1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সৌদি আরবে আইন খুব কঠিন, মূল সমস্যা ঢাকায়’

২৯ নভেম্বর ২০১৯

সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত হয়ে প্রায়ই দেশে ফিরছেন নারী কর্মীরা৷ সেই দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ মনে করেন, নারীরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে সৌদি আরবে গেলে এমন পরিস্থিতি থাকবে না৷

https://p.dw.com/p/3TxFk
ছবি: Imago Images/Zuma/M. Hasan

ডয়চে ভেলে : সৌদি আরবে নারী কর্মীদের উপর নির্যাতন হচ্ছে৷ অনেকে ফিরে এসেছেন৷ অনেকে ফেরার আকুতি জানাচ্ছেন৷ এই পরিস্থিতি তৈরি হলো কেন?

গোলাম মসিহ: আমার মনে হয়, সমস্যাটা ঢাকা থেকেই হচ্ছে৷ এখানে আড়াই লাখ নারী শ্রমিক কাজ করেন৷ এখানে যদি আপনি পারসেন্টটেজ দেখেন, তাহলে সেটা খুবই নগন্য৷ ২ লাখ ৫৩ হাজার নারী কাজ করছেন৷ তাদের তো সাকসেস রেট অনেক বেশি৷ যে মহিলারা এখানে আসছেন, ঢাকা থেকে যদি তাদের ইন্টারভিউ করেন তাহলে বুঝতে পারবেন কেন তারা এখানে আসছেন৷ আসলে তাদের কোনো ট্রেনিং নেই, ওরিয়েন্টেশন নেই, এখানকার সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না৷ দালালরা বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে এখানে নিয়ে আসে৷ এখানে এসে যখন মেলে না, স্বাভাবিকভাবেই তারা ফিরে যাওয়ার আকুতি জানায়৷ এখানকার পরিস্থিতি কিন্তু তত খারাপ নয়৷ এখানে বিভিন্ন দেশের মহিলা কর্মীরা কাজ করছেন৷ 

‘‘আমরা সর্বোচ্চ (চেষ্টা) করে থাকি’’

এই বিষয়টি নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে কোনো আলোচনা হয়েছে ?

সৌদি সরকারের সঙ্গে সবসময়ই আমরা আলোচনা করছি৷ কিছুদিন আগে একজন মহিলা দেশে গিয়ে বলল একরকম কথা, কিন্তু এখানে থাকতে বলেছেন অন্যরকম কথা৷ এটাই আমরা বুঝতে পারছি না, কেন তারা দেশে গিয়ে অন্যরকম স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন৷ দেশ থেকে এখানে যারা আসেন, তারা কিন্তু নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আসেন৷ ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় ইন্টারভিউ নিলে উত্তরগুলো সহজ হয়ে যাবে৷

যারা নির্যাতিত হচ্ছেন তারা বৈধ পথে, না অবৈধ পথে সেখানে গেছেন? 

তারা বৈধ পথেই এখানে আসছেন৷ বিভিন্ন ম্যানপাওয়ার এজেন্সির মাধ্যমেই এসেছেন৷ একজন নারী শ্রমিককে নিতে সৌদির নিয়োগকর্তাকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পেমেন্ট করতে হয় এজেন্টদের৷ ওরিয়েন্টেশন বা ট্রেনিংয়ের অভাবে তারা এখানে এসেই দেখে বৈরি পরিবেশ, বৈরি আবহাওয়া৷ ফলে তখন তারা নানা ধরনের জ্বালা-যন্ত্রণা ভোগ করে৷ কিন্তু পরিস্থিতি অত খারাপ না৷

শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় কোনো গলদ আছে?

গলদ তো অবশ্যই আছে৷ গলদ না থাকলে এই মহিলাগুলো কেন ফেরত যাচ্ছেন? এক নম্বর গলদ হচ্ছে, তাদের ট্রেনিং নেই, ওরিয়েন্টেশন নেই, ভাষাশিক্ষা নেই৷ এখানে পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার পেছনে এই তিনটা জিনিস মেজর রিজন৷ গলদ এই তিনটা জায়গায়৷ এখানে আসার আগে যদি তাদের ট্রেনিং হয়, ভালোভাবে সবকিছু বলা হয়, তাহলে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে তারা সেখানে যাবে কি যাবে না৷ আমার মনে হয় ফল্টটা আমাদের দিকেই৷ এখানে খুব বেশি না৷

সৌদি আরবে কি পরিমাণ নারী শ্রমিক কাজ করেন? এ পর্যন্ত নির্যাতিত হয়ে ফিরেছেন কতজন?

আমাদের কাছে যে পরিসংখ্যান আছে তাতে এখানে কাজ করছেন ২ লাখ ৫৩ হাজার আর ফিরে গেছেন ১৭ হাজার নারী শ্রমিক৷ 

নির্যাতন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে নারী শ্রমিক না পাঠানোর বিষয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে৷ এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?

মাথা ব্যাথা হলে কি আপনি মাথা কেটে ফেলবেন? নাকি চিকিৎসা করাবেন? সমস্যা হচ্ছে সমাধান করতে হবে৷ বন্ধ করে দিলে এই আড়াই লাখ নারী দেশে গিয়ে কোথায় চাকরি পাবেন? আমরা মনে করি, আগামীতে এখানে ১০ থেকে ১৫ লাখ নারীর চাকরি করার সুযোগ আছে৷ এই সুযোগটা আমরা হারাবো৷ সৌদি আরবের কোনো অসুবিধা হবে না, বাংলাদেশ থেকে না এলে অন্য দেশ থেকে তারা নারীকর্মী নেবে৷ এই মহিলারা আমাদের বিলিয়ন ডলারের উপরে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে৷ সেটা থেকে আমরা বঞ্চিত হবো৷ আমরা সচেতন হলে এটা কোনো সমস্যা না৷ বন্ধ করাটা আমার মনে হয় ঠিক হবে না৷

নারী শ্রমিকদের এভাবে বিপদে পড়ার জন্য দায়ী কারা?

অবশ্যই ম্যানপাওয়ার এজেন্সি৷ শতভাগ দায়ী তারা৷

দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ?

মন্ত্রণালয় তো অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, নিচ্ছে৷ গত সপ্তাহেই কয়েকজনকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ এখানে যে কিছু সমস্যা সেগুলো অ্যাড্রেস করছি৷ এখানে কিন্তু গৃহকর্তা ও তার ছেলে গ্রেফতার হয়ে জেলেও আছেন৷ এখানে আইন খুব কড়া৷ কারেকশনটা আমাদের দেশেই করতে হবে৷

যারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বা ফিরে আসছেন তাদের জন্য সরকার কিছু করছে?

এখানে কেউ বিপদে পড়ে এলে আমরা তাদের জন্য ব্যবস্থা করি৷ এখানে ৪টা সেফ হোম আছে৷ কেউ সমস্যায় পড়লে তাদের চিকিৎসা করাই, তিন বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করি৷ তারপর দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে দেই৷ এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা৷ আমরা সর্বোচ্চ (চেষ্টা) করে থাকি৷ আসলে বাংলাদেশের দিকে আরো একটু ইনপ্রুভ করা দরকার৷ 

সৌদি আরবে নারী নির্যাতন

এই পরিস্থিতির উত্তরণে আপনার পরামর্শ কি?

প্রথমত, আমরা যে নেগেটিভ পাবলিসিটি দিচ্ছি, এটা কিন্তু সৌদি সরকার ভালোভাবে দেখছে না৷ একটা সমস্যা হয়েছে, গঠনমূলকভাবে এর সমাধান হতে হবে৷ মিডিয়াকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে৷ আমরা অ্যানালাইসিস করে দেখেছি, যারা এসেছেন তাদের অধিকাংশই কোনো-না-কোনো সমস্যায় পড়ে এখানে এসেছেন৷ বিশেষ করে আর্থিক৷ এরপর কারো স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, কারো স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছে, যন্ত্রণা থেকে তারা এখানে এসেছেন৷ নারী শ্রমিকদের ব্যাপারে সাংবাদিকরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য