পুলিশি রাষ্ট্রই তো ভালো, কী বলেন?
২৬ মে ২০২০তারা আদর করে বুঝাবেন, না বুঝলে চোখ রাঙাবেন, তাতে কাজ না হলে গারদে রেখে দেবেন বা তার সঙ্গে অস্ত্র উদ্ধারে যাবেন৷
আমরাও মোটামুটিভাবে তাই চাই৷ কারণ, আমাদের চাওয়া এক্ষুণি পূরণ করতে হবে৷ তার ফলে বেল আর নোবেল সবক্ষেত্রেই পুলিশের ভূমিকাই উপসংহার৷ নোবেলের কথাই ধরা যাক৷
নোবেল কেমন গান করেন আমি জানি না৷ আমি কখনো শুনি নাই তাকে৷ রিয়েলিটি টিভি থেকে আসা নায়ক গায়কদের নিয়ে আমার আগ্রহ কম৷ এটা এক ধরনের পুরনো মানসিকতা বা একগুঁয়েমি ধরে নিতে পারেন৷ কিন্তু মোদ্দা এই যে, আমি নোবেলের গান শুনি নাই, শোনার আগ্রহও হয় নাই৷
সাংবাদিকতা করে জীবিকা নির্বাহ করি বলে কে কী ভাবছেন তার দিকে খেয়াল রাখতে হয় আমার৷ কয়েকদিন ধরেই দেখছি মাঈনুল আহসান নোবেলকে নিয়ে আমার ফেসবুক বন্ধুরা খুব উত্তেজিত৷ তার অপরাধের তালিকার দিকে নজর দেয়া যাক৷ তিনি নাকি লেজেন্ডদের শেখাবেন কীভাবে হিট গান করতে হয় এমন একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন৷ এতে করে আমাদের সবার লেজেন্ড অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে৷ তিনি ও ইউটিউবার তাহসিনেশন পরষ্পরকে আক্রমণ ও বিকৃতি করেছেন৷
নোবেলকে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক স্ট্যাটাস থেকে বিরত থাকতে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম বিভাগের এডিসি নাজমুল ইসলাম তার ফেসবুকে একটি সতর্কতামূলক স্ট্যাটাস দেন৷ কিন্তু নোবেলের আপত্তিকর স্ট্যাটাসগুলো রয়ে গেলে তা র্যাব ২ এর নজরে আসে৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনির জামান তাকে কার্যালয়ে ডেকে নেন৷ সেখানে যাওয়ার পরে তিনি তার এসব কাজের ভুল বুঝতে পারেন এবং ক্ষমা চেয়ে ভিডিও বার্তা দেন৷
এর আগেও র্যাব, পুলিশ, ডিবি এই ধরনের সমাজ সংস্কারমূলক কাজ করেছে৷ কারো ভিডিওতে আপত্তিকর কোনো কিছু থাকলে বা কেউ সমাজের প্রচলিত নিয়ম ভাঙলে তাকে ডেকে নিয়ে উপদেশ, নির্দেশ দিয়েছেন৷ যাদের উপদেশ দেওয়া হয় তারাও সঙ্গে সঙ্গে তার কৃতকর্মের ভুল বুঝতেও পারছে৷ আমাদের অনেকে খুশি হচ্ছি৷
র্যাব বা পুলিশরাই যে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের মাতবর আর পঞ্চায়েত হতে যাচ্ছেন, তাতে আমাদের কোনো সন্দেহ রাখা উচিত না৷ রাষ্ট্রকাঠামোর আইন ও বিচারের উপর আমাদের আস্থার অভাব বা অনাস্থা এর একটি কারণ৷ তার চেয়েও বড় কারণ হলো আমাদের নিজেদের বিচারের উপর আমাদের সাংঘাতিক আস্থা৷
আমরা এক ফেসবুককে আঙুলের আওতায় আনতে পেরে কাউকে জুতার মালা দেওয়ার প্রস্তাব করি, কাউকে বাস্তব অবাস্তব আরো নিষ্ঠুর শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাব করি৷ সমাজের শিক্ষিত মানুষ বলে যারা পরিচিত, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও দাবি করেন, অমুক অপরাধের একমাত্র শাস্তি হলো তাকে নিয়ে র্যাব বা পুলিশের অস্ত্র উদ্ধারে যাওয়া৷
করজোড় নিবেদন, কিছু ভালো না লাগলে তা বর্জন করুন৷ যার যার দায়িত্ব তার তারই তা পালন করা উচিত৷ বাঁশের কাজ বা বাঁশির কাজ আলাদা৷ আর যদি মনে করেন, পুলিশি রাষ্ট্রই ভালো তবে তাই হোক৷ নিজেরাও পুলিশ, জজ হোন আর না পারলে আমাদের কথা শোনার জন্য আমাদের হয়ে যথাবিহিত ব্যবস্থা করার জন্য র্যাব বা পুলিশ তো আছেই৷