‘ভুলে যাওয়া সেই প্রতিবাদের পথে আপনাদের নামতেই হবে'
১৮ মে ২০১৫ফারাহ জাবিন শাম্মী লিখেছেন, ‘‘মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের সেই শিক্ষক জিনাতুন্নেসার কাছে যখনই কোনো বিষয়ে অভিভাবকরা অভিযোগ নিয়ে যেতেন তখন তার কাছ থেকে কোনো সমাধান পাননি কোনো অভিভাবক৷ বরং তিনি, যদি কারো স্কুল ভাল না লাগে তাদের সন্তান নিয়ে এই স্কুল থেকে চলে যাবার পরামর্শ দিতেন৷ আর সেদিনের ঘটনার পর বিচার চাইতে গেলে তিনি ফুল দেখলে ভোমরা আসবেই বলার পাশাপাশি মায়েদেরকে বলেন, আপনাদের বাসায় যখন হাজব্যান্ডরা কাজের মেয়েদের যৌন হয়রানি করে তখন কি কিছু করতে পারেন?''
এদিকে, প্রিপারেটরি স্কুলে পড়ছে এমন এক ছাত্রীর মা মুনিরা চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশ একটি আজব দেশ৷ অন্যায় দেখে চুপ করে থাকা আর মজা নেওয়া আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে৷ আর এর ফলে অন্যায় ক্রমশ বাড়ছে৷ মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল হচ্ছে তার জ্বলন্ত উদাহরণ৷ গত তিন বৎসর এই স্কুলটা অনাচারের নরক রাজ্যে পরিণত হয়েছে৷ গত বৎসর কেমিস্ট্রি শিক্ষক নিয়াজী স্যার-এর মুখোশ খুলে দিল এক ছাত্রী৷ নবম শ্রেণির এক ছাত্রী যৌন হয়রানির সাক্ষ্য প্রমাণসহ হাজির করাতে নিয়াজী স্যার চাকুরিচ্যুত হয়৷ মেয়েটি পেরেছিল কারণ মেয়েটির বাবা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ছিল৷''
এরপর সদ্য ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির ঘটনা প্রসঙ্গে মুনিরা চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘৫ই মে ৪ নং গেটের সাথে প্লে-গ্রাউন্ডে স্কুলের এক সুইপারের সহায়তায়, স্কুলের কাজে যে শ্রমিকরা কাজ করে তাদেরই একজন শ্রমিক ওর মুখ চেপে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের রুমে নিয়ে গিয়েছিল৷ মেয়েটি ফিরে এসে ওদের বলেছিল, জানো আমাকে ডাকাত আর গুন্ডা ধরেছিল, আমি মেরে পালিয়ে এসেছি৷ এদিকে বাচ্চারা টিচার আসলে বলে, কিন্তু টিচার ধমক দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়৷ রবিবার দিন স্কুল থেকে ফিরে ছোট্ট মেয়েটি জানায় ওকে বেশ কয়েকবার টিচাররা ডেকে নিয়ে গিয়েছিল৷ তখন ওকে ধমক দিয়ে বলেছে ও নাকি এইসব মিথ্যা কথা বানিয়ে বলছে এবং আর যেন এইসব না বলে৷ আমার মেয়ে হয়তো এই স্কুল থেকে বের হয়ে যাচ্ছে কিন্তু হাজারও মেয়ে আছে ওরা আমাদেরই সন্তান৷ ওদের পাশে আমরা না দাঁড়ালে কে দাঁড়াবে?''
এসব ঘটনা বন্ধে সবাইকে প্রতিবাদী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে গোলাম মোর্তজা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আমাদের ভাবনাটা এমন হয়েছে যে, আমরা একটি মহাকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে বাস করছি৷ সব অন্যায় প্রতিকারের দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর ছেড়ে দিয়েছি৷ প্রতিবাদ বিষয়টিই ভুলে যাচ্ছি৷ ইয়াসমিন ধর্ষণ-হত্যার বিচার হতো না, যদি না উত্তাল আন্দোলন হতো৷ শামসুননাহার হলে অবমাননার প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীরা ওভাবে খেপে না উঠলে, ইতিহাসের অন্যতম নিকৃষ্ট ভিসি আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বিদায় নিত না৷ বর্ষবরণের দিনের যৌন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে মার খেল ছাত্র ইউনিয়নের নেতা কর্মীরা৷ পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হলো নারী কর্মী৷ ভিসিও উদ্বেগহীন নিশ্চুপ থেকে, এত বড় অন্যায় চাপা দেয়ায় সহায়তা করে, রেহাই পেয়ে গেলেন৷
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের শিশু নিপীড়নের ঘটনাও চাপা দিয়ে দেয়া যেত, অশ্লীল বক্তব্যের প্রতীক অধ্যক্ষও অক্ষতই থেকে যেত যদি না অভিভাবকরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে না আসতেন৷ আজ আপনার পাশের বাড়ির শিশু নিপীড়নের শিকার হয়েছে, কাল আপনার শিশু হবে না, এটা ভাবার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই৷ ইসমত পুলিশের হাতে নিপীড়নের শিকার হয়েছে, এরপর আপনার মেয়েও পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাবে না৷ সুতরাং ভুলে যাওয়া সেই প্রতিবাদের পথে আপনাদের নামতেই হবে৷ এর কোনো বিকল্প নেই৷ কোনো সরকার আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসবে না, যদি না বাধ্য করতে পারেন৷''
ওয়াহিদ ইবনে রেজা লিখেছেন, ‘‘যে দেশের ঐতিহ্যের একটি অনুষ্ঠানে, হাজার হাজার মানুষের সামনে, দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে একদল অমানুষ ২০টির উপর শ্লীলতাহানি ঘটায় এবং তারপর আইন শৃঙ্খলা ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান সেটাকে নিছক দুষ্টুমি বলে উড়িয়ে দেয়, অনেক মানুষ আবার মেয়েদের ঘাড়ে দোষ চাপায়, এমনকি সেই ১১ বছরের মেয়েটিরও নাকি দোষ ছিল- সেই দেশে স্কুল শিক্ষক (!) তো ক্লাস ফাইভ আর ক্লাস ওয়ান এ পড়া মেয়েদের মধু বলবেনই! গতকালকেই একজনকে দেখলাম চলন্ত বাসে ধর্ষণ নিয়ে আমাদের দেশের একটা নিউজ শেয়ার করতে৷ মনে হচ্ছে আর ঢাকাতে নেই, দিল্লিতে আছি৷ আমাদের জাগতে আর কত দেরি পাঞ্জেরি?''
টুইটারে তানভীর আহমেদ বাংলাদেশের এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার সংবাদটি শেয়ার করেছেন৷
অনিরুদ্ধ হোম রায় বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম এর একটি খবর শেয়ার করেছেন, যেখানে নারীদের হয়রানির বিরুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়নের বিক্ষোভের কথা বলা হয়েছে৷
নামিয়া আক্তার বাংলাদেশে নারীদের উপর যৌন হয়রানির বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন শেয়ার করে সবার সেটা পড়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন৷
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: জাহিদুল হক