1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘পরিবারের সদস্য মনে করলেই সমস্যা থাকে না'

১০ জুলাই ২০১৮

প্রায় প্রতিদিনই শোনা যায় গৃহকর্মী নির্যাতনের খবর৷ মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দা সাবিহা মুন্নী ডয়চে ভেলেকে  বলেছেন, গৃহকর্মীদের নিয়ে নিজের ভাবনা ও অভিজ্ঞতার কথা৷

https://p.dw.com/p/312mt
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan

ডয়চে ভেলে: ঘর সামলে চাকরি করছেন, নিশ্চয় কাজের মানুষের সহযোগিতা নিতে হয়?

সাবিহা মুন্নী: অবশ্যই৷ আমাকে যেহেতু দীর্ঘ সময় অফিসে থাকতে হয়, তাই কাজের মানুষের সহযোগিতা তো নিতেই হয়৷

আপনার বাসায় কতজন গৃহকর্মী আছেন? কতদিন ধরে আছেন তাঁরা?

ড্রাইভার বাদে একজন গৃহকর্মী আছে৷ সে আছে অন্তত পাঁচ বছর ধরে৷

এর আগে নিশ্চয় গৃহকর্মী বদল করেছেন?

হ্যাঁ করেছি৷

বর্তমানে যিনি আছেন তাঁকে আপনি কীভাবে পেয়েছেন?

ওকে আমি পেয়েছি মূলত আমার একজন পরিচিতের মাধ্যমে৷ যে কাজ করছে, সে আমাদের পাশের গ্রামের৷ পরিচিতের মাধ্যমে ওই গ্রাম থেকেই আমি তাকে এনেছি৷

এখন তাঁর বয়স কত?

এখন ওর বয়স ১৬/১৭ বছর৷ আমি ওকে খুব ছোটবেলায় এনেছি৷ তখন ওর বয়স ছিল ১০/১১ বছর৷ আমি নিজে ওকে একটু একটু করে গড়ে তুলেছি৷

সে নিশ্চয়ই কাজে কিছু ভুল করে?

তা তো অবশ্যই করে৷ করবেই৷ আর ও তো ছোট মানুষ৷ আমার মেয়েরা যেমন ভুল করে, আমি যেমন ভুল করি, সেভাবে ও ভুল করে৷ ভুল তো করবেই৷

Syeda Shabiha Afrug 26.06.18 - MP3-Stereo

সেটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

আমি সেটাকে স্বাভাবিকভাবেই নেই৷ কোনো ভুল করে ও যদি ভয়ও পেয়ে যায়, আমি সেটাকে ইজি করার চেষ্টা করি৷ ওকে বলি, ভুলটা তো আমারও হতে পারতো৷ এটা নিয়ে মন খারাপের কিছু নেই৷ ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ভুল না হয়, সেজন্য সাবধান করি৷ কাজটা ওকে ভালোভাবে দেখিয়ে দেই৷ এরপর ও ইজি হয়ে যায়৷

কোনো গৃহকর্মী কি আপনার জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়েছে?

আমি এদিক দিয়ে লাকি৷ এমন কখনও ঘটেনি৷ উলটো আমি তো দীর্ঘ দিন ধরে চাকরি করি৷ আমার বাসায় আগেও গৃহকর্মী ছিল৷ তাদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারা চলে গেছে৷ এখনও তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে৷ আমি অসুস্থ্ হলে এখনও তারা আমাকে দেখতে আসে৷ আমার মেয়েদের দেখতে আসে৷ ফোনে যোগাযোগ করে৷ ওদের সঙ্গে আমার এখনো খুব ভালো যোগাযোগ আছে৷

এখন যে গৃহকর্মী আছেন, তাঁর ব্যাপারে পুলিশকে কি কোনো তথ্য দিয়েছেন?

ফরম পূরণ করে পুলিশের কাছে দিয়ে রেখেছি৷ এ সংশ্লিষ্ট যেসব ফর্মালিটিজ আছে, তার সবকিছুই আমি করেছি৷

এখন যে গৃহকর্মী আছেন, তাঁকে আপনি কীভাবে ছুটি দেন?

ওর যখন ছুটির দরকার হয়, ওর মা আমাকে ফোন করে৷ আমি আগেই বলে রেখেছি, ওর ছুটি দরকার হলে যেন আমাকে ১০/১৫ দিন আগে জানায়৷ তখন আমি বিকল্প ব্যবস্থা করি৷ ৩/৪ মাস পর ও বাড়ি যায়৷ তখন আমি ওকে ১০/১৫ দিনের ছুটি একসঙ্গে দিই৷ ওর চাহিদা মতো ওকে ছুটি দেই এবং ও বাড়ি থেকে ঘুরে আসে৷

তিনি তো নিশ্চয়ই আপনার বাসায় থাকেন...

হ্যাঁ, আমার বাসায়ই থাকে৷

তাঁকে আপনি কোথায় থাকতে দেন ?

ওর জন্য আলাদা জায়গা আছে, ও ওখানেই থাকে৷

তাঁর বিনোদনের ব্যবস্থা আছে?

আমার ছোট মেয়ের সঙ্গে ও খেলতে যায়৷ কাজ শেষ করে ও টিভি দেখে৷ ওদের জন্য আলাদা টিভি আছে৷ কারণ, আমি যেটা দেখছি, ওরা সেটা না-ও পছন্দ করতে পারে৷ এ কারণে আমার মেয়েরা এবং ও একসঙ্গে টিভি দেখে৷ একটা টিভিতে আমরা দেখি, আরেকটাতে মেয়েরা এবং ও দেখে৷

তাঁর পছন্দের পোশাক কি কিনে দেন?

অবশ্যই ওর পছন্দের কাপড় কিনে দেই৷ বিশেষ করে ঈদের সময় আমি ওকে সঙ্গে করে মার্কেটে যাই৷ সেখানে ওর পছন্দমতো কাপড় কিনে দেই৷ অনেক সময় যদি বুঝি ও আমাকে বলতে দ্বিধাবোধ করছে, তখন ও আমার মেয়েদের মাধ্যমে ওর পছন্দ বলে৷ আমি নিজেও মেয়েদের কাছ থেকে ওর পছন্দের কথা জানার চেষ্টা করি৷ কারণ, ও আমাদের মেয়েদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ট৷ ওদের বয়সও কাছাকাছি৷ ও যেভাবে পছন্দ করে, আমি সেভাবেই ওকে পোশাক কিনে দেই৷

তিনি যখন বাড়িতে যান ,তখন তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু কিনে দেন?

ও যখন বাড়ি যায়, তখন ওর মায়ের জন্য আমি কিছু না কিছু কিনে দেই৷ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দেই৷ শাড়ি কিনে দেই৷ একবার মোবাইল ফোনও কিনে দিয়েছি৷

তিনি কি আপনার ওখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, নাকি গ্রামে ফিরে যেতে চায়?

আমার তো মনে হয়, ও এখানে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে৷ কারণ ওর একটা বড় বোন আছে৷ সে একবার জোর করে ওকে নিয়ে অন্য জায়গায় কাজে দিয়েছিল৷ ওই বাসা থেকে ও কৌশলে বেরিয়ে আমার বাসায় চলে আসে৷ আমাকে বলে, ও কাজ করলে এখানেই করবে৷ পরে ওর বোন-মা ওর সিদ্ধান্ত মেনে নেয়৷ এরপর থেকে ও আমার বাসাতেই থাকে৷

গৃহকর্মীর অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চয় আপনার জানা আছে?

হ্যাঁ, আছে৷

সেদিকে আপনি কতটা সচেতন?

আমি চেষ্টা করি৷ ঈদের সময় বোনাস দেয়া, ও অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ওর থাকার জায়গাটা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার৷ আসলে ওকে আমার পরিবারের সদস্যই মনে করি৷ আমি যা করি, তা ওর জন্য করি৷ ওকে আমরা আলাদাভাবে দেখি না৷

আপনার মেয়েরা যে তাঁর সঙ্গে মেশে, সেটা আপনি কীভাবে দেখেন?

আমি মোটেও বিরক্ত হই না৷ বরং আমি নিজে ওকে আমার মেয়েদের সঙ্গে খেলতে পাঠাই৷ আমি ওকে ছোটবেলা থেকে এনেছি তো! ওকে আমি অনেক কিছু নিজের মতো করে শিখিয়েছি৷ যেমন, একটু লেখাপড়া শিখিয়েছি৷ ও বাংলা পড়তে পারে৷ সুন্দর করে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারে৷ ইংরেজিতে ওর নাম লিখতে পারে৷ কিছু কথা ইংরেজিতে বলতেও পারে৷ কিভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়, সেগুলো ওকে শিখিয়েছি৷

গৃহকর্মী নির্যাতনের বিষয়ে আপনি কতটা সচেতন?

আমি আমার আশপাশের অনেক বাসায়ও এটা দেখি৷ আমার খুবই খারাপ লাগে৷ আমি বিষয়টাকে এভাবে দেখি, আমি নিজেও তো কোনো একটা জায়গায় চাকরি করি৷ ও যেভাবে আমার বাসায় কাজ করছে৷ আমারও তো দু'টো মেয়ে আছে৷ ও তো আমার মেয়েদের বয়সি৷ আসলে একটু সহানুভূতির চোখে দেখলেই হয়৷ ওকে পরিবারের সদস্য মনে করলেই আর কোনো সমস্যা থাকে না৷ ও যে ভুলটা করছে, সেটা তো আমার মেয়েরাও করতে পারে৷ তাহলে ওকে কেন নির্যাতন করতে হবে৷ ও গরিব বলেই তো এই বয়সে বাবা-মাকে ছেড়ে আমার বাসায় থাকছে, কাজ করছে৷ আসলে ভালোবাসলে অনেককিছুই স্বাভাবিক হয়ে যায়৷

অন্য গৃহকর্ত্রীর প্রতি আপনার পরামর্শ কী হবে?

আমি সবাইকে বলবো, ওদের সহানুভুতিশীল দৃষ্টিতে দেখার জন্য৷ মানবিক দৃষ্টিতে দেখার জন্য৷ আমি দেখেছি, গৃহকর্মীদের ঠিকমতো খাবার দেয় না৷ বাসী খাবার দেয়৷ এটা আমাকে খুবই কষ্ট দেয়৷ আমি মনে করি, ওদের চাহিদা ঠিকমতো পূরণ করলে কিন্তু একটা সময় ওদের চাহিদা কমে যায়৷ সেটা খাবার হোক বা অন্য যা কিছুই হোক না কেন৷

সৈয়দা সাবিহা মুন্নীর সঙ্গে আপনি একমত? মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান