দেশে ফেরা নিয়ে বিভক্ত রোহিঙ্গারা
২৭ জানুয়ারি ২০১৮সেনাবাহিনীর নীপিড়নের কারণে গত বছরের আগস্টের শেষ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা৷ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরে যাওয়া শুরু হবে খুব শিগগিরই৷ কিন্তু অনেক রোহিঙ্গাই বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী স্বাভাবিকভাবে রোহিঙ্গাদের বাঁচতে দেবে না৷ তাই দেশে ফেরার প্রশ্নে তারা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন৷ এক পক্ষ যেতে আগ্রহী হলেও অন্য পক্ষ যেতে চাইছে না৷ এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘর্ষে দুই জন খুনের ঘটনাও ঘটেছে৷ ফলে উত্তেজনা বিরাজ করছে সেখানে৷ ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দেশি-বিদেশি অস্ত্রও৷
মিয়ানমার থেকে আসা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারকে যে শর্ত দিয়েছে সেই শর্তগুলো ওরা মানলে আমরা যেতে পারি৷ আর আমাদের ওখানে নিয়ে ক্যাম্পে কেন রাখা হবে? আমরা নিজেদের বাড়িতে যেতে চাই৷ আমাদের সবকিছু ফেরত দিতে হবে৷ এগুলো নিশ্চিত না করে আমাদের পাঠানো হলে আমরা খুবই বিপদে পড়বো৷ তাই অনেকে যেতে চাচ্ছে না৷''
গত ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে দুই দেশের (বাংলাদেশ-মিয়ানমার) রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়৷ ওই সিদ্ধান্তের আলোকে প্রথম পর্যায়ে হিন্দু রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হবে৷
দেশে ফেরা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা৷ টেকনাফের সাংবাদিক আব্দুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেকেই রাখাইনে ফেরত যেতে চাচ্ছেন না৷ তারা বলছেন, তাদের ভাই-বোন, মা-বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের কাছেই তারা আবার কীভাবে ফিরে যাবো৷ তাদের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করতে হবে৷ এই দাবিতে রোহিঙ্গারা এখন দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে৷ কেউ যেতে চাচ্ছে, আবার কেউ চাচ্ছে না৷ এ নিয়ে ক্যাম্পগুলোর মধ্যেই উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ আগের চেয়ে সেখানে দ্বিগুণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ উখিয়ায় ৫টি পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে৷ টেকনাফেও করা হচ্ছে৷ সব মিলিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গোয়েন্দা নজরদারিসহ নানা ধরনের তৎপরতা সেখানে চলছে৷''
প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠাতে সব ধরনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই সেখানে পাঠানো হবে৷ এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া বা অপপ্রচার চালানোর কিছু নেই৷
তবে বিশ্লেষকরাও বলছেন, রাখাইনে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় থাকাকালীন রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না৷ এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহেদুজ্জামান বলেন, ‘‘যে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে তাদের কাছেই এদের ফিরিয়ে দেয়া কোনভাবেই ঠিক হবে না৷ আগে রাখাইনকে বেসামরিকীকরণ করতে হবে৷ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ওই এলাকায় শান্তিরক্ষী নিয়োগ করতে হবে৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে দাঁড় করাতে হবে৷ তার আগে রোহিঙ্গাদের পাঠানো হলে তা হবে বাঘের মুখে ছেড়ে দেয়ার মতোই৷ আমি শুরু থেকেই বলছি, তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি এখানে প্রয়োজন৷ মিয়ানমার ওই এলাকায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাউকে যেতে দিচ্ছে না৷ তাহলে রোহিঙ্গারা সেখানে গিয়ে থাকবে কীভাবে? সেনাবাহিনীকে সেখান থেকে ফিরিয়ে নেয়ার পরই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত৷ এর আগে এটা করা হলে কার্যকর হবে না৷''
এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷