1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঘুম কাড়ছে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট

৬ নভেম্বর ২০১৮

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো বর্ষীয়ান অভিনেতাও রেহাই পেলেন না ফেসবুকের ভুয়া অ্যাকাউন্টের খপ্পর থেকে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ভুয়া অ্যাকাউন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন রূপালি জগতের তারকারা৷

https://p.dw.com/p/37ihk
ARCHIV Frankreich Cannes Film Festival "Ghare-Baire" Schauspieler Soumitra Chatterjee
ছবি: AP

বলিউডের অভিনেত্রী আলিয়া ভাট একটি টক শো-তে এসে জানিয়েছিলেন, রনবীর কাপুর ইনস্টাগ্রামে তাঁর নিজের নামে নেই৷ অথচ নায়কের নামে ইনস্টাগ্রামে যে প্রোফাইলটি আছে, তার ফলোয়ার সংখ্যা ৬,১০০০০৷ সোশ্যাল মিডিয়ার রাজ্যে এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি৷ হলিউডের এমা স্টোন থেকে ড্যানিয়েল রাডক্লিফ বা বলিউডের কারিনা কাপুর খান সকলেরই ভুয়া অ্যাকাউন্টের ছড়াছড়ি৷ টলিউডের তারকারাও বাদ নেই৷ এমনকি ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ও কন্যারও ভুয়া অ্যাকউন্ট নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে৷ সম্প্রতি এই ভুয়া অ্যাকাউন্টের জন্যই পুলিশের দ্বারস্থ হলেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে পৌলমী বসু৷

‘ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে একজন টাকা চাইছে আর আপনি দিয়ে দিলেন, এটা হয় না’

প্রবীণ অভিনেতা সৌমিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই৷ তবু তাঁর নাম ও ছবি সমেত অ্যাকাউন্ট রয়েছে ফেসবুকে৷ সেখানে টিকটিকি নিধনের উপায় থেকে শুরু করে মিঠুন চক্রবর্তীকে ইঙ্গিত করেও পোস্ট দেওয়া হয়েছে৷ এসব দেখেই তাঁর মেয়ে পৌলমী বসু পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন৷ এই ঘটনা অবশ্য টলিপাড়ায় নতুন নয়৷ প্রায়ই তারকারা সাইবার ক্রাইমের দপ্তরে গিয়ে ভুয়া অ্যাকাউন্ট নিয়ে অভিযোগ জানান৷ ‘কুসুমদোলা', ‘বোঝে না সে বোঝে না' মেগাসিরিয়ালখ্যাত অভিনেত্রী মধুমিতা চক্রবর্তীর প্রায় খান তিরিশেক ভুয়া প্রোফাইল আছে৷ ২০১৬ সালে একটি ওয়েবসাইটে অভিনেত্রীর বিকৃত ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি লালবাজার সাইবার দপ্তরে অভিযোগ জানান৷ কিন্তু তারপরেও তাঁর ভুয়া অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমেনি৷ এমন ঘটনা খুঁজলে যে অনেকই মিলবে, সে নিয়ে সন্দেহ নেই৷ ‘ইচ্ছেনদী', ‘ফাগুন বউ' মেগার অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায় ২০১৭ সালে সাইবার অপরাধ বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিও সংগ্রহ করে ফেসবুকের মাধ্যমে পোস্ট করা হতো মহিলাদের আস্থা অর্জন করার জন্য৷ এর বিরুদ্ধে বিক্রম অভিযোগ দায়ের করার পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ডয়চে ভেলেকে বিক্রম বলেন, ‘‘এটা সত্যি চিন্তার বিষয়৷ শুধু নিজের জন্য নয়, ফেসবুক যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁদের সকলের কথা ভেবেই আমি অভিযোগ জানিয়েছি৷''   

কী উদ্দেশ্যে এমন ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা হয়? বিক্রম বলেন, ‘‘অনেক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সেলিব্রিটিদের নামে ভুয়া অ্যাকউন্ট খোলা হয়৷ ফ্রেন্ড হিসেবে অনেক মানুষ একত্রিত হলে সেটার সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা হয়৷ কারোর ক্ষতি করার জন্য অ্যাকউন্ট খোলা হলে সেটা অবশ্যই খারাপ ব্যাপার৷''

সাধারণ মানুষদের সতর্ক করতে তিনি বলেন, ‘‘ফেসবুকে যদি কেউ আপনার সঙ্গে কথা বলে, আপনি যখন জানেন না সেটা সত্যি না ভুয়া অ্যাকাউন্ট, তখন একটা দূরত্ব বজায় রাখাটা খুব জরুরি৷ তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে জড়িয়ে পড়ার কোনো মানে হয় না৷''  

‘কারোর ক্ষতি করার জন্য অ্যাকউন্ট খোলা হলে সেটা অবশ্যই খারাপ ব্যাপার'

তারকাদের ভুয়া অ্যাকাউন্ট কখনো কখনো কিছু অসাধু মানুষের চেষ্টায় সাধারণ মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমও হয়ে উঠছে৷ সেটা তাঁদের মাথাব্যথারও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ও ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে নারীদের সিনেমায় নামানোর প্রলোভন দেখানো হতো৷ তেমনই এক ফাঁদ পেতে এক নারীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করা হয় গত জুন মাসে৷ অথচ গত বছরই অভিনেতারা ভুয়া অ্যাকাউন্ট নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন৷ সিনেমা ও টেলি সিরিয়ালের ব্যস্ত অভিনেতা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জনসচেতনতার উপর জোর দিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে একজন টাকা চাইছে আর আপনি দিয়ে দিলেন, এটা হয় না৷ একজন ফেসবুকে বলছে, অভিনয় করতে চাইলে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা দিন৷ আপনি আমার ছবি দেখেই সেটা দিচ্ছেন, অভিনয় করার এত শখ! একশ্রেণির মানুষের হাতে টাকা আছে, তাই এটা হচ্ছে৷ অশিক্ষা এজন্য দায়ী৷''

এ ব্যাপারে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সতর্ক করা হলেও প্রতারণা চলছে৷ ভাস্করের মন্তব্য, ‘‘আমি ফেসবুকে জানিয়েছি, এটা আমার অ্যাকাউন্ট নয়৷ অমিতাভ বচ্চনচাইলেও কি আমরা টাকা দিয়ে দেবো? একবার যাচাই করব না?টাকা দেওয়ার আগে বুঝব না, ব্যাপারটা সত্যি না ভুয়া?'' নাম ভাঁড়িয়ে এসব চললেও ইমেজের ক্ষতি হচ্ছে না বলে মনে করেন ভাস্কর, তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাকে যাঁরা জানেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন৷ তবে যাঁরা টাকা দিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন, তাঁরা আমাকে ভুল বুঝছেন৷ আসলে অর্ধশিক্ষিত দেশে সবার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেটা অনেকেই জানে না৷''

রুপালি জগতের তারকারা আমজনতার কাছে কয়েক বছর আগেও দূরের গ্রহ ছিলেন৷ ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে তাঁরা দর্শকদের হাতের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন৷ কিন্তু ভুয়া প্রোফাইলের জন্য তাঁদের যে বদনাম হচ্ছে, সে কথা অনেকেই স্বীকার করছেন৷

‘অ্যাকাউন্ট দেখলেই বোঝা যায় কোনটা আসল বা কোনটা ভুয়া’

এককালের বাংলা ছবির খ্যাতনামা নায়ক অর্জুন চক্রবর্তীর ফেসবুকে দুটি অ্যাকাউন্ট আছে৷ সেখানে এই অভিনেতা পোস্ট করেন৷ একই সঙ্গে ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলোও সক্রিয়৷ অর্জুন বলেন, ‘‘অ্যাকাউন্ট দেখলেই বোঝা যায় কোনটা আসল বা কোনটা ভুয়ো৷ কিন্তু অনেকেই সেটা বুঝতে পারেন না৷ আমি দেখি নকল অ্যাকাউন্টে ক্রমশ বড় হচ্ছে ফ্রেন্ড সার্কেল৷ তাদের সঙ্গে লোকজন কথাবার্তাও চালিয়ে যাচ্ছে৷ সাইবার ক্রাইমকে একাধিকবার জানিয়েছি৷ আমি নিজে পোস্ট করেছি যে ওটা আমার অ্যাকউন্ট নয়, এরপর আর কী করব?'' 

ভুয়া অ্যাকাউন্টের এত রমরমা কেন? এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘আমাদের ছবি এখন সহজেই পাওয়া যায়৷ আমাদের ছবি ব্যবহার করে নারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে৷ নাম ভাঁড়িয়ে সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করে৷ কিন্তু এভাবে বেশিদিন চালানো যায় না৷ এটা একরকম মানসিক বিকৃতি৷''

অর্জুনের কথায় সহমত মনোবিদ ড. কামাল হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যা নই, তেমন সাজার ইচ্ছেকে তো মানসিক বিকৃতি বলাই যায়৷ এটা অনেকে মজা হিসেবে নেয়, অনেকে তা দেখে মজা পায়৷ কিন্তু আখেরে কোনো লাভ হয় না৷''

২০১৭ সালে ফেসবুক ১০০ কোটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিল৷ অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে ইনস্টাগ্রাম নয়া সুরক্ষাবিধি চালু করেছে৷ হাত গুটিয়ে বসে নেই টুইটারও৷ তা সত্বেও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া অ্যাকউন্টের রাজত্ব চলছে৷  

এতে কি তারকাদের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়? অর্জুন চক্রবর্তীর মতে এতে অভিনেতাদের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয় না৷ সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘অন্য কারোর মতো হয়ে বাঁচার কোনো মানেই নেই৷ খোলস নিয়ে বাঁচবেন না৷ আপনার মধ্যে যে ভালোটা আছে, আমার মধ্যে নেই, সেটাকে তুলে ধরুন৷''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য