‘সৌদি আরবে আইন খুব কঠিন, মূল সমস্যা ঢাকায়’
২৯ নভেম্বর ২০১৯ডয়চে ভেলে : সৌদি আরবে নারী কর্মীদের উপর নির্যাতন হচ্ছে৷ অনেকে ফিরে এসেছেন৷ অনেকে ফেরার আকুতি জানাচ্ছেন৷ এই পরিস্থিতি তৈরি হলো কেন?
গোলাম মসিহ: আমার মনে হয়, সমস্যাটা ঢাকা থেকেই হচ্ছে৷ এখানে আড়াই লাখ নারী শ্রমিক কাজ করেন৷ এখানে যদি আপনি পারসেন্টটেজ দেখেন, তাহলে সেটা খুবই নগন্য৷ ২ লাখ ৫৩ হাজার নারী কাজ করছেন৷ তাদের তো সাকসেস রেট অনেক বেশি৷ যে মহিলারা এখানে আসছেন, ঢাকা থেকে যদি তাদের ইন্টারভিউ করেন তাহলে বুঝতে পারবেন কেন তারা এখানে আসছেন৷ আসলে তাদের কোনো ট্রেনিং নেই, ওরিয়েন্টেশন নেই, এখানকার সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না৷ দালালরা বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে এখানে নিয়ে আসে৷ এখানে এসে যখন মেলে না, স্বাভাবিকভাবেই তারা ফিরে যাওয়ার আকুতি জানায়৷ এখানকার পরিস্থিতি কিন্তু তত খারাপ নয়৷ এখানে বিভিন্ন দেশের মহিলা কর্মীরা কাজ করছেন৷
এই বিষয়টি নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে কোনো আলোচনা হয়েছে ?
সৌদি সরকারের সঙ্গে সবসময়ই আমরা আলোচনা করছি৷ কিছুদিন আগে একজন মহিলা দেশে গিয়ে বলল একরকম কথা, কিন্তু এখানে থাকতে বলেছেন অন্যরকম কথা৷ এটাই আমরা বুঝতে পারছি না, কেন তারা দেশে গিয়ে অন্যরকম স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন৷ দেশ থেকে এখানে যারা আসেন, তারা কিন্তু নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আসেন৷ ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় ইন্টারভিউ নিলে উত্তরগুলো সহজ হয়ে যাবে৷
যারা নির্যাতিত হচ্ছেন তারা বৈধ পথে, না অবৈধ পথে সেখানে গেছেন?
তারা বৈধ পথেই এখানে আসছেন৷ বিভিন্ন ম্যানপাওয়ার এজেন্সির মাধ্যমেই এসেছেন৷ একজন নারী শ্রমিককে নিতে সৌদির নিয়োগকর্তাকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পেমেন্ট করতে হয় এজেন্টদের৷ ওরিয়েন্টেশন বা ট্রেনিংয়ের অভাবে তারা এখানে এসেই দেখে বৈরি পরিবেশ, বৈরি আবহাওয়া৷ ফলে তখন তারা নানা ধরনের জ্বালা-যন্ত্রণা ভোগ করে৷ কিন্তু পরিস্থিতি অত খারাপ না৷
শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় কোনো গলদ আছে?
গলদ তো অবশ্যই আছে৷ গলদ না থাকলে এই মহিলাগুলো কেন ফেরত যাচ্ছেন? এক নম্বর গলদ হচ্ছে, তাদের ট্রেনিং নেই, ওরিয়েন্টেশন নেই, ভাষাশিক্ষা নেই৷ এখানে পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার পেছনে এই তিনটা জিনিস মেজর রিজন৷ গলদ এই তিনটা জায়গায়৷ এখানে আসার আগে যদি তাদের ট্রেনিং হয়, ভালোভাবে সবকিছু বলা হয়, তাহলে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে তারা সেখানে যাবে কি যাবে না৷ আমার মনে হয় ফল্টটা আমাদের দিকেই৷ এখানে খুব বেশি না৷
সৌদি আরবে কি পরিমাণ নারী শ্রমিক কাজ করেন? এ পর্যন্ত নির্যাতিত হয়ে ফিরেছেন কতজন?
আমাদের কাছে যে পরিসংখ্যান আছে তাতে এখানে কাজ করছেন ২ লাখ ৫৩ হাজার আর ফিরে গেছেন ১৭ হাজার নারী শ্রমিক৷
নির্যাতন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে নারী শ্রমিক না পাঠানোর বিষয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে৷ এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?
মাথা ব্যাথা হলে কি আপনি মাথা কেটে ফেলবেন? নাকি চিকিৎসা করাবেন? সমস্যা হচ্ছে সমাধান করতে হবে৷ বন্ধ করে দিলে এই আড়াই লাখ নারী দেশে গিয়ে কোথায় চাকরি পাবেন? আমরা মনে করি, আগামীতে এখানে ১০ থেকে ১৫ লাখ নারীর চাকরি করার সুযোগ আছে৷ এই সুযোগটা আমরা হারাবো৷ সৌদি আরবের কোনো অসুবিধা হবে না, বাংলাদেশ থেকে না এলে অন্য দেশ থেকে তারা নারীকর্মী নেবে৷ এই মহিলারা আমাদের বিলিয়ন ডলারের উপরে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে৷ সেটা থেকে আমরা বঞ্চিত হবো৷ আমরা সচেতন হলে এটা কোনো সমস্যা না৷ বন্ধ করাটা আমার মনে হয় ঠিক হবে না৷
নারী শ্রমিকদের এভাবে বিপদে পড়ার জন্য দায়ী কারা?
অবশ্যই ম্যানপাওয়ার এজেন্সি৷ শতভাগ দায়ী তারা৷
দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ?
মন্ত্রণালয় তো অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, নিচ্ছে৷ গত সপ্তাহেই কয়েকজনকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ এখানে যে কিছু সমস্যা সেগুলো অ্যাড্রেস করছি৷ এখানে কিন্তু গৃহকর্তা ও তার ছেলে গ্রেফতার হয়ে জেলেও আছেন৷ এখানে আইন খুব কড়া৷ কারেকশনটা আমাদের দেশেই করতে হবে৷
যারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বা ফিরে আসছেন তাদের জন্য সরকার কিছু করছে?
এখানে কেউ বিপদে পড়ে এলে আমরা তাদের জন্য ব্যবস্থা করি৷ এখানে ৪টা সেফ হোম আছে৷ কেউ সমস্যায় পড়লে তাদের চিকিৎসা করাই, তিন বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করি৷ তারপর দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে দেই৷ এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা৷ আমরা সর্বোচ্চ (চেষ্টা) করে থাকি৷ আসলে বাংলাদেশের দিকে আরো একটু ইনপ্রুভ করা দরকার৷
এই পরিস্থিতির উত্তরণে আপনার পরামর্শ কি?
প্রথমত, আমরা যে নেগেটিভ পাবলিসিটি দিচ্ছি, এটা কিন্তু সৌদি সরকার ভালোভাবে দেখছে না৷ একটা সমস্যা হয়েছে, গঠনমূলকভাবে এর সমাধান হতে হবে৷ মিডিয়াকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে৷ আমরা অ্যানালাইসিস করে দেখেছি, যারা এসেছেন তাদের অধিকাংশই কোনো-না-কোনো সমস্যায় পড়ে এখানে এসেছেন৷ বিশেষ করে আর্থিক৷ এরপর কারো স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, কারো স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছে, যন্ত্রণা থেকে তারা এখানে এসেছেন৷ নারী শ্রমিকদের ব্যাপারে সাংবাদিকরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷