ভারত-পাকিস্তান বৈঠক
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩চেনাব নদীর অববহিকায় ভারতের চারটি প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে পাকিস্তানের সব থেকে বেশি আপত্তি পাকালদুল প্রকল্প নিয়ে৷ এই প্রকল্পে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জলাধারে অনেক বেশি পরিমাণ জল ধরে রাখা হবে মনে করছে পাকিস্তান৷ ফলে ভাটির দিকে জলপ্রবাহ কমে যাবে এবং তাতে পাকিস্তানকে জলকষ্টের সম্মুখীন হতে হবে৷ আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির জল বণ্টনের বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক খারাপ হবার অন্যতম কারণ এবং ভবিষ্যতে আরো খারাপ হবার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল৷
বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে সিন্ধু নদের জলবণ্টন নিয়ে দুদেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়, তাতে পূর্বাংশের শতদ্রু, বিপাশা,ইরাবতী এবং তার শাখানদীগুলির ওপর থাকবে ভারতের পূর্ণ অধিকার এবং পশ্চিমাংশের ঝিলাম, চেনাব এবং শাখানদীগুলির ওপর থাকবে পাকিস্তানের অধিকার৷ গত দশকে ভারতের দিকে চেনাব নদীর ওপর বাগলিহার বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যায় পাকিস্তান৷ আদালত নিয়োগ করে এক নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ কমিটি৷ তাতে পাকিস্তানের আপত্তি খারিজ হয়ে যায় এই শর্তে যে ভারতকে বাঁধের ডিজাইন বদলাতে হবে৷
এই রায়ে পাকিস্তানের চিন্তা বেড়ে যায়, কারণ কৃষি তথা খাদ্য সুরক্ষার জন্য সিন্ধুনদের জল পাকিস্তানের জীবনরেখা৷ এখানেই শেষ নয়, পাকিস্তানের সন্দেহ, ভারতের দিকের ঝিলাম ও চেনাব নদীর ওপর শ'খানেক বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করছে ভারত৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন সিন্ধুনদের জলপ্রবাহ কমে আসছে৷ হিমবাহ গলতে শুরু করেছে এবং সিন্ধুনদের উৎপত্তি হিমবাহ থেকেই৷
দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির জল বণ্টন তথা জলপ্রবাহ নিয়ে বিরোধ সংশ্লিষ্ট দেশগুলির মধ্যে রাজনৈতিক লড়াইয়ের চেহারা নিতে চলেছে৷ ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতার অন্যতম কারণ সিন্ধুনদের জল বিরোধ৷ এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশে বিদ্যুতের আকাল৷ ভৌগোলিক দিক থেকে উজানে অবস্থিত প্রত্যেক দেশ নিজ ভূখণ্ড দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলির জল আটকে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করতে চলেছে৷ ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে চীন একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণ করছে৷
আন্তঃসীমান্ত জলবণ্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও চলেছে টানাপোড়েন৷ তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি ঝুলে আছে ভারতের ঘরোয়া ঐকমত্যের অভাবে৷ বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ভারত বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পসহ আরো কয়েকটি বিতর্কিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মীমাংসা করতে চেয়েছে অন্যভাবে৷
ঐসব প্রকল্পে বাংলাদেশকে অংশীদার করে উৎপাদিত বিদ্যুতের কিছুটা বাংলাদেশকে দেবার প্রস্তাব দেয়া হয়৷ বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং সিকিমে যৌথভাবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে অংশগ্রহণেও আগ্রহ দেখিয়েছে৷ ভারতের মণিপুর-মিজোরাম সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদীর ওপর টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের আপত্তি – বর্ষাকালে বাঁধের জলাধার থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়া হলে বাংলাদেশে হবে বন্যা আর শুখা মরসুমে জলপ্রবাহ বাঁধে ধরে রাখলে বাংলাদেশে দেখা দেবে জলের আকাল৷