খাশগজি অন্তর্ধান রহস্য
১৯ অক্টোবর ২০১৮বিক্ষুব্ধ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশগজির রহস্যজনক অন্তর্ধান নিয়ে তদন্তের মাঝেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন যে, খাশগজি সম্ভবত মৃত৷ তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হলে মার্কিন প্রশাসন অত্যন্ত কড়া বিবৃতি দেবে৷ প্রকাশ্যে সৌদি আরবের নেতাদের বক্তব্য কার্যত মেনে নিলেও ট্রাম্প যে বিষয়টি নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও-কে সৌদি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাঠিয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ তদন্ত' শুরু করার আশ্বাস আদায় করতে পেরেছেন ট্রাম্প৷ পম্পেও বলেন, তদন্ত শেষ করতে সৌদি কর্তৃপক্ষকে কয়েক দিন সময় দেওয়া উচিত৷ কিন্তু সে দেশে আসন্ন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেবার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী স্টিভ মেনুশিন৷ ট্রাম্প ও পম্পেও-র সঙ্গে আলোচনার পর এক টুইট বার্তায় তিনি এই ঘোষণা করেন৷
খাশগজির অন্তর্ধানের পর চলতি মাসের শেষে পরিকল্পিত ‘ফিউচার সামিট' সম্মেলন থেকে নাম প্রত্যাহার করে চলেছেন একের পর এক রাজনৈতিক নেতা ও কোম্পানির প্রধানরা৷ বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের প্রধানরাও সৌদি আরবে না যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ অনেক মিডিয়া কোম্পানিও স্পনসর হিসেবে সরে দাঁড়িয়েছে৷ সৌদি শাসক পরিবার এর আগে এমন চাপের মুখে পড়েনি৷
তুরস্কের আইনমন্ত্রী আব্দুলহামিত গুল জানিয়েছেন, সে দেশ খাশগজির অন্তর্ধান সংক্রান্ত তদন্ত শীঘ্রই শেষ করতে চলেছে৷ তিনি আরো বলেন, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত চলছে এবং সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে৷ উল্লেখ্য, তুরস্কের তদন্তকারীরা ইস্তানবুলে সৌদি কনসুলেট ও কনসালের বাসভবনেও তল্লাশি চালিয়েছেন৷ তুরস্কের কর্মকর্তারা সংবাদ মাধ্যমের কাছে আগেই দাবি করেছিলেন যে, খাশগজিকে সৌদি কনসুলেটের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে৷ সরকারি আন্দোলু সংবাদ সংস্থা এক প্রতিবেদনে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে তদন্তে সহযোগিতার অভাবের অভিযোগ করেছে৷ সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি কর্তৃপক্ষ খাশগজির হত্যার অভিযোগ স্বীকার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷
সৌদি আরব যে বিষয়টি নিয়ে বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ তবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পক্ষে খাশগজির অন্তর্ধান ও সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ডের দায় সরাসরি মেনে নেওয়া কার্যত অসম্ভব৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোটা ঘটনার দায় জেনারেল আহমেদ আল-আসিরির উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে৷ গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষ এই কর্মকর্তা যুবরাজ সালমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত৷
এমন প্রেক্ষাপটে শুধু তুরস্কের তদন্তের ফলে সত্য ঘটনা পুরোপুরি জানা যাবে না বলে আশঙ্কা করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি৷ তারা চায়, তুরস্ক জাতিসংঘের তদন্তের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাক৷ জাতিসংঘের মহাসচিবের উদ্যোগে এমন তদন্ত হলে সত্য উন্মোচন হবে বলে তাদের আশা৷ তবে মার্কিন প্রশাসন এমন উদ্যোগে বাধা দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)