‘সেন্সর বোর্ডের মতো বই দেখার কমিটি থাকলে ভালো হতো’
২৭ জানুয়ারি ২০২৩এমন পরিস্থিতি এড়ানোর উপায় কী? এসব বিষয়েই কথা বলেছেন গ্রন্থমেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম৷
ডয়চে ভেলে : এবার বইমেলার প্রস্তুতি কেমন?
ডা. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম : আছে৷ এখন আমাদের সব স্টল বরাদ্দ শেষ৷ প্রধানমন্ত্রী পহেলা ফেব্রুয়ারি মেলার উদ্বোধন করবেন, সেই প্রস্তুতিও প্রায় শেষ৷ এবার প্রধানমন্ত্রী সরাসরি এসে উদ্বোধন করবেন৷ এবার মেলার আঙ্গিকগত ও বিন্যাসগত পরিবর্তন এনেছি৷ মেট্টোরেলের কারণে এবার আমরা মূল গেটটা পাচ্ছি না৷ এটাকে এবার বাহির হওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে৷ আর রমনা মন্দিরে যাওয়ার মূল গেটটা প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার হবে৷ এবার ১৮২টা স্টল আর ১১টা প্যাভিলিয়ন৷ এর মধ্যে গতবছর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের দিকে যে স্টলগুলো ছিল তারা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল৷ এবার তাদের মূল জায়গায় নিয়ে এসেছি৷
মেলা যে নীতিমালার ভিত্তিতে চলে, সেটা কারা তৈরি করে?
আমাদের ৩১ সদস্য-বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি আছে৷ প্রথম মিটিংয়ে এই কমিটি নীতিমালাটা চূড়ান্ত করে ফেলে৷
প্রতি বছরই স্টল বরাদ্দ নিয়ে নানা সংকট দেখা দেয় কেন? বিষয়টিকে বিতর্কমুক্ত করা যায় না?
সেটা তো বুঝতেই পারছেন৷ এবার একটা হয়েছে আদর্শ নিয়ে৷ পেছনে যে ক্ষতিগ্রস্ত সে তো অনেক কথাই বলবে৷ যে সামনে স্টল পেয়েছে, ভালো জায়গায় পেয়েছে, সে তো কিছু বলবে না৷ এত বিশাল এলাকা, সবাইকে তো সন্তুষ্ট রাখা যাবে না৷
এবারও আদর্শ প্রকাশনী স্টল বরাদ্দ নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে সেখানে বাংলা একাডেমি কি দায় এড়াতে পারে?
এটা নিয়ে আমি কোনো কথাই বলতে চাই না৷ এখন আর ওই ইস্যুটা নেই৷ উনি অনেক কথাই বলেছেন৷ বাংলা একাডেমি এককভাবে স্টল বরাদ্দ দেয় না, এখানে একটা কমিটি আছে, তারাই সিদ্ধান্ত দেয়৷ সমস্যাটা যখন হয়েছে, তখন আদর্শ শো ডাউন করেছে,অনেক কথা বলেছে৷ তখন আমি দু-একটি কথা বলতে গেছি, দেখি বিকৃত হয়ে যায়৷ তখন আমি মহাপরিচালককে বলেছি, মিটিং ডাকার জন্য৷ উনি মিটিং ডেকেছেন৷ সেখানে সম্মিলিতভাবে একটা প্রেসরিলিজ দেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি আমরা নীতিমালাটা আপলোড করেছি৷ এই দুটো দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন৷
যে বইগুলো নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, এর একটিও নতুন বই নয়৷ সবগুলো বই গতবছর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে, তখন আপনারা কিছু বলেননি কেন?
আমি যতটুকু জানি, গত বছর বইমেলা যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন তারা বইগুলো এনেছে৷ আপনারা জানেন, আগের বছর যখন মেলা শেষ হয়, সেই দিন থেকে এ বছর মেলা শুরু হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত কাউন্ট হবে৷ গত বছর মেলা শেষ হয়েছে ৭ মার্চ, আর বইগুলো সম্ভবত এসেছে ৪ মার্চ৷ যখন বইগুলো জমা হয়েছে, তখন হয়ত আমরা মূল্যায়ন করতে পারিনি৷ এবার যখন আমরা নীতিমালায় দেখলাম যে বইগুলোর মধ্যে এসব জিনিস রয়েছে, এগুলো কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আমাদের গোচরে এনেছে৷ সেই কথাটাই আমরা প্রেস রিলিজে উল্লেখ করেছি৷
তাহলে কি বইমেলায় যে বইগুলো আসে তার উপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ নেই বাংলা একডেমির?
৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার বই বের হয়৷ বাংলা একাডেমির ছোট্ট একটা কমিটি দিয়ে কি সবগুলো বইয়ের মূল্যায়ন করা সম্ভব? একটা উদাহরণ দেই৷ বাংলা একাডেমি থেকে যদি কোনো বই হয়, সেই বইয়ের শতভাগ দায়িত্ব বাংলা একাডেমি নেবে৷ আমরা কী করি, দুই জায়গায় রিভিউতে পাঠাই৷ যদি কিছু কনফিউজিং হয় তখন তৃতীয় ব্যক্তির কাছে পাঠাই৷ এরপর আমরা ছাপি৷ প্রকাশকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে৷ একটা কমিটি করে দিয়ে তাদের কাছে পাঠালে তখন তারা দেখতে পারে৷ কেন্দ্রীয় একটা নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত৷ সিনেমাগুলো সেন্সর করা হয়৷ কীভাবে হয়? একটা কমিটি আছে, তারা দেখে, তারপর সিনেমাটির অনুমোদন দেওয়া হয়৷ ঠিক সেইভাবে যদি একটা কমিটি থাকতো সেটাই ভালো হতো৷
বইমেলায় যে বইগুলো আসে, সেগুলো কি বাংলা একাডেমির অনুমোদন নিয়ে আনতে হয়? নাকি যে কোনো প্রকাশক স্বাধীনভাবে আনতে পারেন?
বাংলা একাডেমির নীতিমালা করে দেওয়া আছে৷ যদি কোনো বই নিয়ে কনফিউশন দেখা দেয়, তখন টাস্কফোর্স আছে, তারা দেখে৷ এটা বলতে পারেন, টাস্কফোর্স এতদিন কঠিনভাবে হয়ত এগুলো দেখেনি৷ এটা আমি মানলাম৷ টাস্কফোর্স কোনো দায়িত্বে অবহেলা করলে তাদের উপর বর্তাবে৷ এবার কিন্তু টাস্কফোর্স অন্যভাবে সাজানো হয়েছে৷ মেলার প্রথম দিন থেকেই তারা এদিকে লক্ষ্য রাখবে৷ ফলে এবার অন্য রেজাল্টও আসতে পারে৷ শিল্পকলার মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে একটা কমিটি করা হয়েছে৷ তিনি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন৷
বাকস্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
আমি কিছুই বলবো না৷ আমি মেলার সদস্য সচিব মাত্র৷ আমি তো লেখকও না৷ অন্যভাবে বললে, বাকস্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে কি হচ্ছে না সেটা মেলা পরিচালনা কমিটি, মিডিয়াসহ অন্যরা এটা দেখবে৷
প্রকাশনার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি কতটুকু স্বাধীন? সরকারের হস্তক্ষেপই বা কতটুকু?
প্রকাশনার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি সম্পূর্ণ স্বাধীন৷ এখানে সরকারি কোনো হস্তক্ষেপ নেই৷ বাংলা একাডেমি রুচিশীল ও গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান৷ কবিতা, গল্প, উপন্যাস এগুলো বাংলা একাডেমি খুব একটা ছাপে না৷ আমরা গবেষণাকে প্রাধান্য দেই৷ আমি এখানে ১৯৯৬ সাল থেকে আছি৷ এখানে এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না, সেই কথা কিন্তু কেউ কখনো আমাদের বলেনি৷ বাংলা একাডেমি যথেষ্ট স্বাধীন৷
অনেক সময় দেখি, ধর্মীয় উষ্কানিমূলক কিছু বই মেলায় আসে৷ এটা নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে?
নতুন যারা স্টল নেয়, তাদের কিন্তু বইগুলো জমা দিতে বলা হয়৷ সেই বইগুলো কিন্তু কমিটির সবাই দেখেন, যাতে বিতর্ক না হয়৷ সে কারণে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান, যাদের কাজ সন্দেহজনক মনে হয়েছে, তাদের স্থগিত করে রাখা হয়েছে৷ আমাদের কমিটির সদস্যরা বলেছেন, যেগুলো ধর্মীয় বই সেগুলো তো ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যে মাসব্যাপী অনুষ্ঠান হয় সেখানে তো তারা যেতে পারে৷ এখানে অন্য যারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে চান, তাদের জন্য৷ এখানে তো স্পেস অনেক কম৷ সেই দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের বলা হয়েছে, সেখানকার নীতিমালার আলোকে তারা ওখানে স্টল দিতে পারে৷ আমরা এবার যথেষ্ট সতর্ক৷
আগে বইমেলায় লেখকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, লেখদের নিরাপত কতটা নিশ্চিত করা হয়েছে?
গত ১৯ জানুয়ারি আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের একটা মিটিং হয়েছে৷ বিভিন্ন বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেখানে ছিলেন৷ সেখানে কিন্তু প্রথমেই নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে এসেছে৷ বিভিন্ন বাহিনী আমাদের বলেছে- এবার কোনো থ্রেট নেই৷ তারা আমাদের বলেছেন, নীতিমালার আলোকে আপনারা কঠোর অবস্থানে থাকবেন৷ যেভাবে চলছে, সেটা দেখে মনে হচ্ছে পহেলা ফেব্রুয়ারি আমাদের সুন্দর একটা মেলার উদ্বোধন হবে৷