শেয়ারবাজারে কি এখন বিনিয়োগের সময়?
১০ মার্চ ২০২০করোনার প্রাদুর্ভাবে গোটা বিশ্বের শেয়ারবাজারেই আতঙ্ক চলছে৷ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের এসএন্ডপি ফাইভ হান্ড্রেড পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের মূলধন হারিয়েছে৷ সূচক কমেছে সাত ভাগের বেশি৷ প্রায় একই পরিস্থিতি ছিল ইউরোপ, এশিয়ার প্রধান শেয়ারবাজারগুলোতেও৷ করোনার পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসও দরপতনে বড় ভূমিকা রেখেছে ৷ ২০০৮ সালে বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির পর এতটা খারাপ সময় আর আসেনি৷
সাধারণত বিশ্ব পরিস্থিতি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দ্রুত প্রভাব ফেলে না৷ কিন্তু সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেও বড় ধরনের পতন হয়েছে৷ প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৭৯ পয়েন্ট বা সাড়ে ছয় ভাগ কমে গেছে, যাকে ‘সুনামি’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ৷
বাংলাদেশের শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এমরান হাসান জানান, ২০১৩ সালে নতুন সূচক প্রবর্তনের পর ডিএসইতে এতটা পতন হয়নি এর আগে৷ যদিও মঙ্গলবার বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে৷ সূচক বেড়েছে ১৪৮ পয়েন্ট৷
কেন শেয়ারবাজারের খারাপ অবস্থা
বাংলাদেশের শেয়ারবাজার গত এক বছর ধরেই খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ এই সময়ের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসই এক্স ১৫৫৪ পয়েন্ট কমেছে৷ ৯২ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে৷ এজন্য তিনটি কারণ দেখছেন অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরই) এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচকগুলোর যেসব আউটলুক (পূর্বাভাস) আসছে তার প্রত্যেকটি নিম্নমুখী৷ স্টক মার্কেটেও তার প্রতিক্রিয়া পড়ছে৷’’
পয়লা এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণের সুদহার নয়ভাগ কার্যকর করতে হবে৷ এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ব্যাংকগুলোর মুনাফা এমনিতেই কমে যাচ্ছিল এর ফলে আরো কমে যেতে পারে৷ শেয়ার বাজারে ব্যাংক খাতের অংশ ৪০ ভাগ৷ এর পাশাপাশি গ্রামীণফোনের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েনও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে৷ আহসান মনসুর মনে করেন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আস্থাহীনতা তৈরি করছে বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং করোনা ভাইরাসের খবর৷ যা বাংলাদেশে কাঁচামাল আমদানি এবং পণ্য রপ্তানিকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে ৷
এখন কি বিনিয়োগ করা উচিৎ?
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ২০১৮ সালে ১৪ ভাগ, ২০১৯ সালে ১৭ ভাগের বেশি আর চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত ৬.৬ ভাগ কমেছে৷ অন্যদিকে গত বছর ভারত এবং পাকিস্তানের বাজারে তেজিভাব ছিল, এখন যা পড়তির দিকে৷ এমন তথ্য জানিয়ে শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের এমরান হাসান জানান, ‘‘গত দুই বছরে বাংলাদেশের বাজারে একটা বড় ধরনের সংশোধন হয়ে গেছে৷ আমাদের বাজার এমনিতেই আন্ডারভ্যালুড (অবমূল্যায়িত) ছিল৷ করোনার প্রভাবে এখন যতটা না হওয়ার কথা তার চেয়েও বেশি আন্ডারভ্যালুড হয়েছে৷’’
তবে এই পরিস্থিতি বিনিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরি করেছে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক৷ ‘‘আমি মনে করি বাংলাদেশের বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য এটাই সঠিক সময়৷ কারণ কিছু কিছু স্টকে করোনা এবং সামষ্টিক অর্থনীতির যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো ইতোমধ্যেই প্রতিফলিত হয়ে দর (যা হওয়া উচিৎ) তার চেয়েও নিচে নেমে গেছে৷ ঐ স্টকগুলো যদি কেউ বাছাই করে বিনিয়োগ করে তাদের জন্য বাজারে এখন বিনিয়োগের ভাল সুযোগ,’’ বলেন এমরান৷
তিনি মনে করেন করোনার কারণে বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে৷ কিন্তু শেয়ার বাজারে তাদের প্রাধান্য বেশি না৷ এর বাইরে ফার্মাসিউটিক্যালস, ম্যানুফ্যাকচারিং ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় খাতগুলো সামনের দিনে ভাল করতে পারে৷ এমনকি কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও সম্ভাবনাময়৷
অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুরও মনে করেন সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে যে অতিরিক্ত পতন হয়েছে এখন সেটি সংশোধন হওয়ার কথা৷ যার প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার বাজার কিছুটা ঘুরে দাড়িয়েছে৷