1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে শ্রদ্ধা জানানো যায়

৬ মার্চ ২০২০

বিপুল উৎসাহের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার৷ ১৭ মার্চ শুরু হবে আনুষ্ঠানিক আয়োজন৷ এই উৎসব নিয়ে ডয়চে ভেলেকে নিজেদের ভাবনার কথা জানিয়েছেন পাঠকেরা৷

https://p.dw.com/p/3YzdF
১৭ মার্চ শুরু হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের আনুষ্ঠানিক আয়োজন৷

১৭ মার্চ শুরু হবে ‘মুজিববর্ষ'-এর বছরব্যাপী কর্মসূচি৷ গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এই আয়োজনের ক্ষণগণনা শুরু করেছে সরকার৷ তবে আয়োজনগুলো এখন পর্যন্ত সরকার আর আওয়ামী লীগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হন শেখ মুজিবুর রহমান৷ কিন্তু দলের গণ্ডি পেরিয়ে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন তিনি৷ স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে ভূষিত হন জাতির পিতায়৷ তাঁর জন্মশতবর্ষের আয়োজন তাই সর্বজনীন না হয়ে ওঠাকে অনাকাঙ্খিত বলে মনে করছেন অনেকে৷

ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় হাবিব ইসলাম নামের এক পাঠক লিখেছেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় ছিল সকলকে নিয়ে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে এসে সার্বজনীন শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যবস্থা করা৷ কিন্তু তাদের দল বঙ্গবন্ধুকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে তাকে ছোট করে তুলেছে৷''

কেউ কেউ মনে করেন বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আজকের আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক চেতনা থেকেও অনেক দূরে সরে এসেছে৷ মোহাম্মদ করিম লিখেছেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুকে সত্যিকার অর্থে যদি শ্রদ্ধা জানাতে চান, তার হাতে গড়া রাজনৈতিক দলটার প্রাচীন রূপ ফিরিয়ে আনুন৷ সাধারণ মানুষগুলির প্রাণের স্পন্দন এবং মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন৷ হারিয়ে যেতে বসা গণতন্ত্রটাকে বাঁচিয়ে রাখুন৷ তবেই তো বঙ্গবন্ধুর মর্যাদাটা বৃদ্ধি পাবে...৷''

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হন৷ ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে তিনি বলেন, ‘‘...কর্মচারীদের বলে দেবার চাই, একজনও ঘুস খাবেন না, ঘুসখোরদের আমি ক্ষমা করব না৷''

১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা সেনানিবাসে দেয়া এক বক্তৃতায় শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘এখনো ঘুসখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, মুনাফাখোরী বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে দিয়েছে৷ দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত আমি এদের অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি, চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনি৷ কিন্তু আর না৷''

বঙ্গবন্ধুর এমন বক্তব্য স্মরণ করে ডয়চে ভেলের পাঠকরা আন্তরিকতার সাথে দুর্নীতি দমনে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন৷ কাজী তাজউদ্দিন নামে একজন লিখেছেন, ‘‘তথাকথিত রাঘববোয়াল দুর্নীতিবাজদের সম্পদ ক্রোক করে ওদেরকে বন্দিশালায় পাঠানো হোক, তাহলে বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে৷''

মুজিববর্ষের আয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পরিকল্পনা করা হয়েছে তার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেয়ার কথা রয়েছে৷ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরি করে গিনেস বুকে অন্তর্ভুক্ত করার কর্মসূচিও রয়েছে৷ আগামী বছরের ১৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মুজিববর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে৷ এজন্য বাজেট ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা৷ অনেকে মনে করেন দেশের দরিদ্র্যদের জন্য এই অর্থ খরচ করা হলে তা হত বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সেরা উদ্যোগ৷ 

আল আমিন ফরহাদ লিখেছেন, ‘‘গরিব কৃষক এবং কুলি, মুজুরদের ও রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষের দিকে নজর দেওয়া উচিত৷ আরেকটা জিনিস হলো বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় রাস্তায় দেখা যায় অসংখ্য মানুষ অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকে৷ একটা কমিউনিটি তৈরি করে তাদেরকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া খুব দরকার৷ তাহলেই মুজিব শতবর্ষ হবে পরিপক্ক৷''

সাইফ তালুকদার লিখেছেন, ‘‘সারা বাংলায় পথশিশু ও ভূমিহীনদের থাকা খাওয়ার নিশ্চয়তার মাধ্যমে (বঙ্গবন্ধুকে) মনে করা যেতে পারে৷''

রাশেদ মাহমুদ লিমন মনে করেন, বিভিন্ন প্রচার, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থের অপচয় করছে সরকার৷ তাঁর মতে, সেই টাকা দিয়ে পথশিশু, এতিমদেরকে পুনর্বাসন করলে বঙ্গবন্ধুর আত্না শান্তি পেত৷ কেউ কেউ বস্তিবাসী ভূমিহীনদের স্বাবলম্বী করে তোলার কথাও বলেছেন৷

তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশই তাদের মহান নেতাদের জন্মজয়ন্তী জাঁকজমকের সাথে পালন করেছে৷ গত বছর ভারত মহাত্মা গান্ধীর দেড়শতম জন্মবার্ষিকী পালন করেছে দেশব্যাপী৷ ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা উদযাপন করেছে নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মশতবর্ষ৷ নতুন প্রজন্মের কাছে শেখ মুজিবকে তুলে ধরতেও তাঁর জন্মশতবর্ষ গুরুত্বের সঙ্গেই উদযাপন হওয়া উচিত বলে মনে করেন মোহাম্মদ চান মিয়া৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ঐ সময় দেশের স্বাধীনতার জন্য সাহসী না হতেন তবে দেশ আজ স্বাধীন হতো না৷ সাধারণ জনগণের জন্য দরকার ছিল সাহস যোগানো, আর তা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ আগামী প্রজন্ম যাতে পুরোপুরিভাবে জানতে পারে আসল ঘটনাদি, তাই বঙ্গবন্ধু শতবার্ষিকী জাঁকজমকভাবে পালন করা জরুরি৷''

তবে মুজিববর্ষ উদযাপনে এখন সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় ১৭ মার্চ মূল আয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অংশগ্রহণ৷ দিল্লি সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক৷ অনেকেই তাঁর আগমনের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ বিভিন্ন সংগঠন ঢাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে৷

ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় প্রতিক্রিয়া জানানো বেশিরভাগ পাঠকই মনে করেন মোদীকে আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হচ্ছে৷ মাহবুব রহমান লিখেছেন অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে, সাম্প্রদায়িক নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশে বয়কট করলেই ভালো উদযাপন হবে৷