ঢাকায় গণমিছিল, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
২ আগস্ট ২০২৪বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 'প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল' কর্মসূচির ডাকে সাড়া দিয়ে শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। জুমার নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে হাইকোর্ট এলাকা ঘুরে শাহবাগ পর্যন্ত মিছিল করেছে দিকে কয়েকশ মানুষ।
শাহবাগে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর মিছিল করে তারা প্রেস ক্লাবে যান। সেখানে প্রায় তিন হাজার মানুষের জমায়েত হয়।
প্রেস ক্লাবে কর্মসূচি শেষে বিশাল মিছিল নিয়ে শিক্ষা ভবনের সামনে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে রাজু ভাস্কর্য হয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন হাজারো বিক্ষোভকারী। এ সমাবেশ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবক, অধিকারকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। হাজারো মানুষের স্লোগানে শহীদ মিনার প্রাঙ্গন মুখরিত হয়ে আছে।
উত্তরায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ
শুক্রবার বিকেলে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন কলেজের সামনে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ।
সিলেটে ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশি বাধা
শুক্রবার বিকেলে নগরীর আখালিয়া এলাকায় ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করতে দেখা যায় বলেও জানিয়েছেন ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা।
হবিগঞ্জে পুলিশ-ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ
সিলেটের হবিগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ–ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছে। আজ শুক্রবার হবিগঞ্জ শহরের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যের বাড়ি ভাঙচুর ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
নরসিংদীতে শিক্ষার্থীদের গণমিছিলে হামলা
নরসিংদীতে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের' গণমিছিলে হামলা করেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা। নরসিংদী সদর উপজেলার কোর্ট রোড এলাকায় উপজেলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। তাদেরকে বিভিন্নস্থানে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
খুলনায় বিক্ষোভকারীদের মিছিলে পুলিশের টিয়ারশেল-লাঠিচার্জ
খুলনায় বিক্ষোভ করেছেন হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। সেসময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়েছে ও লাঠিচার্জ করেছে। ঘটনাস্থল থেকে দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা জানান, দুপুরে জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মিছিল নিয়ে শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। তবে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে পরে তারা মিছিল নিয়ে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল হয়ে গল্লামারির দিকে যায়। গল্লামারি ব্রিজ পার হয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যেতে থাকলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ। বাঁধার মুখে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সামনে এগিয়ে আবহাওয়া অফিস ও জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়।
বরিশালে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
বরিশালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারি ব্রজমোহন কলেজের সামনে বিএম কলেজ সড়ক অবরোধ করেছেন। এ সময় সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
চট্টগ্রামে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তায় আন্দোলনকারীরা
চট্টগ্রাম নগরের বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছেন আন্দোলনকারীরা। জুমার নামাজের পর নগরের আন্দরকিলা শাহি জামে মসজিদ থেকে মিছিল বের করে সেটি নিউমার্কেট হয়ে টাইগারপাস মোড়ে যায়। সেখানে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বৃষ্টি কিছুটা থামার পর নগরের ব্যস্ততম নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নেন হাজারো শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ন্যায়বিচারসহ সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন।
নাগরিক সমাজের বিক্ষোভ
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার যেসব তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তা দেশের মানুষ মানে না বলে মনে করে নাগরিক সমাজ। তারা বলছে, সরকারের তদন্তের প্রতি তাদের বিশ্বাস নেই। কোটা আন্দোলনে নিহত, আহত ও ধ্বংসযজ্ঞের তদন্ত হতে হবে জাতিসংঘের অধীন।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ-পদযাত্রা
রংপুরে বৃষ্টিতে ভিজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও বিক্ষোভ সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। সমাবেশে শিক্ষকেরা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিনা অপরাধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতিও সংহতি প্রকাশ করেন তারা।
বগুড়ার সাত মাথায় বিক্ষোভ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 'প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল' কর্মসূচির ডাকে সাড়া দিয়ে শুক্রবার দুপুরে বগুড়ার সাত রাস্তার মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন হাজারো শিক্ষার্থী। জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে সাত রাস্তার মোড়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। এসময় অনেক অভিভাবকরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজের সমাবেশ
চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমানোর নামে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের জন্য এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ৷ সকাল থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি উপেক্ষা করেই এই সমাবেশে যোগ দেন দৃশ্যশিল্পী, আলোকচিত্রশিল্পী, পারফরম্যান্সশিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি-লেখক-গবেষক-স্থপতি ও শিল্পসংগঠকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ৷ সমাবেশ শেষে প্রতিবাদী গান ও স্লোগান সহকারে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়৷ শিল্পীরা অংশ নেন দেয়াল-লিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচিতে৷ চলমান আন্দোলনে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগসহ গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজের অন্য দাবিগুলো হলো—আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার ও গণ মামলা বন্ধ করে অবিলম্বে আটককৃত ছাত্র-জনতাকে মুক্তি দেওয়া৷ কারফিউ তুলে নিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় গুন্ডাবাহিনী মুক্ত করা৷
ছাত্রহত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে: উদীচী
বৃষ্টিতে ভিজে গান, কবিতা আর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠী উদীচী। বক্তারা বলেছেন, কোটা সংস্কারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে অনাকাঙ্ক্ষিত বলপ্রয়োগের ঘটনা কখনোই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য কাম্য নয়। ছাত্র হত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়েছে অন্য কয়েকটি সংগঠন।
সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দের পরিচালনায় আয়োজিত এই সমাবেশে অংশ নিয়ে অন্যান্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরাও বিক্ষোভ করেন।
চিকিৎসকদের প্রতিবাদ সমাবেশ
শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে প্রতিবাদী সমাবেশ করেছেন চিকিৎসকদের একাংশ৷ ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার ডেইলি স্টার বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে আজ শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন চিকিৎসক, মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা৷ সর্বস্তরের চিকিৎসক, মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই সভার আয়োজন করা হয়৷ এতে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও অংশ নেন৷ সমাবেশ থেকে কোটা আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় বিচার দাবি করা হয়৷ সমাবেশ শেষে চিকিৎসক, মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা মিছিল করেন৷
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
রাজধানীর আফতাবনগর, উত্তরায় আজ শুক্রবার সকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল করেছে৷ বৃষ্টিতে ভিজে মিছিলে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়, প্রতিবাদ জানায়৷ বেলা সাড়ে ১১টার পরে আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেছে৷ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মিছিল নিয়ে তারা রামপুরা ব্রিজ পার হয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে আবার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে৷ এ সময় মিছিলে থাকা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর গলায় পরিচয়পত্র ছিল৷ ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সমাবেশে শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সংঘাতে হতাহতের ঘটনায় বিচার দাবি করে৷ এ সময় তারা গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেয়৷
ইসিবি চত্বরে বিক্ষোভ
ঢাকার মাটিকাটা এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে ইসিবি চত্বরে গিয়ে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক শ শিক্ষার্থী। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টার পর বিভিন্ন স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সেখানে যান।
উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে৷ এ সময় তাদের অনেকেই স্কুলের পোশাক পরেছিল৷বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আজ ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল' কর্মসূচি ঘোষণা করেছে৷
সারা দেশে ১১ হাজার গ্রেপ্তার
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান অভিযানে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় ১১ হাজার৷ এর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার দুপুর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত) গ্রেপ্তার করা হয় ২২২ জনকে৷
প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা ১৭ জুলাই থেকে দেশের মহানগর, জেলা ও থানা-পুলিশ সূত্র থেকে মামলা ও গ্রেপ্তারের তথ্য সংগ্রহ করছেন৷ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৫৭ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে৷
এদিকে, কারাগারে বসে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি পেয়েছেন দুই শিক্ষার্থী৷ তারা হলেন মো. ফাহিম পারভেজ ও মো. জাহিদ হোসেন৷ তারা বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে আছেন৷ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের করা মামলায় তারা গ্রেপ্তার হন৷
নিহত প্রায় ৭৮ শতাংশ মানুষের শরীরে প্রাণঘাতী গুলি
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ-সংঘাতে নিহত প্রায় ৭৮ শতাংশ মানুষের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল বলে জানিয়েছে প্রথম আলো৷ দৈনিক পত্রিকাটির এক অনুসন্ধান প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশির ভাগের গুলি লেগেছে মাথা, বুক, পিঠ ও পেটে৷
সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২১২ জন নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছে বলেও দাবি প্রথম আলোর৷ এর মধ্যে ১৭৫ জনের মৃত্যুর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৩৭ জনের শরীরে প্রাণঘাতী গুলি ও ২২ জনের শরীরে ছররা গুলির চিহ্ন ছিল৷ অন্যদের মধ্যে ১০ জনের শরীরে ছিল মারধর ও আঘাতের চিহ্ন৷ চারজনের মৃত্যু হয়েছে গাড়ি ও স্থাপনায় দেওয়া আগুনে পুড়ে৷ পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দুজনের৷
আঘাতের ধরন পাওয়া গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নথি পর্যালোচনা এবং ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১১টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যে৷ এ ছাড়া নিহতদের আঘাতের ধরন জানতে অনেকের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর চট্টগ্রাম, রংপুর, বগুড়া, সাভার, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, টাঙ্গাইল ও মাদারীপুর প্রতিনিধি৷
মোবাইল নেটওয়ার্কে বন্ধ ফেসবুক
বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে ঢুকতে পারছেন না বলে অভিযোগ৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি সংস্থা মোবাইল অপারেটরদের খুদে বার্তার মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে৷
ডয়েচে ভেলেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোবাইলে অপারেটর রবির হেড অফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স সাহেদ আলম৷ তিনি বলেন, ‘‘শুধু মোবাইল নেটওয়ার্কের ফেসবুক এবং টেলিগ্রাম অ্যাপ না চালানোর জন্য নির্দেশনা এসেছে৷কতদিনের জন্য বন্ধ করা হয়েছে সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি৷'' তবে ব্রডব্যান্ডের ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে, অর্থাৎ, ওয়াইফাই দিয়ে ফেসবুক এবং টেলিগ্রাম অ্যাপ চালানো যাচ্ছে৷
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার দৈনিক প্রথম আলো জানিয়েছে, মোবাইল নেটওয়ার্কে রাশিয়াভিত্তিক মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামও বন্ধ করা হয়েছে৷ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা শুরু হলে গত ১৭ জুলাই রাত থেকে ৩১ জুলাই দুপুর পর্যন্ত মেটার প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম বন্ধ ছিল৷ গত ৩১ জুলাই বেলা ২টার পর থেকে তা চালু হয়৷ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ দুপুর সোয়া ১২টার পর মোবাইল নেটওয়ার্কে মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্যাশ বন্ধ করা হয়৷ পাশাপাশি এই নেটওয়ার্কে টেলিগ্রামও বন্ধ করা হয়েছে৷
আন্দোলনের মধ্যে সরকার ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউবের কাছে কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ করেছিল৷ গতকাল প্রতিমন্ত্রী জানান, ১৬ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত ফেসবুক সরকারের অনুরোধের বিপরীতে ১৩ শতাংশ এবং ২৫ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ৭ শতাংশের বেশি আধেয় সরিয়েছে৷ ইউটিউব ১৭ থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত সরিয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ৷ টিকটক সরিয়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ৷
আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা স্বেচ্ছায় নয়: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরছয় সমন্বয়ক বলেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে থাকাকালে গত ২৮ জুলাই রাতে এক ভিডিও বার্তায় আন্দোলন প্রত্যাহারের যে ঘোষণা তারা দিয়েছিলেন, তা স্বেচ্ছায় দেননি৷ আজ শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে ছয় সমন্বয়ক এ কথা বলেছেন৷ বেলা ১১টা ২২ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও নুসরাত তাবাসসুম গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠান৷ মিনিট দশেক পর যোগাযোগ করা হলে সারজিস আলম ও আবু বাকের বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন৷
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ডিবির হেফাজত থেকে ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ তাদের ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়৷ পরিবারের কাছে ফেরার পর আজ তারা যৌথ বিবৃতি দিলেন৷ এতে তারা বলেন, ছাত্র-নাগরিক হত্যার বিচার ও আটক নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে৷
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ডিবি কার্যালয়ে তাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়৷ তাদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়৷ গণমাধ্যমে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ানো হয়৷ তাদের শিক্ষকেরা দেখা করতে এলে দেখা করতে দেওয়া হয়নি৷ অন্যায়ভাবে সমন্বয়কদের আটক, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ৩০ জুলাই রাত থেকে সমন্বয়ক নাহিদ, আসিফ ও আবু বাকের ডিবি কার্যালয়ে আটক অবস্থায় অনশন শুরু করেন৷ এ খবর জানামাত্র সারজিস, হাসনাত ও নুসরাতও অনশন শুরু করেন৷ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অনশনের কথা পরিবার ও গণমাধ্যমের কাছ থেকে গোপন করা হয়৷ ৩২ ঘণ্টার বেশি সময় অনশনের পর ডিবিপ্রধান ছয় সমন্বয়ককে মুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন৷ তখন অনশন ভাঙা হয়৷ ১ আগস্ট দুপুর দেড়টায় পরিবারের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়৷
এপিবি/এসিবি