1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সেন্সর বোর্ডের মতো বই দেখার কমিটি থাকলে ভালো হতো’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৭ জানুয়ারি ২০২৩

এবারও একুশে বই মেলা শুরুর আগেই শুরু হয়েছে এক প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেয়া নিয়ে বিতর্ক৷ নিষিদ্ধ নয় এমন বইয়ের কারণে বাংলা একাডেমির এ অবস্থান কি যুক্তিসঙ্গত?

https://p.dw.com/p/4MnKF
গ্রন্থমেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম
গ্রন্থমেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলামছবি: privat

এমন পরিস্থিতি এড়ানোর উপায় কী? এসব বিষয়েই কথা বলেছেন গ্রন্থমেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম৷  

ডয়চে ভেলে : এবার বইমেলার প্রস্তুতি কেমন?

ডা. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম : আছে৷ এখন আমাদের সব স্টল বরাদ্দ শেষ৷ প্রধানমন্ত্রী পহেলা ফেব্রুয়ারি মেলার উদ্বোধন করবেন, সেই প্রস্তুতিও প্রায় শেষ৷ এবার প্রধানমন্ত্রী সরাসরি এসে উদ্বোধন করবেন৷ এবার মেলার আঙ্গিকগত ও বিন্যাসগত পরিবর্তন এনেছি৷ মেট্টোরেলের কারণে এবার আমরা মূল গেটটা পাচ্ছি না৷ এটাকে এবার বাহির হওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে৷ আর রমনা মন্দিরে যাওয়ার মূল গেটটা প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার হবে৷ এবার ১৮২টা স্টল আর ১১টা প্যাভিলিয়ন৷ এর মধ্যে গতবছর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের দিকে যে স্টলগুলো ছিল তারা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল৷ এবার তাদের মূল জায়গায় নিয়ে এসেছি৷

মেলা যে নীতিমালার ভিত্তিতে চলে, সেটা কারা তৈরি করে? 

আমাদের ৩১ সদস্য-বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি আছে৷ প্রথম মিটিংয়ে এই কমিটি নীতিমালাটা চূড়ান্ত করে ফেলে৷

প্রতি বছরই স্টল বরাদ্দ নিয়ে নানা সংকট দেখা দেয় কেন? বিষয়টিকে বিতর্কমুক্ত করা যায় না?

সেটা তো বুঝতেই পারছেন৷ এবার একটা হয়েছে আদর্শ নিয়ে৷ পেছনে যে ক্ষতিগ্রস্ত সে তো অনেক কথাই বলবে৷ যে সামনে স্টল পেয়েছে, ভালো জায়গায় পেয়েছে, সে তো কিছু বলবে না৷ এত বিশাল এলাকা, সবাইকে তো সন্তুষ্ট রাখা যাবে না৷

‘সমস্যাটা যখন হয়েছে, তখন আদর্শ শো-ডাউন করেছে’

এবারও আদর্শ প্রকাশনী স্টল বরাদ্দ নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে সেখানে বাংলা একাডেমি কি দায় এড়াতে পারে?

এটা নিয়ে আমি কোনো কথাই বলতে চাই না৷ এখন আর ওই ইস্যুটা নেই৷ উনি অনেক কথাই বলেছেন৷ বাংলা একাডেমি এককভাবে স্টল বরাদ্দ দেয় না, এখানে একটা কমিটি আছে, তারাই সিদ্ধান্ত দেয়৷ সমস্যাটা যখন হয়েছে, তখন আদর্শ শো ডাউন করেছে,অনেক কথা বলেছে৷ তখন আমি দু-একটি কথা বলতে গেছি, দেখি বিকৃত হয়ে যায়৷ তখন আমি মহাপরিচালককে বলেছি, মিটিং ডাকার জন্য৷ উনি মিটিং ডেকেছেন৷ সেখানে সম্মিলিতভাবে একটা প্রেসরিলিজ দেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি আমরা নীতিমালাটা আপলোড করেছি৷ এই দুটো দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন৷

যে বইগুলো নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, এর একটিও নতুন বই নয়৷ সবগুলো বই গতবছর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে, তখন আপনারা কিছু বলেননি কেন?

আমি যতটুকু জানি, গত বছর বইমেলা যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন তারা বইগুলো এনেছে৷ আপনারা জানেন, আগের বছর যখন মেলা শেষ হয়, সেই দিন থেকে এ বছর মেলা শুরু হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত কাউন্ট হবে৷ গত বছর মেলা শেষ হয়েছে ৭ মার্চ, আর বইগুলো সম্ভবত এসেছে ৪ মার্চ৷ যখন বইগুলো জমা হয়েছে, তখন হয়ত আমরা মূল্যায়ন করতে পারিনি৷ এবার যখন আমরা নীতিমালায় দেখলাম যে বইগুলোর মধ্যে এসব জিনিস রয়েছে, এগুলো কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আমাদের গোচরে এনেছে৷ সেই কথাটাই আমরা প্রেস রিলিজে উল্লেখ করেছি৷ 

তাহলে কি বইমেলায় যে বইগুলো আসে তার উপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ নেই বাংলা একডেমির?

৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার বই বের হয়৷ বাংলা একাডেমির ছোট্ট একটা কমিটি দিয়ে কি সবগুলো বইয়ের মূল্যায়ন করা সম্ভব? একটা উদাহরণ দেই৷ বাংলা একাডেমি থেকে যদি কোনো বই হয়, সেই বইয়ের শতভাগ দায়িত্ব বাংলা একাডেমি নেবে৷ আমরা কী করি, দুই জায়গায় রিভিউতে পাঠাই৷ যদি কিছু কনফিউজিং হয় তখন তৃতীয় ব্যক্তির কাছে পাঠাই৷ এরপর আমরা ছাপি৷ প্রকাশকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে৷ একটা কমিটি করে দিয়ে তাদের কাছে পাঠালে তখন তারা দেখতে পারে৷ কেন্দ্রীয় একটা নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত৷ সিনেমাগুলো সেন্সর করা হয়৷ কীভাবে হয়? একটা কমিটি আছে, তারা দেখে, তারপর সিনেমাটির অনুমোদন দেওয়া হয়৷ ঠিক সেইভাবে যদি একটা কমিটি থাকতো সেটাই ভালো হতো৷

 বইমেলায় যে বইগুলো আসে, সেগুলো কি বাংলা একাডেমির অনুমোদন নিয়ে আনতে হয়? নাকি যে কোনো প্রকাশক স্বাধীনভাবে আনতে পারেন?

বাংলা একাডেমির নীতিমালা করে দেওয়া আছে৷ যদি কোনো বই নিয়ে কনফিউশন দেখা দেয়, তখন টাস্কফোর্স আছে, তারা দেখে৷ এটা বলতে পারেন, টাস্কফোর্স এতদিন কঠিনভাবে হয়ত এগুলো দেখেনি৷ এটা আমি মানলাম৷ টাস্কফোর্স কোনো দায়িত্বে অবহেলা করলে তাদের উপর বর্তাবে৷ এবার কিন্তু টাস্কফোর্স অন্যভাবে সাজানো হয়েছে৷ মেলার প্রথম দিন থেকেই তারা এদিকে লক্ষ্য রাখবে৷ ফলে এবার অন্য রেজাল্টও আসতে পারে৷ শিল্পকলার মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে একটা কমিটি করা হয়েছে৷ তিনি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন৷  

বাকস্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

আমি কিছুই বলবো না৷ আমি মেলার সদস্য সচিব মাত্র৷ আমি তো লেখকও না৷ অন্যভাবে বললে, বাকস্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে কি হচ্ছে না সেটা মেলা পরিচালনা কমিটি, মিডিয়াসহ অন্যরা এটা দেখবে৷

প্রকাশনার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি কতটুকু স্বাধীন? সরকারের হস্তক্ষেপই বা কতটুকু?

প্রকাশনার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি সম্পূর্ণ স্বাধীন৷ এখানে সরকারি কোনো হস্তক্ষেপ নেই৷ বাংলা একাডেমি রুচিশীল ও গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান৷ কবিতা, গল্প, উপন্যাস এগুলো বাংলা একাডেমি খুব একটা ছাপে না৷ আমরা গবেষণাকে প্রাধান্য দেই৷ আমি এখানে ১৯৯৬ সাল থেকে আছি৷ এখানে এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না, সেই কথা কিন্তু কেউ কখনো আমাদের বলেনি৷ বাংলা একাডেমি যথেষ্ট স্বাধীন৷

অনেক সময় দেখি, ধর্মীয় উষ্কানিমূলক কিছু বই মেলায় আসে৷ এটা নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে?

নতুন যারা স্টল নেয়, তাদের কিন্তু বইগুলো জমা দিতে বলা হয়৷ সেই বইগুলো কিন্তু কমিটির সবাই দেখেন, যাতে বিতর্ক না হয়৷ সে কারণে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান, যাদের কাজ সন্দেহজনক মনে হয়েছে, তাদের স্থগিত করে রাখা হয়েছে৷ আমাদের কমিটির সদস্যরা বলেছেন, যেগুলো ধর্মীয় বই সেগুলো তো ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যে মাসব্যাপী অনুষ্ঠান হয় সেখানে তো তারা যেতে পারে৷ এখানে অন্য যারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে চান, তাদের জন্য৷ এখানে তো স্পেস অনেক কম৷ সেই দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের বলা হয়েছে, সেখানকার নীতিমালার আলোকে তারা ওখানে স্টল দিতে পারে৷ আমরা এবার যথেষ্ট সতর্ক৷

আগে বইমেলায় লেখকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, লেখদের নিরাপত কতটা নিশ্চিত করা হয়েছে?

গত ১৯ জানুয়ারি আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের একটা মিটিং হয়েছে৷ বিভিন্ন বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেখানে ছিলেন৷ সেখানে কিন্তু প্রথমেই নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে এসেছে৷ বিভিন্ন বাহিনী আমাদের বলেছে- এবার কোনো থ্রেট নেই৷ তারা আমাদের বলেছেন, নীতিমালার আলোকে আপনারা কঠোর অবস্থানে থাকবেন৷ যেভাবে চলছে, সেটা দেখে মনে হচ্ছে পহেলা ফেব্রুয়ারি আমাদের সুন্দর একটা মেলার উদ্বোধন হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য