দিতে মস্কোকে সময়ও বেঁধে দিয়েছেন তিনি৷ এই সময়ের মধ্যে ‘বিশ্বাসযোগ্য উত্তর' পাওয়া না গেলে ব্রিটিশ সংসদে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানান টেরেসা মে৷ ‘‘আমাদের মাটিতে নিরীহ মানুষকে হত্যা চেষ্টার মতো এমন নির্লজ্জ হামলা আমরা সহ্য করবো না৷ রাশিয়ার সঙ্গে সাধারণ সম্পর্ক রাখার প্রশ্ন উঠতে পারে না,'' বলে মন্তব্য করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷
মে-র এমন বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক' বলে আখ্যায়িত করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা৷ ‘‘এটি ব্রিটিশ সংসদে একটি সার্কাস শো,'' বলেন তিনি৷
এদিকে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ব্রিটিশ গণমাধ্যম ও রাজনীতিকরা এই হামলার বিষয়টিকে ব্যবহার করে ফুটবল বিশ্বকাপের আগে রাশিয়ার সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে চাইছে৷ একটি সৎ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে রাশিয়ার ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি ব্রিটেন ভুলতে পারছে না বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মঙ্গলবার বলেন, এই হামলার জন্য রাশিয়া দায়ী নয়৷
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷ তিনি জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েলের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ গাব্রিয়েল বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে যদি রাশিয়ার জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়, তাহলে সেটি একটি মারাত্মক ঘটনা হবে৷
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ মাক্রোঁ হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বলে মে’র কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে৷
ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রান্স টিমারসমানস ব্রিটিশ সরকার ও জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন৷
সদ্য ক্ষমতাচ্যুত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মঙ্গলবার সকালে যুক্তরাজ্যের তদন্ত ও হামলার পেছনে রাশিয়ার যুক্ত থাকার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন৷
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি মঙ্গলবার দিনের শেষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র সঙ্গে কথা বলবেন৷ ‘‘আমার মনে হয় এটা রাশিয়া হবে৷ প্রকৃত তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি রাশিয়া কিংবা অন্য কাউকে দায়ী করব,’’ সাবেক রুশ গোয়েন্দার উপর হামলা সম্পর্কে বলেন ট্রাম্প৷
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)