1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিপিএমের নয়া নীতি, কেন্দ্রে মমতার সঙ্গে সমঝোতা

১৬ জুলাই ২০২১

রাজ্যে বিরোধিতা, কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে মমতার সঙ্গে থাকা। এটাই এখন সিপিএমের নয়া নীতি।

https://p.dw.com/p/3wYeH
কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর ব্রাত্য নন সিপিএমের কাছে। ছবি: Sandip Saha/Pacific Press/picture alliance

নরেন্দ্র মোদীকে সরাতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্তরে হাত মেলাতে কোনো অসুবিধা নেই সিপিএমের। মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধী ঐক্যের স্বার্থে এই নীতি নেয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সিপিএম নেতারা। তবে পশ্চিমবঙ্গে মমতার কট্টর বিরোধিতার রাস্তা থেকে তারা সরে আসছে না। এর ফলে কেন্দ্রীয় স্তরে মোদী-বিরোধী জোট গঠনের সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল হলো।

পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বৃহস্পতিবার বলেছেন, ''আমাদের বলা হয়েছিল, বিজেপি-র বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিরোধী জোটে মমতা থাকবেন। তাতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। বিরোধী জোটে সকলেই আসতে পারেন। কিন্তু এই ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে হবে না।'' সূর্যকান্ত বলেছেন, ''কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সিপিএমের মূল শত্রু হলো বিজেপি। কিন্তু রাজ্যের ক্ষেত্রে বামেদের কাছে বিজেপি ও তৃণমূল দুজনেই শত্রু। দুই দলের বিরুদ্ধেই সিপিএম লড়বে।''

কেন তারা রাজ্যে তৃণমূলের বিরোধিতা করছেন এবং করবেন, তার যুক্তিও দিয়েছেন সূর্যকান্ত। তার দাবি, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার স্বৈরাচারী। তারা বিরোধীদের কন্ঠরোধ করে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। ফলে তারা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাবেন না।

উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে বেঙ্কাইয়া নাইডু যখন বিজেপি সভাপতি বা কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন, তখন একটা কথা প্রায়ই বলতেন, দিল্লিতে দোস্তি এবং রাজ্যে কুস্তি এই নীতি নিয়ে চলা যায় না। কিন্তু ভারতে রাজনৈতিক জোটের ক্ষেত্রে তা হামেশাই হয়েছে এবং হচ্ছে। কংগ্রেস ও সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে হাত মেলালেও কেরালায় একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়ছে। কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়লেও জাতীয় রাজনীতিতে মমতাকে সঙ্গে নিয়ে চলে। সিপিএমও এখন সেই নীতি নিল।

পশ্চিমবঙ্গের ভোটের সময় সিপিএমের কাছে তৃণমূল ছিল প্রধান শত্রু। ভোটের পর সিপিএম নেতারা বলতে শুরু করেন, তাদের এই মূল্যায়ন ঠিক হয়নি। রাজ্যের মানুষ বিজেপি-র বিরোধিতা করে ভোট দিয়েছে। সিপিএম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস, মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সিপিএমের এখন খুবই দিশেহারা অবস্থা। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিটা প্রায় দ্বিদলীয় রাজনীতিতে এসে ঠেকেছে। তৃণমূল ও বিজেপি-র মধ্যে লড়াই হচ্ছে। আর কেন্দ্রে লড়াই বিজেপি-র সঙ্গে বিরোধী জোটের। তাই বাধ্য হয়েই এরকম অবস্থান নিয়েছে সিপিএম।''

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য মনে করেন, ''এই সিদ্ধান্ত অনেক আগেই সিপিএমের নেয়া উচিত ছিল।'' ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''বিজেপি যে প্রধান শত্রু এটা অনেক আগেই সিপিএমের বলা উচিত ছিল। কেন্দ্রীয় স্তরে মোদী-বিরোধিতা ছাড়া আর অন্য পথ নেয়ার কোনো উপায় সিপিএমের নেই। সেখানে মমতাকে গ্রহণ করা ছাড়া তাদের উপায়ও নেই।''

প্রশ্ন হলো, এরপর লোকসভার সময় কি বামেরা তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করবে, না কি তারা সব আসনে প্রার্থী দেবে? বামেদের মূল শক্তি বলতে তো কেরালা। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় তারা টিমটিম করে জ্বলছে। পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা আসনে তাহলে নীতিটা কী হবে? বিজেপি-র প্রার্থীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিরোধী প্রার্থী দেয়া হবে, এই নীতি নিয়েই তো বিরোধীদের এককাট্টা করার চেষ্টা করছেন যশবন্ত সিনহা, শরদ পাওয়ার, প্রশান্ত কিশোররা। জয়ন্তও বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসন নিয়ে বামেরা কী করবেন, সেটাই দেখার।

তবে মোদীর বিরোধিতায় তারা ছুৎমার্গ ছেড়ে দিয়ে মমতার সঙ্গে জোটে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা সিপিএমের কাছে বড় নীতিবদল।

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, আনন্দবাজার)