রুমিনের প্লট ও ডিসির খাস কামরা
২৬ আগস্ট ২০১৯জামালপুরের সাবেক ডিসি একজন ভদ্রমহিলার সঙ্গে তার খাস কামরায় অন্তরঙ্গ অবস্থায় ধরা পড়েছেন সিসি ক্যামেরায়। ফেসবুকের কল্যাণে সিসি ক্যামেরা দেখে আমরা ছি ছি করতে পেরেছি, তিনি ওএসডি হয়েছেন। অনেকে বলছেন, লঘু পাপে গুরু দণ্ড হয়েছে, কেউ বলছেন, ওএসডি কোনো দণ্ডই নয়। বসে বসে বেতন নেওয়া; লসের মধ্যে শুধু ঘুসের সুযোগ না থাকা এই যা।
আমি রায় দেওয়ার উপযুক্ত লোক নই, তবুও বলতে পারি ডিসি সাহেবের এই কাজের শাস্তি হওয়া উচিত৷ আমি শাস্তি দাবি করি এই ভিডিও যে করে ছড়িয়ে দিয়েছেন তারও৷ প্রথমে দেখা যাক, আমি কেন সাবেক ডিসির শাস্তি দাবি করি৷ দুজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ পারষ্পরিক সম্মতিতে যা করতে পারেন, ডিসি তো তাই করেছেন৷ শাস্তির দাবি ওঠে কেন?
ডিসি সাহেব তার একজন সহকর্মীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে একাজটি করেছেন বলেই আমার আপত্তি৷ স্পষ্টই তার এই সম্পর্কটি তিনি করেছেন, তার চেয়ারটি ব্যবহার করে; এবং একথাও সত্যি অনেক খাসকামরাওয়ালাই চেয়ার ব্যবহার করে সম্পর্ক করেন, কখনো ব্ল্যাকেমইল করেন৷ স্বচ্ছ উপায়ে তদন্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে তা অন্তত দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে৷ আমার উচ্চাশা এই যে, এরকম কাজ এর পরেও যারা করবেন তারা অন্তত কয়েকবার এর তাৎপর্য ভাববেন৷
আমি মনে করি, হোয়াইট হাউসের কনিষ্ঠ কর্মকর্তা মনিকা লিউনিস্কির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জন্য বিল ক্লিনটনের শাস্তি না হওয়ার বাটারফ্লাই এফেক্ট হিসেবেই এখন ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হোয়াইট হাউসের চাবি৷
আরেকটি বিষয়েও একটু নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করি৷ কারো ব্যক্তিগত ভিডিও বা অডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে তাকে অপমান করার যে প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি তা এখনই থামানো না গেলে সমাজে তার প্রভাব ভয়ংকর হবে৷ মনে রাখতে হবে, অনেক সময় নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করার জন্য রাষ্ট্র বা প্রশাসনযন্ত্রও নামে বেনামে এই কাজ করে থাকে, যা একইরকম নিন্দাযোগ্য৷
এবার আসি ব্যারিস্টারের প্লট প্রসঙ্গে৷
সংসদকে অবৈধ বলে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা কেন সংসদ সদস্যদের জন্য পাওনা সুবিধা নিতে চাইলেন, কেন চাইতে গেলেন প্লট? এখন আমার প্রশ্ন হলো, প্লট চেয়ে রুমিন কী অন্যায় করেছেন? কী সেই অন্যায়? তাকে ছাড়া আর বাকি যারা প্লট নিয়েছেন তারা কী স্বীকার করে নিয়েছেন যে, রুমিনের কথা ঠিক যে এই সংসদ অবৈধ নাকি তারাও প্লট নিয়ে অন্যায় করেছেন? তারা কারা?
কিন্তু আমার কথা হল, প্লট নিতে গিয়ে রুমিন কী মিথ্যে বলেছেন, সেটির তদন্ত হওয়া দরকার৷ মানে কথা হলো এই, রুমিনের ঢাকায় আর কোথাও থাকার জায়গা প্লট বা বাসা রয়েছে কিনা? তিনি নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় বলেছেন যে, তিনি মায়ের কাছ থেকে একটি ১৮৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট পেয়েছেন তা কি ঢাকায় অবস্থিত নাকি অন্য কোথাও?
হলফনামায় বাসার কথা উল্লেখ আছে কিন্তু তা কোথায় সেটির উল্লেখ নেই৷ ব্যারিস্টার ফারহানা এটা বলেননি৷ তবে নির্বাচন কমিশন নিশ্চয়ই তার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিল৷ নাকি রুমিনকে সংসদে আনার আনন্দেই উদ্বেল ছিল সবাই?
তার ফ্ল্যাটটি ঢাকায় হয়ে থাকলে পূর্তমন্ত্রীর কাছে দেওয়া দরখাস্তে তিনি স্পষ্ট মিথ্যা বলেছেন৷ তার মত একজন রাজনীতিবিদের কাছে আমরা এরকম অনৈতিকতা আশা করি না৷
এখানে প্রশ্ন ওঠে এবং রুমিনের সমর্থকদের কেউ এ প্রশ্ন তুলেছেন যে, তার করা আবেদনপত্র সাংবাদিকদের কাছে কী করে এলো এবং সাংবাদিকেরা চাইলে এরকম সবার আবেদনপত্র দেখতে পারেন কিনা৷ উত্তর হচ্ছে- পারেন৷ সাংবাদিকদের সব ধরনের সরকারি যোগাযোগ আবেদন নিবেদন পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷ যেমন, সরকারের, বিশেষ করে জাতীয় রাজস্ব কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কোন ক্ষমতাবলে শুল্কমুক্ত গাড়ি আনার অনুমতি পাবেন?