কলকাতা থেকে এসে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঢাকায় এসে পৌঁছায় স্বরজিতের দল৷ বুধবার সকালে ২১ সদস্যের দলটি খালি পায়ে হেঁটে শহীদ মিনারে গিয়ে বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়৷ এর আগে পলাশী মোড় থেকে তাঁরা ব়্যালি শুরু করেন৷ ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছরই সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশে এসে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানান তাঁরা৷
এই দলটির নেতা স্বরজিৎ রায় ডয়চে ভেলেকে দেয়া তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘দুই দেশের মধ্যে অনেক মিল৷ দুই দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা একজন মানুষ, তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ তাঁকেই এবারের ব়্যালি উৎসর্গ করা হয়েছে৷ আমাদের এই উদ্যোগে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ন্যাশনাল টুরিজম ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমরা আগামীবার আবার আসবো৷ আগামী বছর ব়্যালিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের নামে উৎসর্গ করবো৷ পশ্চিমবঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে সবাই শ্রদ্ধা করে৷ তাঁর নেতৃত্বকে বিশ্বাস করে৷''
মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেন স্বরজিৎ৷ ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে এমনউদ্যোগের কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দু'টি দেশের যে ভাষার টান, তাকেই সম্বল করে আমরা বারবার এদেশে আসছি৷ বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ববোধ আরও প্রসার করার লক্ষেই এই দেশে আসা৷''
২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শেষ হয় তাঁদের এই যাত্রা৷ স্বরজিৎ বলেন, ‘‘আমাদের একটি শ্লোগান আছে– বাংলা কখনও হয় না ভাগ, বাংলা ভাষায় আমরা এক– এই শ্লোগানকে বুকে ধারণ করেই আমাদের এই যাত্রা৷ জন্মের পর থেকে তিনটি জিনিস আমরা বয়ে বেড়াই–
এক, নাগরিকত্ব; দুই, আমাদের ধর্ম, আর তিন, আমাদের জাতিসত্তা৷''
কলকাতা থেকে আসা এই দলটিকে সহায়তা করা ন্যাশনাল টুরিজম ট্রেনিং ইনষ্টিটিউটের অধ্যক্ষ পারভেজ আহমেদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বহুদিন ধরেই আমরা পর্যটন কর্পোরেশন কলকাতার পর্যটন মেলায় অংশগ্রহণ করি৷ সেখানেই তাঁদের সঙ্গে সখ্য৷ সবাই আমরা বাংলা ভাষাভাষী৷ তাহলে আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ কেন থাকবে? এসব চিন্তা থেকেই আমরা তাঁদের সহযোগিতা দেই৷ পর্যটনের আবাসিক ব্যবস্থা অবকাশে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তাঁরা যে কষ্ট করে এখানে এসেছেন, আমরা সত্যিই তাঁদের নিয়ে গর্ব অনুভব করি৷''
কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করে রানাঘাট হয়ে গেদে সীমান্ত পেরিয়ে দর্শনা, মেহেরপুরের মুজিবনগর৷ এরপর চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে কুষ্টিয়ার লালন শাহের মাজার, রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহের কুঠিবাড়ি, পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়ি পরিদর্শন শেষে সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িতে যায় দলটি৷ সেখান থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতসৌধ হয়ে মোট প্রায় ৪৮৭ কিলোমিটারের যাত্রা শেষে মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছায় এই দল৷ বাংলাদেশে থাকা রবীন্দ্রনাথের সব স্মৃতিকেই তাঁরা স্পর্শ করে ঢাকায় আসেন৷ এবারের বিষয় রবীন্দ্রনাথ৷ তাই এই পথ বেছে নেন তাঁরা৷
দলটির সহনেতা সুদীপ্ত পাল ডয়চে ভেলেকে জানান, ভারতের ট্যুর সংস্থা হান্ড্রেড মাইলসের উদ্যোগে তাঁদের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসার ঘটনা ৬ বছরের পুরনো৷ ২০১২ সাল থেকে তাঁরা নিয়মিত বাংলাদেশে আসছেন এবং শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি ঘুরে দেখছেন বাংলাদেশের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো৷ জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি থেকে শুরু হয় তাঁদের ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী বন্ধন সাইকেল ব়্যালি– ভাষা সূত্র ২০১৮৷ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এই যাত্রার উদ্বোধন করেন বেঙ্গল অলিম্পিক অসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, জোড়াসাঁকো বিধানসভার সদস্য স্মিতা বক্সি, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী শ্রী ধ্রুব বসু রায়, শুভেন্দু মাইতি, তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি অধ্যাপিকা ড. সন্ধ্যা ভাদুড়ি ও বিশিষ্ট কবি ঋজুরেখ চক্রবর্তী৷
দলনেতা স্বরজিৎ জানান, প্রথমে একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েকজন বন্ধুর উৎসাহে নিছকই অ্যাডভেঞ্চারের জন্য অভিযানটি শুরু করা হয়েছিল৷ কিন্তু ক্রমে ক্রমে তা বিস্তৃত হয়ে পড়েছে৷ প্রথম বছর অভিযানে সঙ্গী ছিল মাত্র ৭ জন৷ ধীরে ধীরে তা বেড়ে এই বছর হয়ে দাঁড়িয়েছে ২১ জন৷ এই উৎসাহে শামিল হয়েছেন ৬৭ বছরের আরোহীও৷ গতবার ছিল ১২ বছরের দীপ৷ খুব সম্ভবত এই রকম ক্রস-কান্ট্রি সাইকেল ব়্যালিতে সবচেয়ে কম বয়সি ব্যক্তি৷ এই বছর অবশ্য আরও খুদে এক সদস্য শামিল হয়েছে৷ আয়ুস৷ বয়স মাত্র ৭ বছর৷ বাবার সঙ্গে সে-ও এবার সাইকেল আরোহী৷