1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘তিনটা ইস্যুতে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে’

১ ডিসেম্বর ২০২৩

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন নানা ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছে৷ এই চাপগুলো কী? কীভাবে এই চাপ থেকে উত্তরণ ঘটতে পারে?

https://p.dw.com/p/4ZezX
চট্টগ্রাম বন্দর৷
অর্থনীতি এখন অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে আছে বলে মনে করেন ড. আহসান এইচ মনসুর৷ছবি: Md Manik/ZUMA Wire/imago images

এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর৷

ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে দেখেন? এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী?

ড. আহসান এইচ মনসুর : অর্থনীতি এখন অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে আছে৷ একটা হল সামষ্টিক অর্থনীতি৷ অনেকদিন ধরে এখানে আমরা একটা ভালো অবস্থায় ছিলাম৷ এখন এটাও আমরা নষ্ট করেছি৷ আমাদের ব্যালান্স অব পেমেন্টের চাপ আছে, রিজার্ভের চাপ আছে আবার মূল্যস্ফীতির চাপও আছে৷ ফলে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি একটা অস্থির অবস্থায় আছে৷ দ্বিতীয়ত হলো, আমাদের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি৷ কোন ধরনের সংঘাত বা সহিংসতা ছাড়া যে নির্বাচন হবে সেটা এখনও নিশ্চিত নয়৷ পাশাপাশি বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্স এবং রপ্তানি অনেক কমে গেছে৷ আর তৃতীয়ত হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয়দের একটা চাপ আছে৷ সেটা শ্রমিক ইস্যুসহ অর্থনৈতিক ইস্যুও আছে৷ এই তিনটা ইস্যু একসঙ্গে হওয়াতে অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়েছে৷ 

‘অর্থনীতি এখন অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে আছে’

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?

অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিনিয়োগের পরিবেশ৷ বিনিয়োগের জন্য মানুষ চায় স্থিতিশীল একটা পরিবেশ৷ ফলে আমাদের বিনিয়োগ কার্যক্রমে একটা স্থবিরতা চলে এসেছে৷ যেটা আমাদের শ্রম বাজারে প্রভাব ফেলবে৷ দ্বিতীয়ত, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতি নিশ্চিত করতে হলে যে ধরনের নীতি নেওয়া প্রয়োজন, সেই নীতি নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন৷ সরকার এখন সবকিছু স্থবির করে রেখেছে নির্বাচন পর্যন্ত৷ ফলে এখন বড় কিছু হচ্ছে না৷ ছোট খাট নীতির হয়ত কিছু পরিবর্তন হচ্ছে৷

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বর্তমান দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক এবং সামনের দিনে তা আরো খারাপ হলে অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে বা এখনই এর কোনো প্রভাব আছে কীনা?

এখন পর্যন্ত আমি সরাসরি এর কোন প্রভাব দেখি না৷ এটা কিছু শঙ্কা তৈরি করছে৷ এর প্রভাব পড়তে পারে৷ আমরা জানি না, আমেরিকা কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে৷ ইউরোপীয়দের কাছে নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে তারা নির্বাচনের পর কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে সেটা আমরা জানি না৷ এখন তারা কী কোনো ব্যবস্থা নেবে? নাকি তারা বিষয়টি উপেক্ষা করবে৷ অতীতে এই ধরনের পরিস্থিতি কখনও হয়নি৷

বাংলাদেশের শ্রমিক সংঘাত এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতির ঘোষণা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, রপ্তানিখাতের জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করেন কী?

এইটা আরেকটা উদ্বেগের জায়গা তৈরি করেছে৷ আমাদের যে মজুরি নির্ধারণ সেখানে সরকারের একটা নীতিগত ভুল ছিল৷ এখানে শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আইএলও এর সঙ্গে কিছু ইস্যু রয়েছে যা এখন সমাধান হয়নি৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়৷ যেসব শ্রমিক খুন হয়েছেন তাদের বিষয়ে সঠিক তদন্ত হয়নি বলে মনে করছেন তারা৷ আলোচনার মাধ্যমে এটার সমাধান করাটা জরুরি ছিল৷

সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে৷ আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে এই ঋণকে কীভাবে দেখেন?

এটাকে দুইভাবে দেখা যায়৷ বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ১০০ বিলিয়ন হলেও এটা জিডিপির ২৫ শতাংশের মত৷ এটা যে খুব বেশি সেটা বলব না৷ আমাদের জিডিপির আকারের তুলনায় ট্যাক্স ৮ শতাংশেরও কম৷ এটা অনেক কম৷ ভারতে আমাদের দ্বিগুণেরও বেশি৷ সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে, সরকারের সামর্থ্য কিন্তু আরও বেশি৷ আরেকটা হল আমাদের যে ডলার ফ্যাক্টর, সেখানে প্রতিনিয়তই ডলারের দাম বাড়ছে৷

সামনের দিনে এসব ঋণের দায় পরিশোধ শুরু হবে, প্রতি বছর বড় অঙ্কের সুদ সরকারকে পরিশোধ করতে হবে৷ তার সক্ষমতা কতটা আছে? এই পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দিবে সরকার?

আমি মনে করি সক্ষমতা আমাদের আছে৷ তবে আমাদের রাজস্ব বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে মনোযোগ দিতে হবে৷ রাজস্বটাই হচ্ছে আমাদের সমস্যা৷ অভ্যন্তরীণ ও  বৈদেশিক ঋণের পরিমান আমাদের জিডিপির ৪০ শতাংশের মতো৷ ফলে ঋণের সাইজ অত বড় নয়৷ যদি আমরা দুটো কাজ করতে পারি, এক. রপ্তানিটা যদি একটু বাড়াতে পারি আর দুই. রেমিটেন্সটাকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে পারি অর্থাৎ টাকা পাচারটা যদি একটু কমাতে পারি তাহলে এটা কোন সমস্যা না৷ নির্বাচনের পর যদি একটা স্থিতিশীল অবস্থা আসে এবং ডলারের সরবরাহ যদি বাড়াতে পারি এবং অভ্যন্তরীণভাবে রাজস্ব বাড়াতে পারি তাহলে এগুলো কোন ইস্যু নয়৷

বাংলাদেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে৷ এটাকে কতটা উদ্বেগজনক মনে করেন?

আমি মনে করি ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখনও ১৯ বিলিয়নই আছে, বা ১৮ বিলিয়নের মতো৷ এটা উদ্বেগজনক৷ কারণ এটা যেখানে উঠেছিল সেখান থেকে অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে৷ দ্বিতীয় উদ্বেগের কারণে এটা এখনও নিম্নমুখী৷ সরকার রাজনৈতিক কারণে যে ধরনের নীতি নেওয়ার দরকার সেটা নিতে পারছে না৷ নির্বাচন পর্যন্ত যদি এটা ১৫ বিলিয়নের মধ্যে রাখতে পারি এবং পেমেন্ট যেগুলো জমে আছে সেগুলো যদি পুনঃ তফসিল করে এটাকে ম্যানেজ করতে পারি তাহলে হয়তো সমস্যা হবে না৷

নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের বিপাকে পড়ার শঙ্কা আছে কীনা?

আমরা তো সবাই চাই নির্বাচনটা সুষ্ঠু হোক, অংশগ্রহণমূলক হোক৷ একটা গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসুক৷ কিন্তু গত ৫০ বছরে আমরা পাইনি৷ এই সরকারের অধীনে যে দুটো নির্বাচন হয়েছে সেটা আন্তর্জাতিক মানের হয়নি৷ আমরা সবাই উদ্বিগ্ন যে, জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনা৷ নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে কিনা৷ মানুষ নির্বাচন কেন্দ্রে যাবে কিনা সেটা বড় প্রশ্ন৷ এই ইস্যুগুলো রয়ে গেছে৷ সরকারের থেকে এখন পর্যন্ত এমন কোন সদিচ্ছা আমরা দেখিনি, যেটার মাধ্যমে জনগণকে সেই নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে৷ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী করবে সেটা তাদের ব্যাপার৷ নির্বাচনকে তারা কতটুকু প্রাধান্য দেবে বা দেবে না সেটাও তাদের ব্যাপার৷ অতীতে তো দেয়নি, এবার তারা ভিন্ন পথে হাঁটবে কিনা সেটা তাদের ব্যাপার৷ সেটার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে৷ এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না৷

নির্বাচনের পর সার্বিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা দেখেন কিনা? নতুন যে সরকার আসবে তাদের জন্য কী ধরনের সংকট বা চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে?

নির্বাচনের পরে দুইটা শঙ্কা রয়ে গেছে৷ নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে অভ্যন্তরীণ কী প্রতিক্রিয়া হবে আমরা জানি না৷ বহির্বিশ্ব থেকে কী চাপ আসবে সেটাও আমরা জানি না৷ পাশাপাশি বেশ কিছু অর্থনৈতিক ইস্যু পুঞ্জিভূত হয়ে গেছে৷ সেগুলো এখনও সমাধান করা হয়নি৷ এগুলো সমাধান করতে হবে৷ যদি একটা প্রশ্নবিদ্ধ সরকার আসে তারা কি সেটা করতে পারবে?

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷