গাফিলতিতে আর কত প্রাণ যাবে নদীতে?
৪ মে ২০২১মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে বালুবাহী নৌযানের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার জন্য এখন নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ ও নৌপুলিশ পরস্পরকে দোষ দিচ্ছে৷ এমন ঘটনা বাংলাদেশের নদীগুলোতে অহরহ ঘটছে৷ গত ৪ এপ্রিল শীতলক্ষ্যায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবিতে প্রাণ হারান ৩৪ জন৷ একটা মাসও পার হয়নি এরই মধ্যে আবারও ২,৩,৫ বছরের শিশুসহ ২৬জন নিহত হলেন পদ্মায়৷ প্রায় প্রতিবছরই লঞ্চ ডুবিতে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন৷ আর প্রায় প্রতিবারই মৃত্যুর জন্য দায়ী কে তা নিয়ে চলে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করা৷
অনুমোদন ছাড়াই মাদারীপুর শিবচরের পথে নিয়মিত স্পিডবোট চলে এবং গোপনে যাত্রী তুলে পারাপার করা হয়৷
প্রথম কথা, করোনা লকডাউনে নৌচলাচল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও স্পিডবোটটি চালানো হয়েছে৷ দ্বিতীয় কথা, ছোট একটি স্পিডবোটে ৩১জন যাত্রী তোলা হয়েছে৷ এবং তৃতীয়ত, স্পিডবোটে সবসময় যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরার নিয়ম থাকলেও মাদারীপুরে শিবচরে, দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ জনের কারও পরনেই লাইফ জ্যাকেট ছিল না৷ এসব নিয়ম ভঙ্গের জন্য দায়ী কে? এবং এতগুলো জীবনের দায়ভার কার ওপর পড়ে?
বাংলাদেশের প্রণীত আইনে নৌযান দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে কয়েক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷ কিন্তু সেসব মানা হয় না৷ কর্তৃপক্ষের অনিয়মের কথা বলে কোনো লাভ নেই! এসব দুর্ঘটনার পর কটা দিন তা নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করা হয়, তারপর আবার সবকিছু ‘স্বাভাবিক’ হয়ে যায়৷ আর এটাই তো বাংলাদেশে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে!
তবে যে কোনো ভ্রমণে যাত্রীদের নিজেদেরও কিছু দায়-দায়িত্ব থাকে৷ আমরা কথা বলছি মানুষের জীবন নিয়ে৷ এই দুর্ঘটনায় শিশু মিম, তার মা-বাবা, ছোট দুই বোনকে হারিয়েছে আর সৌভাগ্যক্রমে সে বেচে গেছে৷ যে মেয়েটি কিনা বাবা-মায়ের হাত ধরে স্পিডবোটে করে দাদিকে দেখতে যাচ্ছিল৷ ওদের সবার লাইফ জ্যাকেট পরা থাকলে হয়ত পরিবারের চারজনকেই এভাবে হারাতে হতো না ছোট মেয়েটিকে৷ মিম কি কখনো ভেবেছিল কর্তৃপক্ষের অনিয়মের কারণে তার আপন ভুবন এভাবে ভেঙে পড়বে? জানা-অজানা নানা কারণে এমন অনেক মিমের আপনজনেরা এভাবেই হারিয়ে যায় বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, বুড়িগঙ্গা আর শীতলক্ষ্যার গভীরে৷ তাই বলা যেতে পারে জীবনটা যেহেতু যাত্রীদের, জীবন নিয়ে তাদেরই সবার আগে ভাবতে হবে৷ সাবধানের মার নেই!